যবিপ্রবির উপ-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে আসবাবপত্র লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ
যবিপ্রবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ফটো
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবির) জব্দকৃত আসবাবপত্র লোপাটের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে স্টেট শাখার উপ-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর কবীরের বিরুদ্ধে।
এর আগে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে দুটি খাট ও তোষক জব্দ করেন আনসার সদস্যরা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের জব্দকৃত ফ্রিজ ও মাইক্রো ওভেন নিজের অফিসে উপ-রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর কবীরকে অবৈধভাবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
এ ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ছুটি থেকে ফিরে না আসায় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. জাকিরকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। দেনা-পাওনা পরিষদ না করায় তার বাসার জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাজেয়াপ্ত করে।
উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আসবাবপত্র কৌশলে নিজের বাসায় নিয়ে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ সেপ্টেম্বর বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ড. জাকিরের বাসা থেকে দুটি খাট ও তোষক নিয়ে যাওয়ার সময় ছাড়পত্র না থাকায় আটক করেন নিরাপত্তা কর্মীরা।
সে সময় নিরাপত্তা কর্মীরা ভ্যানচালককে মালামালের মালিক কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীরের নাম্বার দেন। তবে জাহাঙ্গীরের কাছে ভ্যানচালকের কথা জানতে চাইলে তিনি ভ্যানচালককে চেনেন না বলে জানান। কিন্তু মালামাল আটকের পূর্বে উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর ভ্যানচালকের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, মালামালগুলো জব্দের পর উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মালামালগুলো তাদের দাবি করে বের করে দিতে সহযোগিতা চান। কিন্তু ওই দুই শিক্ষক এতে রাজি হননি।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কোন মালামাল বা আসবাবপত্র জব্দ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট শাখার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। স্টেট শাখার দায়িত্বে উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর নিজেই।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। কিন্তু পরবর্তীতে উপ-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, আগের দিন বিকেলেই তিনি রেজিস্ট্রারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ওমর ফারুক বলেন, “আমরা এ বিষয়ে অবগত হওয়ার পর তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. রাফিউল হাসান বলেন, “ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের পর যাদের আমরা সন্দেহভাজন পেয়েছি, আজই তাদের সঙ্গে বসবো। আশা করছি, আমাদের যে সময় দেওয়া হয়েছে, সে সময়ের মধ্যেই একটি পরিপূর্ণ এবং সঠিক প্রতিবেদন আমরা জমা দিতে পারব।”
ওই ভ্যানচালক বলেন, “গত ২৯ সেপ্টেম্বর মো. জাহাঙ্গীর কবির আমাকে আমবটতলা বাজার থেকে নিয়ে যান কিছু আসবাবপত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতলা শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানে তিনি আমার ভ্যানে দুটি খাট এবং তোষক তুলে দিয়ে বলেন, গেটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তিনি ছাড়পত্র নিয়ে আসছেন। আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় গেটে অবস্থানরত নিরাপত্তা কর্মীরা আমাকে বাধা দেয়।”
দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন, ছাড়পত্র না থাকায় আমরা আসবাবপত্রগুলো জব্দ করি এবং এ ব্যাপারে সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অবগত করি।
অভিযোগ অস্বীকার করে মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “জব্দকৃত আসবাবপত্রগুলো আমার অধীনস্থ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে আমার অধীনস্থ সব আসবাবপত্র আমি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দিতে পারব।”
ভ্যানচালক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ওই ভ্যানচালকে চিনি না। তার সঙ্গে আমার কোনদিন কথা হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “আমরা এ বিষয়ে অবগত হয়েছি। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই আমরা অতিদ্রুত অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
যবিপ্রবিতে আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে কর্মরত পাঁচজন অনুপস্থিত কর্মচারীর নামে ভুয়া বেতনশিট তৈরি ও সিকিউরিটি সার্ভিস কোম্পানি ‘বিএসএস’ এর সঙ্গে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের ঘটনায় উপ-রেজিস্ট্রার (স্টেট ও নিরাপত্তা শাখা) মো. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। ফলে ওই কমিটি উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য সুপারিশ করে।
ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী