রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চায় পদ্মা ব্যাংক
বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক রাষ্ট্রীয় যে কোন ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য বিতর্কিত ফারমার্স ব্যাংক থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা ব্যাংক নামে আত্মপ্রকাশ করে ব্যাংকটি।
অর্থ মন্ত্রণলায়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফডিআই) এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এফআইডি-এ একীভূতকরণের জন্য একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। প্রস্তাবে পদ্মা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের বেশ কিছু আর্থিক কেলেঙ্কারির সংকট কাটিয়ে ওঠার পর পদ্মা ব্যাংক এখন ভালো ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এটি এখন আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যাংক। যদি এ ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়, তাহলে ব্যাংকটি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যদি পদ্মা ব্যাংককে অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে তাহলে এটি হবে এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা। প্রায় এক যুগ আগে (২০০৯) বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। এ ছাড়া, সমস্যা জর্জরিত বেসিক ব্যাংক বিডিবিএল-এর সঙ্গে একীভূত হতে পারে বলেও আলোচনা চলছে।
পদ্মা ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় কোন ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে।
তিনি বলেন, ‘তৎকালিন ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধারের জন্য যে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক অংশীদার হিসেবে ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল সেই যেকোনো ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হোক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান বিডিবিএলও পদ্মা ব্যাংকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।’
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংক এবং একটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) তৎকালিন ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইটি ফান্ড বিনিয়োগ করেছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই পাঁচ প্রতিষ্ঠান এখন পদ্মা ব্যাংকের দুই-তৃতীয়াংশ অংশীদার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে একীভূতকরণের প্রস্তাব পাঠানোর আগে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সম্মতি নিতে হবে। এরপরই অন্যান্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংক বিবেচিত হওয়ার পর আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু পদ্মা ব্যাংক নিজেরাই একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়টি এখানে ভিন্ন।
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন ব্যাংকিং কোম্পানি আইন ২০২১-এ একটি ব্যাংকের একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের বিধান অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ আইন এখন সংসদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
২০০৭ সালে জারি করা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একীভূতকরণ সংক্রান্ত খসড়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, একীভূত হতে ইচ্ছুক দুটি ব্যাংক তাদের সম্পদের মূল্য এবং দায়, লেনদেনের মূল্য এবং অন্যান্য বৈধ নথির মূল্যায়নসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের একীভূতকরণের প্রস্তাব জমা দেবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর, দুই ব্যাংককে তাদের একীভূতকরণের জন্য হাইকোর্টে একটি আবেদন জমা দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যেসব ব্যাংক আর্থিকভাবে সবল নয়, সরকারের সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি সেই ব্যাংকগুলিকে পরিচালনার অনুমতি দেয়, তাহলে এটি অর্থনীতি এবং জনগণের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদি পদ্মা ব্যাংক একীভূত হতে চায়, তাহলে দুই ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে মূল্যায়ন করা উচিত। একীভূত হওয়ার পর কোনো ব্যাংক আর কোনো ধরনের অভিযোগ করতে পারবে না।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত পদ্মা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ (এনপিএল) ছিল ৩ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, যা এর মোট ঋণের ৬১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৭২ দশমিক ৩ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞার কারণে পদ্মা ব্যাংক ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে সাড়ে তিন বছরের জন্য ঋণ দিতে পারেনি। এরপরেও পদ্মা ব্যাংক ২০২০ সালে ১৫১ কোটি টাকা ক্ষতি কমিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-এর প্রথম প্রান্তিকের শেষে, পদ্মা ব্যাংক ৩৮২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছিল, যা আগের প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ৩১০ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আবেদনটি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
ঢাকা/আমিনুল