ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ইবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ৬ শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ

ইবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ১৯ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৯:৫৩, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
ইবিতে র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে ৬ শিক্ষার্থীকে থানায় সোপর্দ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে র‍্যাগিং করার সময় হাতেনাতে ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। পরে অভিযুক্ত ওই ছয় শিক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে এ র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শরীফ শেখ ওরফ শিহান, সাব্বির হোসেন, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব খান এবং আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্চয় বড়ুয়া।

হল সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে শিক্ষার্থী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর, মামুনসহ কয়েকজনকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর রুমে ডাকেন অভিযুক্তরা। এক পর্যায়ে শামীম, সাইম, রাকিবুল ও হামজাকে রেখে বাকিদের অ্যাসাইনমেন্ট লেখা লাগবে বললে ছেড়ে দেন অভিযুক্তরা। পরে ওই চারজনের ওপর সাব্বির ও সঞ্চয় র‌্যাগিংয়ের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

র‌্যাগিং চলাকালে ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, আরেকজনকে কল দিয়ে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে বলা হয় ও আরেকজনকে নাচতে বলা হয়৷ এ সময় হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদের হাতেনাতে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের খবর দেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসলে অভিযুক্তদের ইবি থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। সেখানে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব খানের বিরূদ্ধে অভিযোগ না পাওয়া তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, “হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে র‍্যাগিং চলছে- এমন খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্চয় দুজন মিলে ওদের র‍্যাগ দিচ্ছেন। কিন্তু এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা অস্বীকার করেন। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে র‍্যাগিংয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।”

এর আগে, গত শনিবার (১৬ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে নবীন ১২ শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা। সেখানে অভিযুক্তরা ছাড়াও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ বর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল ও জিহাদ উপস্থিত ছিলেন। পরে ভুক্তভুগীদের রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শরীফ শেখ শিহান বলেন, “আমি হলের কক্ষে ছিলাম না। পরে আমাকে ডাকলে ভিতরে গিয়ে বান্না ভাইকে দেখতে পাই। এর আগে, গতদিন মেসে জুনিয়রদের সাথে আমরা বসেছিলাম। ওইদিন উপাচার্য, প্রক্টর স্যারসহ বিভাগের সব শিক্ষকের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এগুলো কেউ না পারলে তাকে একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে কাউকে মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি।”

আটকের বিষয়ে ইবি থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কাছে ছয়জনকে নিয়ে আসেন। তাদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”

এদিকে, র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আখতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, সহকারী প্রক্টর ও লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, আবাসিক শিক্ষক রাসুল ই ইলাহী। কমিটির সদস্য সচিব হলেন হলের সহকারী রেজিস্ট্রার জিল্লু রহমান।

আগামী রোববারের (২৪ নভেম্বর) মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে লালন শাহ প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন বলেন, “আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আগামী রোববারের মধ্যে আমরা সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, “যেহেতু এটা হলের বিষয়। হল বডি তদন্তের পর আমাদের প্রতিবেদন ও সুপারিশ পেশ করবে। তারপর আমরা যেখানে যা করা প্রয়োজন, করবো। আমরা সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই বসেছি। এ ব্যাপারটা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়