পুষ্টিগুণে ভরপুর, রপ্তানির সম্ভাবনা
ফেলে দেওয়া কাঁঠালের বিচি আনছে টাকা
রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম
বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। বলা হয়ে থাকে, এই ফলের প্রায় সবই খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে কাঁঠালের বিচি অনেকের কাছেই উপাদেয়। এর পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা শরীরের শক্তি জোগায়, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, অন্ত্র ও পেশির সুস্থতায় সহায়ক। এ ছাড়াও এতে থাকা পর্যাপ্ত ম্যাগনেশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কয়েকজন উদ্যোক্তা কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলেছেন। একইসঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তাদের একজন কাঁচামাল ও মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী আইনুল হক। তার সঙ্গে রয়েছেন গাজী মাহমুদসহ আটজন। দলবদ্ধভাবে তারা কাঁঠালের বিচির ব্যবসা করছেন। বিষয়টি এলাকায় অনেকের নজর কেড়েছে।
জানা গেছে, প্রতিদিন আশপাশের গ্রাম থেকে কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ করে নিয়ে আসা হয়। এরপর সেগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এরপর উন্নত মানের বিচিগুলো আলাদা করে পুনরায় ধোয়া হয়। পরে রোদে শুকিয়ে বিচিগুলো বস্তায় ভরে বাজারজাত করা হয়। নষ্ট ও অনুপযুক্ত বিচি আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে শ্রীপুর অঞ্চলে কাঁঠালের বিচির তেমন গুরুত্ব ছিল না। অনেকে বিভিন্নভাবে খেতেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই ফেলে দিতেন। বর্তমানে কাঁঠালের বিচির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় অনেকে আলাদা করে সংরক্ষণ করছেন এবং বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করছেন।
স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘‘আগে কাঁঠাল খেয়ে বিচিগুলো ফেলে দিতাম। এখন এগুলো বেচে প্রতিদিন কিছু না কিছু টাকা আয় করতে পারছি।’’
উদ্যোক্তা আইনুল হক বলেন, ‘‘আমরা আটজন মিলে ব্যবসা পরিচালনা করছি। গ্রাম থেকে বিচি সংগ্রহের জন্য কয়েকজন কর্মী রেখেছি। প্রতি সপ্তাহে তিনদিন ধোয়া ও বাছাইয়ের কাজ চলে। একেকবারে চার থেকে পাঁচ টন বিচি জমলে তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে পাঠানো হয়।’’
ঢাকার কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজারসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে বিচিগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান গাজী মাহমুদ। প্রতি কেজি বিচি ১৭ থেকে ১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁঠালের মৌসুমজুড়ে প্রতিদিন গড়ে এক থেকে দেড় টন বিচি সংগ্রহ করা হয়। মৌসুমের বাইরে এই চাহিদা কম থাকে, তখন সীমিত আকারে সরবরাহ করা হয় বলেও জানান তিনি।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘‘এটা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কাঁঠালের বিচি সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত ও বাজারজাত করার মাধ্যমে শুধু কর্মসংস্থান বাড়ছে না, একই সঙ্গে অপচয়ও রোধ হচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে এ ধরনের উদ্যোগ আরও প্রসারিত করতে পরিকল্পনা নেওয়া হবে।’’
কাঁঠালের বিচি প্রক্রিয়াজাত ও সংরক্ষণে প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এ খাত আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে রপ্তানির সম্ভাবনাও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
পুষ্টিবিদদের মতে, কাঁঠালের বিচি প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি ভর্তা, ভাজি, তরকারি বা অন্যান্য রেসিপিতে ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও কাঁঠালের বিচির চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিলে এই খাত থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/তারা//