ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১০ জুলাই ২০২৫ ||  আষাঢ় ২৬ ১৪৩২

খুলনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৬, ২৪ জুন ২০২৫   আপডেট: ২০:৩৭, ২৪ জুন ২০২৫
খুলনায় ২৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের অভিযোগ

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালীন ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর মাধ্যমে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন)  ভিকটিম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক ও খুলনা জেলা শাখার সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বাদী হয়ে অভিযোগ দাখিল করেন।

অভিযোগে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র, সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ২৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

আরো পড়ুন:

আসামিরা হলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সাবেক সংসদ সদস্য শেখ জুয়েল, এস এম কামাল হোসেন, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, সালাম মুর্শিদী, শেখ হেলাল, যুবলীগ নেতা ও শেখ হাসিনার চাচাত ভাই শেখ সোহেল, সাবেক সংসদ সদস্য  শেখ হেলাল, নারায়ণচন্দ্র চন্দ, আক্তারুজ্জামান বাবু, রাশীদুজ্জামান মোড়ল,  খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, খুলনা মহানগর যুবলীগের সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ, খুলনা মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহাজালাল সুজন, কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক, আরসি ফুডের ইকবাল বাহার চৌধুরী, উপপুলিশ কমিশনার সোনালী সেন, এডিসি গোপীনাথ কানজিলাল, ডিবির নুরুজ্জামান, লবণচরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির, এসআই হাসান, এসআই সুমন মন্ডল, সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক ওসি মমতাজ, মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাইফ, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এডিডি ( সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর সাবেক পিএস ) জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর ও মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে জগলুল কাদের।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে খুলনায় আন্দোলন সংগঠিত করেন মামলার বাদী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি। আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য ৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ওইদিন সহযোদ্ধা মেসবাহ উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে রওনা হন। খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা এলাকা থেকে পূর্বঘোষিত সড়ক ও রেল অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে নতুন রাস্তার মোড়ের উদ্দেশে ইজিবাইকে করে যাত্রা করলে সোনাডাঙ্গা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সামনে পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাত মুখোশধারী আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশবাহিনীর সমন্বয়ে ১০-২৫ জন তাদের ইজিবাইকের গতিরোধ করে। টেনে হেচড়ে তাকে ইজিবাইক থেকে নামিয়ে নেয়। তার সঙ্গে থাকা মেসবাহ উদ্দিন ও ইজিবাইক চালক ইদ্রিসসহ কয়েকজন  সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসলে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার হাত-পা, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলে। তিনি  চিৎকার করলে মুখের মধ্যে কাপড় দিয়ে রাখে। দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তার চোখ ও হাত বেঁধে রাখা হয়। তাকে প্রাইভেটকারে উঠিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অন্ধকার ঘরে আটকে রাখে। আন্দোলন বন্ধ করতে চাপ দেয় কিন্তু তিনি রাজি না হলে নির্যাতন করে। হাত-পা বাধা অবস্থায় পানি থেকে চাইলে গালাগালি করে। পরে তাকে আবার গাড়িতে করে আড়ংঘাটা বাইপাস মোড়ের সামনে বাগানের মধ্যে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রেখে যায়। সেখান থেকে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে।

অভিযোগকারী সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনার শাসনামলে জুলাই অভ্যুত্থান দমনের জন্য যারা আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে৷ ভবিষ্যতে ন্যায্য দাবিতে রাজপথে নামলে আর কাউকে যেন আমার মতো গুম হতে না হয়, আমি এর নিশ্চয়তা চাই।’’  জড়িতদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তিনি। 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়