আজ ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
টাঙ্গন নদীর তীরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘অপরাজেয় ৭১’
আজ ৩ ডিসেম্বর, ঠাকুরগাঁও মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই এবং মুক্তিকামী জনগণের প্রতিরোধে চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে পাকিস্তানি সেনাদের। সেদিন, সকালে হাজার হাজার মানুষ মুক্ত ঠাকুরগাঁও শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসেন। বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ।
ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ড আব্দুল মান্নান জানান, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতের পর সারা দেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সেনারা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় নির্যাতন। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটপাটে মেতে ওঠে তারা। পাশাপাশি চলতে থাকে অগ্নিসংযোগ। ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাক বাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও।
এরই মধ্যে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলোন দুর্বার প্রতিরোধ। ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম. খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এই মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা শক্তি বৃদ্ধি করে সদলবলে প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁয়ে।
তিনি জানান, ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোরে ঠাকুরগাঁও শহর শত্রুমুক্ত হয়। সেদিন সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকেন। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। তাদের অনেকের হাতে ছিল প্রিয় স্বদেশের পতাকা।
এলাকাবাসী জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ঠাকুরগাঁও ছিল মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এই মহকুমার অন্তর্গত। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত গণকবর আর বধ্যভূমি। ঠাকুরগাঁও জেলার অধিকাংশ গণকবর আর বধ্যভূমিগুলো এখন বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে পড়ে থাকা গণকবরগুলো দেখার কেউ নেই। অধিকাংশ গণকবর আর বধ্যভূমি এখন গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
আব্দুল মজিদ বলেন, “ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুকানপুর ইউনিয়নে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে মারা যাওয়াদের শুকানপুকুরীতে মাটি চাপা দেয় তারা। আমাদের এই শুকানপুকুরী বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার দাবি জানাচ্ছি।”
রাজাগাঁও ইউনিয়নের বিমলা রাণী বলেন, “পাকিস্থানি বাহিনী আগে খরিলুপের বাড়িত আইছিল। খরিলুপের বাড়ি থেকে আসিল হামার বাড়ি। হামরা সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি করি। কিন্তু হামাক সবাকে ধরে নিয়ে আসিল। হামার বস্তির তামাক লোকলাকে ধরে নিয়ে আসিছিল। সবাকে লাইন করে দাড়ায় থুইল। ওই সময় মুই গর্বপতি ছিনু। মিলিটারি বন্দুনটা দিয়ে মোর পেটটাতে গুতা দিছে আর মুই কিছু কহিবা পারু না।”
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ