জবিতে ফোন কলের ‘সম্মানী’ বাবদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পের কাজ চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় ফোন কলে যোগাযোগ করার নামে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ কয়েকজন কর্মকতার বিরুদ্ধে। ফোন কল করে অক্লান্ত পরিশ্রম করা হয়েছে উল্লেখ করে সম্মানীবাবদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই টাকা উত্তোলন করেন অভিযুক্তরা।
এই বিশাল অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মকর্তাকে এবার ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ভূমি অধিগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন জায়গায় ফোন কল ও সরাসরি যোগাযোগের নাম করে সম্মানী বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সংস্থাপন) মোহাম্মদ জাহিদ আলম, সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার, ওই সময়ের সেকশন অফিসার গ্রেড-২ আনোয়ার হোসাইন, অফিস সহকারী মো. মতিন ২০১৯ সালের ২৯ মে মোট ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
এ সংক্রান্ত টাকা উত্তোলনের নথিপত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। নথিপত্র ঘেটে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের ২৯ মে পর্যন্ত ফোন কল ভাতা ও যোগাযোগ ভাতা বাবদ এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলে নেন তারা। এর মধ্যে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান নিয়েছেন ১ লক্ষ টাকা, সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সেলিম ভূঁইয়া নিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা, সাবেক রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান নিয়েছেন ৮০ হাজার টাকা, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (সংস্থাপন) মোহাম্মদ জাহিদ আলম নিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা, সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার নিয়েছেন ৬০ হাজার টাকা, সেই সময়ের সেকশন অফিসার গ্রেড-২ আনোয়ার হোসাইন নিয়েছেন ২০ হাজার টাকা, অফিস সহকারী মো. মতিন নিয়েছেন ৩৫ হাজার টাকা।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নতুন ক্যাম্পাস প্রকল্পসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব অনিয়মে তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাহিদ আলম। তিনি অধ্যাপক মীজানুরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। সংস্থাপন শাখার দায়িত্বে থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, পদোন্নতিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
এবার বিতর্কিত এই কর্মকর্তাকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সংস্থাপন) আবদুল হালিমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১৪ আগস্ট) থেকে পরবর্তী উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য না থাকায় তার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব না পাওয়ায় আইন অনুযায়ী তিনিও কাউকে রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ দিতে পারবেন না।
আবার বর্তমান কোষাধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির চৌধুরীও সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন বলে জানা গেছে। মোহাম্মদ জাহিদ আলমও অধ্যাপক মীজানুরের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তাকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ জাহিদ আলম বলেন, ফোন কল বাবদ সম্মানী হিসেবে টাকা উত্তোলন করে নেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। এসব বিষয়ে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলতে হবে। আপনি এক সময় এসে দেখা করলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, এসব অভিযোগ তো তদন্ত করে দেখতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাকে শোকজ করতে হবে, ফাইল ঘেঁটে দেখতে হবে। এখন এই জরুরি অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর জন্য একজন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার নিয়োগ জরুরি। তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা। সেজন্য তাকে পরবর্তী উপাচার্য দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার কোষাধ্যক্ষের আছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
/লিমন/মেহেদী/