বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে প্রাচীন চুনাখোলা মসজিদ
বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত চুনাখোলা মসজিদের চারপাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে
টানা বৃষ্টির কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে বাগেরহাটে ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত চুনাখোলা মসজিদ। মসজিদে নামাজ আদায় সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
মসজিদের দেয়াল, মেঝে, মেহরাব ও টেরাকোটা অলংকরণে পানি লেগে কালো ফাঙ্গাস ধরেছে। মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়ায় স্থাপনার স্থায়িত্ব নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে সদর উপজেলার চুনাখোলা গ্রামে অবস্থিত মসজিদটি ঘুরে দেখা গেছে, এর চারপাশে থৈ থৈ পানি। ভেতরও পানিতে ডুবে আছে। মসজিদের মূল গেটের নিচে ছোট বাঁধ দেওয়া হলেও তা ভেদ করে পানি মেহরাব পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, মসজিদের পাশের খালগুলো দখল ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি বের হতে পারছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এবারের টানা বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইয়াসিন বলেন, “এবার অন্তত চার-পাঁচবার মসজিদে পানি ঢুকেছে। এখন পুরো মেঝে পানির নিচে। টেরাকোটাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মসজিদে নামাজ আদায় করা যাচ্ছে না। আমরা দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা চাই।”
খানজাহান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা আরিফুল ইসলাম আকুনজি বলেন, “বাগেরহাটের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে চুনাখোলা মসজিদ। সেখানে গিয়ে আজ দেখলাম, মসজিদের ভেতর পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে।”
“প্রাচীন ইট ও চুন-শুরকি দিয়ে নির্মিত স্থাপনাগুলোতে পানি ঢুকলে তা গঠনগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে স্থাপনা ঝুঁকির মুখে পড়ে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা আছে”, যোগ করেন তিনি।
খানজাহান (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম ফকির তারিকুল ইসলাম বলেন, “মসজিদের পাশে মাছের ঘের তৈরি করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এখন বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এটি খুবই উদ্বেগজনক।”
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, “চুনাখোলা মসজিদ এবারই প্রথম পানিতে তলিয়ে গেছে। অতিরিক্ত বৃষ্টি ও খাল-বিল বদ্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
চুনাখোলা মসজিদ ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়। এটি খানজাহান আলীর স্থাপত্যরীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের দেয়ালে কারুকাজ খচিত টেরাকোটা এখনো দৃশ্যমান।
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ