হিলি বন্দরে আটকা চালবোঝাই ৬৪ ট্রাক, বিপাকে ভারতীয় চালকরা
দিনাজপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
আমদানি করা চাল খালাস না করায় হিলি বন্দরে আটকা পড়েছে ৬৪টি ভারতীয় ট্রাক
বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে, এসব চাল খালাসে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বেঁধে দেওয়া ৬৩.৫ শতাংশ শুল্ক। এই উচ্চ হারে শুল্ক দিয়ে চাল খালাস করলে লোকসান গুনতে হবে বলে দাবি করছেন আমদানিকারকরা। এ কারণে বন্দরে আটকা আছে চালবোঝাই ভারতীয় ট্রাকগুলো। এতে চরম বিপাকে পড়েছে এসব ট্রাকের চালকরা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ৬৪টি ভারতীয় ট্রাকে করে ২ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে হিলি বন্দরে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে হিলি স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, বন্দরে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভারত থেকে আসা চালবোঝাই ট্রাক। গত মঙ্গলবার থেকে এসব ট্রাক চাল খালাসের অপেক্ষায় আছে।
রিপন মন্ডল নামের এক ভারতীয় ট্রাকচালক বলেছেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে চালবোঝাই ট্রাক এই বন্দরে নিয়ে এসেছি। আজ পর্যন্ত চালের মালিক চালগুলো খালাস করছেন না। ছয় দিন হয়ে যাচ্ছে, এখানে পড়ে আছি।
বিজয় কুমার, রমেশ চন্দ্রসহ আরো কয়েকজন ভারতীয় ট্রাকচালক বলেন, পাঁচ থেকে ছয় দিন হলো এ দেশে এসেছি। আমরা সাধারণত এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পণ্য খালাস করে দেশে ফিরে যাই। কিন্তু, এবার অনেক দিন হলো দেশে ফিরতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা গাড়ির কাছে আসছেন আর চাল দেখে চলে যাচ্ছেন। বাড়িতে তো বেশি খরচ দিয়ে আসতে পারিনি। পরিবারের লোকজন কীভাবে চলছে, বুঝে উঠতে পারছি না। এছাড়াও আমাদের এখানে চলার মতো অর্থও প্রায় শেষ। আমরা চরম বিপাকে পড়ে আছি।
চাল আমদানিকারকরা বলছেন, ৬৩.৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানি করলে প্রতি কেজিতে কাস্টমস শুল্ক-কর পড়বে ৩১ টাকা। আবার ভারতে চালের আমদানি মূল্য প্রতি মেট্রিক টন ৫২০ থেকে ৫৩০ ডলার। তাতে প্রতি কেজি চাল বাংলাদেশি টাকায় ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা পড়ে। সবমিলিয়ে প্রতি কেজি চাল আমদানি করতে পড়বে ৯৫ থেকে ৯৬ টাকা। ফলে, বর্তমান পরিস্থিতিতে চাল আমদানি সম্ভব না। সরকার যদি আগের মতো চাল আমদানিতে ২ শতাংশ শুল্ক-কর বসায়, তাহলে আমদানি করা যাবে এবং বন্দরে যেসব চাল আমদানি করা হয়েছে, সেসব চাল খালাস করা হবে।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক শরিফুল ইসলাম বাবু বলেছেন, হিলি বন্দরে আমার ৮ ট্রাক চাল আমদানি হয়েছে। তবে, এসব চাল খালাস করা হয়নি। চালের ওপর যে ৬৩.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তাতে আমাদের চরম লোকসান গুনতে হবে। সরকার যদি শুল্ক কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরা বন্দর থেকে চালগুলো খালাস করতে পারব।
হিলি স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেছেন, গত ১২ আগস্ট মঙ্গলবার থেকে ১৭ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বন্দরে ৬৪টি ভারতীয় ট্রাকে ২০ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। তবে, শুল্ক জটিলতার কারণে এসব চাল খালাস করছেন না আমদানিকারকরা।
ঢাকা/মোসলেম/রফিক