ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

শ্রমিককে বেকার করা আমার কাজ না: সাখাওয়াত 

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৯ জুলাই ২০২৫  
শ্রমিককে বেকার করা আমার কাজ না: সাখাওয়াত 

শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘‘আমার কোনো ইন্ডাস্ট্রি নাই, কোনো গার্মেন্টস নাই যে তাদের (মালিক) পক্ষ নেব। আমি তাদের পক্ষেই থাকব যারা ন্যায়নীতির ওপর আছেন।’’

তিনি বলেন, ‘‘গার্মেন্ট শিল্পে যারা বেকার হয়েছেন তারা এমনি এমনি হননি। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কোনো শ্রমিককে বেকার করা আমার কাজ না।’’

আরো পড়ুন:

শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে সাভারে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘একজন শ্রমিক যদি কাজ না পায়, সে তো একা নয়। তার সঙ্গে পরিবার, সন্তান, স্ত্রী জড়িত। আমরা চেষ্টা করছি, তারা যাতে কোনোভাবেই বেকার না থাকেন।’’

কারখানা বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যেসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, তারা কিন্তু বিজিএমইএর মেম্বার। তাদের বলতে হবে কী করবে। আগে বিজিএমইএ ছিল না, তাই শ্রম মন্ত্রণালয় ততটা জড়িত ছিল না। এখন বন্ধ কারখানাগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বেক্সিমকোর কথাই ধরুন, এটি চালাতে বিদেশি কিছু সংস্থা এগিয়ে এসেছে। আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে।’’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘অনেক মালিক দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে থাকেন মাসের পর মাস। শ্রমিকদের কথা তারা ভাবেনি। এখন আমাদেরই দেখতে হচ্ছে। ব্যাংক থেকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা কেউ নিয়ে গেলে সেই কারখানা চলবে কী করে! ৫ হাজার, ৭ হাজার, ১০ হাজার কোটি—মিনিমাম ১ হাজার কোটি টাকা দেনা রয়েছে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের।’’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে আমরা শিথিলতা এনেছি। এখন থেকে কোনো শ্রমিককে মালিক কালো তালিকাভুক্ত করতে পারবেন না। প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার থাকবে। নির্বাচনের মাধ্যমে সিবিএ নির্ধারিত হবে। তারাই শ্রমিকদের পক্ষে সরকারের কাছে দাবি-দাওয়া তুলবেন। শুধু কল-কারখানায় নয়, যেখানে ৫ জনের বেশি শ্রমিক আছে, সেখানেই বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছি।’’

‘‘শ্রমিকদের কল্যাণে মালিকদের লাভের ০.৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে দিতে হবে। এখন যে সরকার রয়েছে, সেটি কতটা শ্রমিকবান্ধব, তা আপনারা দেখছেন। আগে কেউ কথা বলতে পারতেন না, রাস্তায় নামলেই গুম, খুন, লাঠিপেটা হতো। কেউ ক্ষতিপূরণও পেত না,’’ বলেন উপদেষ্টা।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘‘আমি মালিক ও শ্রমিক উভয়ের পক্ষেই কাজ করতে চাই। সরকার পতনের সময় শুধু সরকার নয়, গোটা সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সেটাকে গড়ে তুলতে সময় লাগে। আমি যখন ৯ মাস আগে এই মন্ত্রণালয়ে যোগ দিই, তখন প্রচণ্ড শ্রমিক অসন্তোষ ছিল। আমি বলেছিলাম, আমি শ্রমিকদের মতোই একজন শ্রমিক। আমি সেই কথা রাখতে চেষ্টা করেছি।’’

ঘেরাও রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যৌক্তিক দাবি থাকলে আমার মন্ত্রণালয়ের দরজা সবসময় খোলা। কিন্তু অযৌক্তিক দাবিতে মন্ত্রণালয় ঘেরাও ও হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি শ্রমিকদের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে রাস্তায় নামতেও প্রস্তুত।’’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, সমাজকল্যাণ ও নারী-শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ৯ জন শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকেও সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

সমাবেশে ঢাকা জেলার বিভাগীয় কমিশনার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি, সাভার উপজেলা প্রশাসন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সদস্য এবং বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়