ঢাকা     বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কালীগঞ্জ থেকে ঢাকা ও গাজীপুরে সরাসরি গণপরিবহন নেই 

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  
কালীগঞ্জ থেকে ঢাকা ও গাজীপুরে সরাসরি গণপরিবহন নেই 

রাজধানীর খুব কাছের উপজেলা গাজীপুরের কালীগঞ্জ। তা সত্ত্বেও ঢাকা ও গাজীপুর জেলার সঙ্গে সরাসরি কোন গণপরিবহন নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন দশায় চরম দুর্ভোগে এ উপজেলায় কর্মরত ও অবস্থানরত কর্মজীবী মানুষ।

কালীগঞ্জ উপজেলাটি দক্ষিণে পূর্বাচল লাগোয়া এবং পশ্চিমে জেলা সদর পর্যন্ত। দেশের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শহরে এ জনপদের বহু মানুষের কর্মস্থল হওয়ায় তাদের যাতায়াত করতে হয় নিত্যদিন। কিন্তু সরাসরি কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। আর এই সুযোগে কিছু অসাধু পরিবহন ব্যবসায়ী হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। তবে নগরায়ণের এ যুগে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

এ উপজেলার আড়িখোলা রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সকালে ৩টি ট্রেন রাজধানী অভিমুখে ছেড়ে যায়। এই ট্রেনগুলো ভিন্ন ভিন্ন স্টেশন থেকে ছেড়ে আসার ফলে আগেই যাত্রীতে পূর্ণ থাকে। যে কারণে আড়িখোলা স্টেশন থেকে যাত্রী উঠতে হয়রানির শিকার হতে হয়। তবে ৩টি ট্রেনের মধ্যে একটি ট্রেনের আবার টাইম শিডিউল প্রায়ই বিলম্বিত হয়। তাই ভরসার যায়গা যখন সড়ক পরিবহন তখন রাজধানী ও জেলা শহরের সাথে সরাসরি গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে চলে নানা অজুহাতে যাত্রী হয়রানি বা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়। 

স্থানীয় কর্মজীবী যাত্রীদের প্রতিদিনের যাতায়াতে কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের উপর নির্ভর করতে হয়। বিগত বছর পনের আগে কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কে কালীগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট লিঃ (কেটিএল) নামে একটি গণপরিবহন কালীগঞ্জ-মহাখালী-গুলিস্তান সড়কে চলাচল করত। কিন্ত অজ্ঞাত কারণে ওই পরিবহনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আর কোন পরিবহন রাজধানীর সাথে সরাসরি সেবা চালু করতে পারেনি। তবে কালীগঞ্জ থেকে সরাসরি গাজীপুর জেলায় কোন কালেই কোন গণপরিবহন চালু ছিল না। যে কারণে জেলামুখী কর্মজীবী যাত্রী সাধারণকে ভেঙে ভেঙে অথবা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিজার্ভ নিয়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে হয়। এতে যাত্রীদের সময় ও অর্থ দুটোই বেশি লাগছে।  

ঢাকার উত্তরায় কর্মরত শারমিন সুলতানা বলেন, যেহেতু আমি ঢাকায় কর্মরত আছি তাই প্রতিদিন আমাকে এই সড়কে দিয়ে যেতে হয়। যদি ঢাকায় সরাসরি একটি বাস সার্ভিস থাকতো তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। ভেঙে ভেঙে গেলে সময় যেমন বেশি লাগে তেমনি খরচও হয় অতিরিক্ত। তাছাড়া পরিবহন চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা তো রয়েছেই। যেদিন যাত্রীদের একটু ভিড় বেশি থাকে তারা ইচ্ছা করেই ভাড়ার পরিমান দেয় বাড়িয়ে। এই সড়কে যাত্রীদের ভোগান্তির কোন শেষ নেই।

অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান হোসেন (৬০) জানান, তিনি গাজীপুর জেলা আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন দীর্ঘদিন। প্রতিদিন তিনি ভাদুনের সড়কে যাতায়াত করেন। সড়কটির বেহাল দশার কারণে তিনি দুইবার দুর্ঘটনার শিকারও হন। যেহেতু সরাসরি কোন পরিবহন ব্যবস্থা নেই তাই বৃষ্টির দিনে ঝামেলা পোহাতে হয় অনেক বেশি। রাস্তাও হয়ে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তিনি অতিদ্রুত এই রাস্তায় একটি সরাসরি পরিবহন সেবা চালু হওয়া জরুরী বলে মনে করেন। একই কথা বলেন একই আদালতে কর্মরত অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান রুবেল।  

এ উপজেলার মো. শামসুল ইসলাম (৫৫) বলেন, আমি ঢাকার বনানীতে একটি বায়িং হাউজে কাজ করি। প্রতিদিন খুব ভোরে রওনা দিতে হয়। আর ওই সময় কেটিএল বাসই একমাত্র ভরসা। লেগুনা দুই একটা এলেও শীতের সকালে তাতে চড়া খুব সহজ ব্যাপার না। তাই বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সময়মত বাস না পাওয়ার কারণে কর্মক্ষেত্রে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে পারিনি। আগে যখন কেটিএল বাস সার্ভিসটি টিকেট কাউন্টারের মাধ্যমে চলতো তখন সরাসরি অফিসের সামনে গিয়ে নামতাম। আমাদের জন্য অনেক সহজ ছিল। কিন্তু এখন রাস্তাতেই দিনের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পার করে দিতে হয়।

কালীগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট লিঃ (কেটিএল) বাস মালিক সমিতির সভাপতি শেখ আব্দুল হালিম বলেন, আমরা বিভিন্ন পরিবহন মালিকদের সাথে কথা বলে চেষ্টা চালাচ্ছি। সত্যি বলতে এই সড়কে বাসের ব্যবসা এখন অনেক মন্দা। একটি বাস থাকা যেন গলায় ফাঁসি লেগে থাকার মতো। সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পরিমান এত বেশি যে বাসের জন্য মানুষ এতটা অপেক্ষা করেনা। তবু অনেকের সাথেই কথা বলছি দেখি কি করা যায়।

রফিক সরকার/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়