অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চান জাককানইবির শিক্ষার্থীরা
ফাহাদ বিন সাঈদ || রাইজিংবিডি.কম
করোনার কারণে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের পর এবার হাঁটছে অনলাইন পরীক্ষার পথে। দুর্বল নেটওয়ার্ক, অধিক মূল্যের ডাটাপ্যাকসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় অনলাইন ক্লাস চললেও পরীক্ষা নেওয়া আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মত সেশনজট কমানোর জন্য অনলাইনে পরীক্ষার বিকল্প নেই। তবে, কয়েকজন বিপক্ষেও মত দিয়েছেন।
অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের নারী শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরছেন রাইজিংবিডির ক্যাম্পাস সংবাদদাতা মো. ফাহাদ বিন সাঈদ।
লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শারমীন শিমু বলেন, অনলাইন পরীক্ষা মানে ওপেন বুক পরীক্ষা। এতে করে দেখা যাবে অনেক শিক্ষার্থী দেখে লিখবে কিংবা কপি করবে। তবে অনলাইনে অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে, যেখানে সময় ধরে বেঁধে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব যেমন -গুগল ক্লাসরুম, এক্সাম ডট নেট ইত্যাদি। এতে শিক্ষার্থীদের সেশনজট নামক ভয়ঙ্কর বিষয় থেকে মুক্তি পাবে। কিছুটা হলেও সময় লাঘব হবে।
পরিসংখ্যান বিভাগের সায়মা ইসলাম বলেন, অনলাইন পরীক্ষা এটি যেমন বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার এক সুযোগের নাম, তেমনি ভোগান্তিও বটে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অফলাইন পরীক্ষার পক্ষে। কারণ, আমার মনে হয় এতে নেটওয়ার্কজনিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো এড়ানো যায় এবং মেধার সঠিক মূল্যায়ন হয়। তবে বর্তমানে যা পরিস্থিতি, তাতে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে অনলাইন পরীক্ষার কোনো বিকল্প উপায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সব শিক্ষার্থীর নেটওয়ার্কের আওতায় এনে, তাদের ডাটা প্যাক কেনার খরচ দিয়ে, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে, পাশাপাশি শিক্ষার্থী বান্ধব পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষাগুলো নেওয়া হয়, তাহলে সফল হবে বলে মনে করি।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের নাজমুন নাহার নিশি বলেন, দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্পাসে গিয়ে আমরা সবাই আশাবাদী ছিলাম সশরীরে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার পর সশরীরে পরীক্ষা দেওয়া এখন অনেকটা অলীক কল্পনার মতোই। অথচ বিগত দেড় বছর ধরে আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো দেওয়াও অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। সেশনজটের কবলে পড়ে পড়াশোনার ক্ষতি বেড়েই যাচ্ছে আমাদের। এমতাবস্থায় অনলাইন পরীক্ষা দেওয়াই শ্রেয়। যদিও আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট এখনো টেকনিক্যাল পর্যায়ে উন্নতির পথ থেকে অনেকটাই দূরে। অনেকেরই হয়তো অনলাইনে জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা দিতে সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট সময়সীমা দিয়ে অনলাইনে 'Take home exam' নেওয়া যেতে পারে। অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা অনলাইন ভাইভার মাধ্যমেও সেমিস্টার ফাইনাল নেওয়া যেতে পারে। তবে যেই পদ্ধতিতেই হোক না কেন, আমরা চাই পরীক্ষা হোক। আমাদের সেমিস্টার শেষ হোক এবং সেটি যেন অবশ্যই শিক্ষার্থীবান্ধব হয়।
পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের নুসরাত জাহান বলেন, অনলাইন পরীক্ষা দ্বারা একটা কাজ হবে, আর সেটা হচ্ছে সেশনজট কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী হবে। তবে তা যেন আবার কোনো শিক্ষার্থীর গলার কাঁটা না হয়ে যায়। পরিস্থিতি কিভাবে অনুকূলে আসবে, কিভাবে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে বা বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ঈদের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে তখনো অফলাইনে পরীক্ষা নিতে পারে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।
অনলাইন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক-ইন্টারনেট সংযোগ দরকার। তাই অনলাইনে পরীক্ষা যদি নিতেই হয়, তাহলে তা সুন্দর -সুশৃঙ্খলভাবে নেওয়া হোক। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে। ডিভাইস মোটামুটি সবার থাকলেও ইন্টারনেট সুবিধা সবার নাও থাকতে পারে, সে ব্যাপারে আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রশাসনিকভাবে। প্রয়োজনে ইন্টারনেট কেনার জন্য বা অনলাইনে পরীক্ষা যাতে শিক্ষার্থীদের কাছে সহজতর হয়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে প্রশাসনকে।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিংয়ের শিক্ষার্থী নাজমা আক্তার বলেন, গত ১৮ মার্চ থেকে আমাদের ক্যাম্পাস বন্ধ। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলো আমরা এখনো একই বর্ষে আটকে আছি। সরকার যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা বলছে, তখনই কোভিডের প্রকোপ বাড়ছে। ফলে বরাবরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি ভেস্তে যাচ্ছে। এইদিকে আমাদের পরিবার, সমাজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই।
করোনার কারনে দীর্ঘ সময় ক্লাস, পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজট হবেই। অপরদিকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিন্তু তাদের কার্যক্রম থামিয়ে রাখেনি। তাদের পরীক্ষা চলমান রয়েছে। আমরা এমনিতেই অনেক পিছিয়ে রয়েছি। এই করোনা পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে আমাদের কারোরই জানা নেই। তাই এঅবস্থায় আমাদের অনলাইন পরীক্ষা বা অ্যাসাইনমেন্ট যেভাবেই হোক, পরীক্ষা নিয়ে নেওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক বলে মনে করি।
জাককানইবি/মাহি