ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘প্রত্যেক কোম্পানির উপর রিসার্চ থাকা দরকার’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৫ অক্টোবর ২০২১  
‘প্রত্যেক কোম্পানির উপর রিসার্চ থাকা দরকার’

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটি কোম্পানির উপর রিসার্চ থাকা দরকার। বিদেশে আমরা দেখি, প্রত্যেকটি কোম্পানির ওপর রিসার্চ প্রকাশ করা হয়। এ কাজটি মার্চেন্ট ব্যাংক ও বড় বড় ব্রোকারেজ হাউজগুলো করে থাকে। এ রিসার্চ করা খুবই জরুরি। ওই রিসার্চের কাগজটা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা স্টাডি করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ কাজটিও বিনিয়োগ শিক্ষার অংশ।’ 

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আয়োজিত ‘শেয়ারবাজারের উন্নয়নে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। আর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএমবিএ সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান।

এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএমবিএর প্রথম সহ-সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান। আর আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ডিবিএ সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সভাপতি হাসান ইমাম রুবেল।

সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ‘রিসার্চ করার বিষয়ে কিন্তু অবকাঠামো ও রেগুলেশন থাকতে হবে। পাশাপাশি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রিসার্চে যদি ভুল তথ্য থাকে বা জবাবদিহিতা না থাকে, তাহলে কিন্তু বিপজ্জনক পরিস্থিতি হতে পারে। তাই রিসার্চ গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ইদানিং এটা শুরু হয়েছে। তবে আমার মনে হয়, এটা আরও ব্যাপকভাবে করা দরকার।’ 

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, ‘বর্তমান শেয়ারবাজার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কারেকশন হয়। তারপরে আবার বাড়ে। এটা স্ট্যাবল বৃদ্ধি। এটি অর্থনীতি বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে। এটাও শিক্ষার ব্যাপার। কিন্তু অনেকেই সূচক বাড়তে দেখে না বুঝে মন্তব্য করেন। তারা সূচক বেড়ে গেছে দেখে ঝামেলা হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। আমরা সূচকে আটকে গেছি। কিন্তু সূচক ওতটা গুরুত্বপূর্ণ না। তবে একবারেই গুরুত্বপূর্ণ না, সেটা আমি বলবো না। তবে আমাদের দেখা উচিত অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ারবাজার কতটা উন্নতি হচ্ছে। জিডিপির সঙ্গে সূচকের বাড়াটা স্বাভাবিক।’ 

তিনি বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারের মূল্যসূচকটি যেনো হঠাৎ করে উপরে না চলে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধাপে ধাপে বাড়লে সমস্যা নেই। কিন্তু হঠাৎ বেড়ে গেলে ধস নামে। যেটা ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে হয়েছে। তখন সূচক শুধু বাড়তেই ছিল। কোনো কারেকশন হচ্ছিলো না। যে কারণে হঠাৎ করে ধস নামে। তাই বিনিয়োগ শিক্ষাটা খুবই দরকার। সেটা শুধু ব্যক্তি বিনিয়োগকারী না, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পেশাদারিত্ব আনতে হবে।’ 

শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা কাঠামোগত দুর্বলতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজারে যে পরিমাণ লেনদেন হয়, তার প্রায় ৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কম। কিন্তু অন্যান্য শেয়ারবাজারে পুরো উল্টা। ধরেন মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ, করাচি স্টক এক্সচেঞ্জসহ আমাদের অঞ্চলের বিভিন্ন স্টক এক্সচেঞ্জ। লন্ডন, নিউইয়র্কের মতো বড়দের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম।’ 

সালমান ফজলুর রহমান বলেন, ‘শেয়ারবাজারের বেসিক জিনিস না বুঝেও অনেকে এখানে বিনিয়োগে আসতে চায়। ধরেন মূল্য-আয় (পিই) অনুপাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও একটি শেয়ারের নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) কত বা শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কত ছিলো, গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড কি ছিলো, এগুলো মৌলভিত্তি তথ্য। এখন কেউ যদি উচ্চ পিইতে শেয়ার কিনেন, তবে হ্যাঁ কিনতে পারেন। উচ্চ পিইতে যে কিনবে না- এমনতো না। তবে জেনে-শুনে কিনতে হবে। হয়তো কোম্পানির এমন কোনো খবর আছে, যাতে করে ভবিষ্যতে ইপিএস বাড়বে এবং পিই কমে আসবে। এখন এই শিক্ষাটা কে দেবে। এক্ষেত্রে ব্রোকারদের সহযোগিতা করা উচিত।’ 

সালমান এফ রহমান আরো বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতকে শক্তিশালী করা দরকার। এবার ফান্ডগুলো ভালো রিটার্ন দিয়েছে। এই খাতটিকে শক্তিশালী করলে একজন বিনিয়োগকারীর যদি মার্কেটের সম্পর্কে ধারণা না থাকে, সেও ওখানে বিনিয়োগ করে রিটার্ন পাবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারের আরেকটি দুর্বলতা হচ্ছে বন্ড মার্কেট নেই। এটি খুবই দরকার। বাজারে দুই ধরনের বিনিয়োগকারী থাকে। যাদের একটি গ্রুপ ফিক্সড ইনকামের সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে চায়। অন্যান্য দেশে ইক্যুইটি মার্কেটের থেকে ৩-৪ গুণ বেশি বন্ড মার্কেট। তাই আমাদের বন্ড মার্কেটি ভাইব্রেন্ট করতে হবে।’ 

এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়