ববি’র শিক্ষার্থী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আন্দোলন প্রত্যাহার 

সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ফলপ্রসু আলোচনা সভায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে উভয় পক্ষ। 

শিক্ষার্থীরা তাদের মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি এবং পরিবহন মালিক শ্রমিকরা তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে চলমান অচলাবস্থার নিস্পত্তি হলো।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল বিশ্ববিদ‌্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন আশা প্রকাশ করেন, সব পক্ষ এই সিদ্ধান্তের প্রতি সন্মান জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবেন।

এদিন বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের সভাকক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মেট্রো পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং নগরীর রূপাতলী হাউজিং সোসাইটি নেতৃবৃন্দের সভা শুরু হয়। 

প্রায় দুই ঘণ্টার সভায় শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর গভীর রাতে হামলকারীদের গ্রেপ্তার এবং পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের দাবি পুনর্ব‌্যক্ত করেন। 

অপরদিকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা রুটে তাদের পরিবহনগুলো নির্বিঘ্নে চলাচলের নিশ্চয়তা এবং গ্রেপ্তার দুই শ্রমিকের মুক্তির দাবি জানান। 

সভায় মেট্রোপুলিশের উপ-কমিশনার মো. মোকতার হোসেন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলকারীদের দলমত নির্বিশেষে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেন। 

অন্যদিকে মালিক শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন গ্রেপ্তারকৃত দুই শ্রমিকের মুক্তি এবং রুটে তাদের বাস চলাচল নির্বিঘ্ন করার প্রতিশ্রুতি দেন। 

এর পরিপেক্ষিতে সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ফজলুল হক রাজিব তাদের চলমান মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে ফের যে কোনো ধরনের শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

সভা শেষে বরিশাল জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের কিছু শ্রমিকের কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।’ 

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের প্রশাসনের উপস্থিতিতে সমঝোতা সভায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রমিকদের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। গ্রেপ্তার দুই শ্রমিকের মুক্তির ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনও সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সভায় সন্তোষজনক আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

সভায় অংশগ্রহনকারী নগরীর রূপাতলী হাউজিং সোসাইটির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, রূপাতলীর বিভিন্ন মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা খুবই ভদ্র এবং নম্র। তারা কারো সঙ্গে ঝামেলা করে না। মাঝে মধ্যে বহিরাগতদের হাতে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য রূপাতলী হাউজিংয়ে পুলিশের নজরদারী বাড়াতে হবে।

মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মো. মোকতার হোসেন জানান, আন্দোলতরত শিক্ষার্থী এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সব দাবী মেনে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলকারীরা যে দল মতের হোক না কেন তাদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার দুই শ্রমিকের মুক্তির বিষয়ে পুলিশ আইনগত সহায়তা দেবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং রুটে নির্বিঘ্নে পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করবে পুলিশ। ওই সভার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট কর্মসূচির অবসান হলো বলে তিনি জানান। 

উল্লেখ‌্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ের বিভিন্ন মেসে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।