ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বৈশ্বিক সংকট দেশের বড় জন্য চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০২, ৯ জুন ২০২২   আপডেট: ১৬:৩৩, ৯ জুন ২০২২
বৈশ্বিক সংকট দেশের বড় জন্য চ্যালেঞ্জ: অর্থমন্ত্রী

ফাইল ছবি

আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে বৈশ্বিক সংকট ও বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত দুই বছরের অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল ঠিক তখনই মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর মাধ্যমে সৃষ্ট ও চলমান সংঘাতের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নানাবিধ বিরূপ প্রাাব পড়তে শুরু করেছে। করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের কারণে হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের শেষভাগ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়তে থাকে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারেল প্রতি ১১৩ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। অপরদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্য বিশ্ববাজারে অন্তত ১২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তেল-গ্যাসের পাশাপাশি বৈশ্বিক পণ্য বাজারে এ কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে (যেমন গম, ভুট্টা, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও রেয়ার আর্থ খনিজ) রাশিয়া ও ইউক্রেন গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী দেশ। ফলে, আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যেরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। পশ্চিমা দেশগুলো কর্তৃক আন্তর্জাতিক পেমেন্ট নেটওয়ার্ক সুইফট থেকে  রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করায় সার্বিকভাবে রাশিয়ার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সংকুচিত হয়ে আসছে, যা বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনকে ব্যাহত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে।

তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি ও খাদ্যদ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মে ২০২১ এর তুলনায় মে ২০২২ সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির হার প্রায় ৬৫ শতাংশ, ইউরিয়া সারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৪ শতাংশ, সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধির হার ২৯ শতাংশ, গমের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং চিনির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ শতাংশ। সে কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন,এফএও-এর তথ্য অনুসারে ২০২১ সনে বিশ্বব্যাপী কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২২ সালেও অব্যাহত থাকবে। আইএমএফ কর্তৃক এপ্রিল ২০২২ এর ওয়াল্ড ইকোনমিক আউটলুক-এ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী উন্নত অর্থনীতিসমূহে ২০২১ সালে সিপিআই মূল্যস্ফীতি ৩.১ শতাংশ ছিল যা ২০২২ সালে ৫.৭ শতাংশ হবে মর্মে প্রাক্কলন করেছে।  এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৭.৭ শতাংশে। অন্যদিকে, উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিসমূহে ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫.৯ শতাংশ, যা ২০২২ সালে অনেক বেড়ে ৮.৭ শতাংশ হবে মর্মে প্রাক্কলন করা হয়েছে।

আ হ ম কামাল বলেন, এ প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ইম্পোর্টেড ইনফ্লেশন হিসেবে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৯টি পণ্যের (জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল) একই পরিমাণ আমদানি করতে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এসব পণ্যের বাইরেও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মূল্য এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে অভ্যন্তরীণ বাজারে ইম্পোর্টেড ইনফ্লেশন-এর চাপ অনুভূত হচ্ছে। যা দেশের জন্য একটি অতিরিক্ত চাপ।

/হাসনাত/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়