ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

২ শিক্ষকের পদত্যাগসহ ৯ দাবি জাবির আইনের শিক্ষার্থীদের

জাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১১ আগস্ট ২০২৪  
২ শিক্ষকের পদত্যাগসহ ৯ দাবি জাবির আইনের শিক্ষার্থীদের

দুই শিক্ষকের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

এসময় তারা ওই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের হেনস্থা, শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলা, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন, পরিকল্পিতভাবে রেজাল্ট কমিয়ে দেওয়া, দাঁড়ি-টুপি পড়া ও মাদ্রাসা থেকে জাবিতে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্তা, ক্লাসে প্রশ্ন করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন।

অভিযুক্ত শিক্ষকরা হলেন, আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের সভাপতি তাপস কুমার দাস এবং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পাল।

রোববার (১১ আগস্ট) সকাল ১১টায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে একটি মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার চত্বরে যান বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা মানববন্ধন করেন তারা।

মানববন্ধনে ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াজুল রাহী বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আমি অন্দোলনে অংশ নেই। গত ২২ জুলাই পুলিশ গেরুয়াতে আক্রমণ করে। পুলিশের গুলির মুখে আমরা আত্মসমর্পণ করি। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আইনি সুপারিশের সেল গঠন করা হয়। আইন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস কুমার সেই সেলের সদস্য। তাপস স্যারকে জানানো হলে তিনি বলেন- আমি নাকি হিজবুত তাহরীরের লোক। আমি নাকি দুষ্কৃতিকারী। যেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষকরা আটক হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে নিচ্ছেন, সেখানে আমার বিভাগের স্যার এসব বলেন।

৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরশাদুল ইসলাম বলেন, আমার বিভাগের ভাই-বন্ধুদের পুলিশ ধরে নিচ্ছে। আর ডিন হিসেবে তার কাছে সহযোগিতা চাওয়া হলে তিনি বলেন, হল বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ। তাহলে তোমরা ক্যাম্পাসে কী কর? এসব বলে চার্জ করছিলেন। আমাদের অনেকেই আশোপাশের এলাকাগুলোতে ভাড়া থাকতাম। তিনি কি এসব বলে শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করতে পারেন?

তিনি বলেন, রাহী আটক হওয়ার পর এক সিনিয়র ভাই তাপস স্যারকে আটক শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনার জন্য বললে তিনি অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন। তিনি ওই ভাইকে বলেন, তোমার বাড়ি কোথায়? আটক হওয়া ছাত্রের বাড়ি কোথায়? তুমি তাকে কিভাবে চেনো? সে যে শিবির না, নৈরাজ্যকারী না- তুমি তা কিভাবে জানো? সৃজন নামে আরেক শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে আহত হলে তার বাবা কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে তিনি তার (সৃজনের বাবা) সঙ্গেও বাজে আচরণ করেন এবং বলেন, আপনার ছেলের কতবড় সাহস সে ছাত্রলীগের বিপক্ষে কথা বলেন। এটা একজন শিক্ষকের আচরণের মধ্যেই পড়ে না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।

সহযোগী অধ্যাপক সুপ্রভাত পাল শিক্ষার্থীর গায়ে হাত তোলেন এমন অভিযোগ এনে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সুহার্ত্য দৌলা অনিক বলেন, গত ২৭ জুন আমার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। আমি তাড়াহুড়ো করে ক্লাসে আসি এবং দ্বিতীয় সারির একটি বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করি। তাড়াহুড়োয় আমার ফোনটা রাখতে মনে ছিল না। পরীক্ষার একদম শেষ পর্যায়ে আমার ফোনটা বেজে উঠলে তিনি বলেন, আমি নকল করছি। আমি নকল করিনি বললে তিনি আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মারেন। আমার ফোন নেওয়ার দেড় মাস পার হলেও এখনো তিনি ফোন ফেরত দেননি।

মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের প্রতি বিরূপ আচরণ করার অভিযোগ এনে কাওসার আহমেদ রেজাউল বলেন, আমরা যারা মাদ্রাসা থেকে এসেছি, ক্লাসে নানাভাবে তাদের হেনস্তা করা হয়েছে। তারা ক্লাসে কোনো প্রশ্ন করলে উত্তর তো দেওয়াই হতো না বরং উল্টো প্রশ্ন করে বলা হতো- তুমিতো কি মাদ্রাসা থেকে এসেছো? দাঁড়ি-টুপি পরে আছো! মাদ্রাসা ছাত্র হলে কি আমার প্রশ্ন করার অধিকার নেই, প্রশ্ন করেন ভুক্তভোগী রেজাউল।

বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ফলাফল কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে জামিয়াতুন নাহু বলেন, শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের সময় পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে থাকেন। যে সব শিক্ষার্থী তেলবাজির মাধ্যমে তাদের মন জুগিয়ে তোলেন, তারা সু-নজরে থাকেন। এর প্রভাব তার রেজাল্টে দেখতে পাই।

একই অভিযোগ তোলেন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাশরুর রহমান। তিনি বলেন, যে সব অভিযোগ শিক্ষার্থীরা তুলেছেন, তা খুবই পুরনো। কিন্তু এতদিন আমরা বলতে পারিনি। ছাত্রলীগ দিয়ে, সাবেক সরকারের অঙ্গসংগঠন দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা হয়েছিল। কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিলেক্টেড কিছু প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনার্স ও মাস্টার্সের শেষের দিকে আমাদের সিজিপিএ কমিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, তাপস কুমারের জুনিয়র সুপ্রভাত পাল। অনেক যোগ্যপ্রার্থী থাকার পরও তাপস কুমার তাকে নিয়োগ দেন। তারপর সুপ্রভাত পালের বর্তমান স্ত্রী এবং তৎকালীন প্রেমিকা বনশ্রী রাণীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বনশ্রী রাণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাতিল হওয়া এক নিয়োগে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

এর আগে, সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে বিভাগের করিডোরে তালা লাগিয়ে প্রবেশপথ বন্ধ করে দেন।

/আহসান/মেহেদী/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়