ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাবিতে অনুমতি ছাড়া জুনিয়রদের সঙ্গে বসা যাবে না

রাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ১৯ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৭:১৬, ১৯ আগস্ট ২০২৫
রাবিতে অনুমতি ছাড়া জুনিয়রদের সঙ্গে বসা যাবে না

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) র‍্যাগিং রোধে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে প্রক্টর অফিস। তবে নতুন নির্দেশনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা সমালোচনা।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রক্টর অফিসের অনুমতি ছাড়া কেউ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডাকতে পারবে না। এ ধরনের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন:

সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে পুরাতন ফোকলোর চত্বর, শহীদ মিনার চত্বর, আমতলা, সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে বসা শিক্ষার্থীদের তুলে দেন সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহা. বেলাল হোসেন।

এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, “প্রক্টর অফিসের অনুমতি ছাড়া প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ডাকা যাবে না। ডাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, “সিনিয়র-জুনিয়র বসবে, তার জন্য প্রক্টর অফিসের অনুমতি নিতে হবে? কী বলে অনুমতি নেবে? যেটা করতে বাধা দেওয়ার জন্য এই নিয়ম করলেন, অনুমতি নিতে গেলে দেবেন? না দিলে এমন নিয়মের অর্থ কী? সিনিয়র-জুনিয়র বসবে, আড্ডা দেবে, পরিচিত হবে- এটাই তো হয়, তাই না? খারাপ কী? যদি বলেন র‍্যাগিং, এটা আড়ালে বন্ধ করতে পারেন।”

তিনি বলেন, “জনসম্মুখে বসলে অনুমতি নেওয়ার কোনো যুক্তি দেখি না! জনসম্মুখে কেউ কিছু করার সাহস পাবে বলে মনে হয় না! আমি মোটেও র‍্যাগিং সমর্থন করি না বা সে রকম কোনো বৈধতাও চাচ্ছি না। র‍্যাগিংয়ে জিরো টলারেন্স রাখেন। কোনো শিক্ষার্থী যদি র‍্যাগিংয়ের অভিযোগ তোলে, তো নিয়েন ব্যবস্থা, যা মন চায়।”

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “বিনোদপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিনোদপুর কিন্ডারগার্টেনে পদোন্নতি পেলো ক্যাম্পাস। কয়েকদিন পর শুনবো ক্যাম্পাসে বন্ধুরা একসঙ্গে বসে আড্ডা দিতেও প্রক্টর অফিসের অনুমতি লাগবে। সিনিয়র-জুনিয়রের যে সম্পর্কটা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা তুলে ধরে, সেটা থাকুক না। না হলে পরে স্কুল-কলেজের মতো রোবট আসবে-যাবে। কেউ কাউকে চিনবে না, সম্মান করবে না। সংকটে-সংগ্রামে একসঙ্গে পাওয়া যাবে না। তবে কি এটাই চান? আসলে নিয়ম ভালো, তবে অতিনিয়ম ভালো না; একটু শিথিল হওয়া প্রয়োজন।”

গত ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছে, র‍্যাগিং একটি সামাজিক অপরাধ। এর ফলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়া ছাড়াও র‍্যাগিং এর শিকার শিক্ষার্থীর মানসিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। এ কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোথাও কোনো প্রকার র‍্যাগিং না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার মনোযোগ আকর্ষণ করছে।

সেখানে আরো বলা হয়েছে, কেউ র‍্যাগিং করলে বা কাউকে র‍্যাগিং করতে প্ররোচিত করলে প্রমাণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া বিভাগের সভাপতির অনুমতি ছাড়া বিভাগের অন্য কোনো বর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নবীন শিক্ষার্থীদের পরিচিতি বা মতবিনিময় অনুষ্ঠান করা যাবে না। 

এ বিষয়ে রাবির সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছে। আমাদের কাছে প্রায়ই রিপোর্ট আসে, প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিনিয়র ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পরিচয়ের নামে র‍্যাগিং করে থাকে। শুরুতে তারা ভালোভাবে ডেকে নিলেও পরে সেখানে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজও আমরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে এমন সমাবেশ লক্ষ্য করেছি। এরপর তাদের বসতে নিষেধ করলে তারা সেখান থেকে চলে যায়।”

তিনি বলেন, “একটি স্থানে তাদের উঠিয়ে দেওয়ার পরও তারা আবার বসতে শুরু করে। আমরা সেখানে গেলে আমাদেরই এক সহকর্মীর পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি—অন্তত বিভাগের সভাপতির অনুমতি ছাড়া তারা কোথাও বসতে পারবে না। র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় যদি কেউ অভিযুক্ত হয়, তবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির কাছে পাঠানো হবে এবং কমিটিই যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা  অধ্যাপক ড. আমীরুল ইসলাম বলেন, “এই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বীগ্ন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। ক্যাম্পাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়