ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বাঁকখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসানোর উৎসবে সম্প্রীতির মেলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৫, ১৭ অক্টোবর ২০২৪  
বাঁকখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসানোর উৎসবে সম্প্রীতির মেলা

ফানুসের বর্ণিল আলোতে আকাশ রাঙানোর পর কক্সবাজারে প্রবারণায় কল্পজাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়।

নান্দনিক কারুকাজে তৈরি দৃষ্টিনন্দন জাহাজ নৌকায় বসিয়ে নদীতে ভাসানো হয়। এ উৎসবে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছে নদীর দুই পাড়ের উৎসুক হাজারও নারী-পুরুষ।

আরো পড়ুন:

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীর পূর্ব রাজারকুল ঘাটে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব আয়োজন করা হয়। বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে যুগ যুগ ধরে বাঁকখালী নদীতে কল্পজাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে।

কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে রামু উপজেলা সদর পার হয়ে বাঁকখালী নদীতে এবার পাঁচটি কল্পজাহাজ ভাসানো হয়। বিকেল ৩টার দিকে ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, লোকে লোকারণ্য নদীর দুই পাড়। গান-বাজনা, কীর্তন ও ফানুস উড়াউড়িতে নানা বয়সের নারী-পুরুষ মেতে উঠেছে। ৫-৬টি কাঠের নৌকার ওপর একেকটি কল্পজাহাজ বসানো হয়েছে। 

এ সব কল্পজাহাজ বাঁশ, কাঠ, বেত ও রঙিন কাগজে রঙের কারুকাজে জাদি, হাঁস, ময়ূর, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চমৎকার নির্মাণ শৈলী আর বৈচিত্র্যে ভরা প্রতিটি জাহাজই যেন নিজস্ব স্বকীয়তার ভরপুর।

এ সব ভাসমান জাহাজে চলছে বৌদ্ধ কীর্তন। শিশু কিশোরসহ কেউ নাচছে, কেউ গাইছে আবার কেউ ঢোল, কাঁসাসহ নানা বাদ্য বাজাচ্ছে।
 
আয়োজকেরা জানালেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অংশগ্রহণকারী জাহাজের সংখ্যা কম। সরকার পরিবর্তনের পর বিভিন্নস্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়ে অনেকে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ছিলেন। যে কারণে অনেক গ্রামে এবার জাহাজ তৈরি করা হয়নি।

প্রবারণা উৎসবে আসা রূপা বড়ুয়া বলেন, ‘প্রতিবছর আনন্দের সঙ্গে কল্পজাহাজ ভাসা উৎসবে আসি। এবার জাহাজ কম হলেও আনন্দ বরাবরে মতোই ছিল।’  

রিমন বড়ুয়া বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রাণের উৎসবে সপরিবারে যোগ দিলাম। এখানে এসে অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখে খুবই ভালো লাগছে।’

চিত্রশিল্পী ও শিক্ষক সংগীত বড়ুয়া বলেন, ‘যুগ যুগ ধরে আমরা এ উৎসব উদ্‌যাপন করে আসছি। জাহাজ ভাসানোর প্রায় ১৫-২০ দিন আগে থেকে বৌদ্ধ গ্রামগুলোতে জাহাজ তৈরির আনন্দ শুরু হয়। বিশেষ করে গ্রামের শিশু-কিশোরেরা এ উদ্যোগ নিয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রবারণার পর দিন আমরা বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসানোর আনন্দে মেতে উঠি।’ 

উৎসবে আসা রামু সরকারি কলেজের শিক্ষক মানসী বড়ুয়া বলেন, ‘শত বছর ধরে চলে আসা এ উৎসব আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার তাগিদ দেয়। এই উৎসব বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের হলেও সবার অংশগ্রহণে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিলনমেলায় পরিণত হয়।’ 

রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, প্রায় দুইশত বছর আগে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে এ জাহাজ ভাসা উৎসবের প্রচলন হয়। সেই দেশের মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ম্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবের আয়োজন করেন। শত বছর ধরে রামুতে মহাসমারোহে এ উৎসব হয়ে আসছে।

মূলত চিরভাস্বর এ স্মৃতি অম্লান করে রাখার জন্য বাংলাদেশের বৌদ্ধরা বিশেষ করে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায় প্রবারণা পূর্ণিমায় বাঁকখালী নদীতে স্বর্গের জাহাজ ভাসিয়ে প্রবারণা উদযাপন করে বলে জানান এ ধর্মীয় নেতা।

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকোমল বড়ুয়া।

উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিথুন বড়ুয়া বোথামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান কাজল।

তারেকুর/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়