ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সাঁওতাল বিদ্রোহ : মহাকাব্যের এক অগ্রন্থিত কাব্য

রিজভী রাইসুল জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১২, ১ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাঁওতাল বিদ্রোহ : মহাকাব্যের এক অগ্রন্থিত কাব্য

সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘটিত প্রতিবাদ। (ছবি : সংগৃহীত)

রিজভী রাইসুল জয় : সাঁওতাল বিদ্রোহ ব্রিটিশ শাসিত ভারতের ইতিহাসের এক অগ্নিঝড়া অধ্যায়। যে প্রকার শাসন, শোষণ এবং উৎপীড়ন থেকে পরাধীন জাতির চেতনায় স্বাধীনতার বীজ অঙ্কুরিত হতে থাকে ১৮৫৫ সালে সংঘটিত এই বিদ্রোহ সেই অত্যাচারের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এই বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘটিত প্রতিবাদ। বিদ্রোহের এই আগুন সে সময় বিহার, উড়িষ্যা এবং বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সাঁওতাল বিদ্রোহের তীব্রতা এবং ভয়াবহতায় ইংরেজ শাসনের ভিত কেঁপে উঠেছিল। এর মাত্রা এতটাই প্রবল হয়ে উঠেছিল যে, লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক মার্শাল ল’ জারি করেও এই বিদ্রোহ দমন করা যায়নি।

অসম যুদ্ধের ফলাফলস্বরূপ যুদ্ধে সাঁওতালদের পরাজয় হলেও, বৈদেশিক শাসন এবং দেশিও সামন্ত্রতান্ত্রিক শোষণের মূলৎপাটন করার লক্ষ্যে পরিচালিত এই বিদ্রোহ  ভারতবর্ষের মানুষের মনে যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আত্মনিয়ন্ত্রাধিকারের চেতনা জাগ্রত করেছিল, তারই ফলশ্রুতি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রাম।
নিষাদ জাতির অন্তর্ভুক্ত সাঁওতালদের আদি বাসভূমি যে ভারতবর্ষ তাতে নৃবিজ্ঞানীরা সন্দেহ পোষণ করেননি। বিখ্যাত ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায়ের মতে ১৭৯০ সাল থেকে সাঁওতালরা বাংলা-বিহার সীমান্তে আসতে শুরু করে। বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, বাঁকুড়া, পাকুর, পূর্ণিয়া অঞ্চলে অবস্থান করলেও, সবচেয়ে বেশি সাঁওতাল বসতি স্থাপন করে ভাগলপুরের দামিন-ই-কোতে।

বহু কষ্ট করে জঙ্গল কেটে শ্বাপদ-সংকুল দামিন-ই-কোতে তারা জনপদ গড়ে তুলেছিল। অতীতে যে মাটিতে মানব বিচরণ ছিল না, সেই মাটিতেই তারা ফলিয়েছিল সোনার ফসল। নিজেদের আলাদা এক জগৎ তৈরি করে নিতেও তারা সক্ষম হয়েছিল। যেখানে ছিল না কোনো মহাজন-জমিদার-দালাল শ্রেণীর মানুষ।

এই অঞ্চলের সমৃদ্ধির কথা ছড়িয়ে পড়লে দলে দলে সেখানে আগমন ঘটে ব্যবসায়ী ও মহাজন শ্রেণীর। তারা সাঁওতালদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান ধান, সরিষা ও অন্যান্য তৈলবীজ গরুগাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যেত। বিনিময়ে সাঁওতালদের দেয়া হতো সামান্য লবণ, কাপড়, টাকা-পয়সা অথবা তামাক। বিনিময়ের সময় সহজ সরল সাঁওতালদের

চরমভাবে ঠকানো হতো। চাল বা সামান্য কিছু নগদ অর্থের বিনিময়ে কখনও অসৎ উদ্দেশ্যে ঋণ দিয়ে সমস্ত জীবনের জন্য সাঁওতালদের ভাগ্যবিধাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতো মহাজনেরা। বাৎসরিক আদায়ের সময় মহাজনরা একটা বড়সড় পাথরে সিঁদুর মাখিয়ে ওজনের একক হিসেবে ব্যবহার করত। ফলে পাথুরে জমিতে সাঁওতালদের অশেষ পরিশ্রমে ফলানো ফসল, যা তারা প্রাণ দিয়ে রক্ষা করতো বন্য হাতি, শূকর এবং অন্যান্য জীবজন্তুর হাত থেকে, সেই ফসল অসহায়ের মতো তুলে দিতে হতো মহাজনের হাতে। তবু শোধ হতো না ঋণ। কেউ এই ফসল মহাজনের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করলে তার ভাগ্যে নেমে আসত আদালতের পরোয়ানা। পেয়াদার উপস্থিতিতে তখন নিজের সর্বনাশ দেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকত না ঋণগ্রস্ত সাঁওতালদের।

ঋণ দেয়ার সময় মহাজনরা যত টাকা ধার দিত, লিখিয়ে নিত তা থেকে অনেক বেশী এবং টাকা শোধের সময় ওই সুদ সমেত আসল টাকাকে মূল ধরে সুদ আদায় করতো। ফলে সব দিয়ে দেয়ার পরও শোধ হতো না মহাজনের ঋণ। তখন সাঁওতাল চাষি বাধ্য হতো নিজেকে বন্ধক দিতে এবং মহাজনের ক্রীতদাসে পরিণত হতে। বিনা পারিশ্রমিকে খাটতে খাটতে তার জীবন শেষ হয়ে যেতো। এভাবেই পরবর্তী বংশধরের জন্য উত্তরাধিকার হিসাবে সে তখন একটা জিনিসই রেখে যেতে পারত, তা হলো মহাজনের ঋণ। সেই ঋণ তার মৃত্যুর পর জমিদারদের চাতুর্যে বেড়ে কয়েক গুণ হয়ে যেত। ফলে বংশধরদেরও বাধ্য হয়েই উত্তরাধিকার সূত্রে মহাজনের ক্রীতদাস হয়ে থাকতে হতো।

এর সঙ্গে বাড়তি ছিল ইংরেজদের খাজনা। সাঁওতালদের চাষকৃত জমির উপরে ইংরেজদের নির্ধারিত খজনা ফি বছর বৃদ্ধি পেতে থাকে অবিশ্বাস্য হারে। ১৮৩৮ সালে যেখানে মোট খাজনা আদায় করা হয়েছিল ২ হাজার টাকা, সেখানে ১৮৫১ সালে খাজনার পরিমান বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ৯১৮ টাকা ১৩ আনা। অসহায় সাঁওতালদের জমির ওপর স্থানীও জমিদারদের লোলুপ দৃষ্টিও ছিল। তাদের জমি গ্রাস করার অন্যতম পন্থা ছিল খাজনা বাকি ফেলা। এই উদ্দেশ্যে তারা তাদের গরু, ছাগল, মহিষ, টাট্টু ঘোড়া এমনকি হাতির বাঁধন খুলে দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে দরিদ্র সাঁওতালদের ক্ষেতের পাকা ফসল নষ্ট করে ফেলত।

এই অমানবিকতার কোনো প্রতিকার সাঁওতালদের হাতে ছিল না। ইংরেজদের বিচারালয় তাদের নাগালের বাইরে ছিল। তাছাড়া দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে ন্যায় বিচার পাবার কোনো নিশ্চয়তাও ছিল না।

ঐতিহাসিক  কে কে দত্ত তাঁর ‘দি সান্তাল ইন্সারেকশান’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে এক জায়গায় লিখেছেন :

‘দুর্নীতিগ্রস্ত কোর্টের আমলা, মোক্তার, পিওন ও বরকন্দাজদের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না।  যদিও মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে ন্যায়বিচারের দেখা মিলত, কিন্তু ভয়ে সাঁওতালরা সেখান থেকে দূরে থাকতো। বাড়ির কাছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনস্ত দারোগা বা থানা পুলিশের ন্যায়বিচারের যে রূপ তারা দেখতে পেত তা মৃত্যুরই নামান্তর।’

কাজেই আদালতে সুবিচার লাভ সাঁওতালদের পক্ষে অসম্ভব ছিল। নিপীড়ন নিষ্পেষণের জালে আটকে যাওয়া এই সহজ সরল মানুষগুলোর আদতে মুক্তির কোনো পথ খোলা ছিল না। ফলে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টাস্বরূপ তারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

১৮৫৪ সালের শেষের দিকে দেখা যায় যে, দামিন-ই-কোর সাঁওতালরা বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। এ অস্থিরতার কারণ তাদের একটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। অবস্থাপন্ন সাঁওতালরা ঠিক করেছিল তারা হিন্দু মহাজনদের আর লাভের বখরা নিতে দেবে না। গরিব দিনমজুর সাঁওতালরা ঠিক করেছিল তারা আর ক্রীতদাস হবে না।

এইরূপ অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে বিশেষত মানুষ যখন এমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠে, তখন নেতার অভাব হয় না। সেই সময় এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদের মধ্য থেকেই ত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভূত হন বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই সিদু ও কানু। পরে চাঁদ ও ভৈরবও এই বিদ্রোহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তারা সাঁওতালদের বিদ্রোহের জন্য অনুপ্রাণিত ও সংগঠিত করেন।

১৮৫৫ সালের ৩০ জুন, ভাগনাডিহি গ্রামে আশপাশের চারশ’ গ্রামের দশ হাজার সাঁওতাল এক সমাবেশে উপস্থিত হয়। সিদু ইংরেজ ও জমিদার মহাজন কর্তৃক তাদের ওপর নির্মম নিপীড়নের করুণ কাহিনি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। সভায় উপস্থিত সাঁওতালেরা এ সময়  বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শপথ নেয়। তারা স্বপ্ন দেখতে থাকে স্বাধীনতার, নতুন এক সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার। এই সমাবেশ থেকে ইংরেজ সরকার, কমিশনার, দারোগা, ম্যাজিস্ট্রেট ও জমিদারদের নিকট চরমপত্র প্রেরণ করা হয়। দারোগা ও জমিদারদের নিকট ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দাবি করা হয়।

৩০ জুন প্রায় ৫০ হাজার সাঁওতাল বড়লাটের কাছে অভিযোগ পেশ করার উদ্দেশ্যে কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করে। এ অভিযানে সাঁওতালদের সঙ্গে যোগ দেয় অন্যান্য ধর্মের শোষিত, নিপীড়িত মেহনতি মানুষ। সাঁওতালদের এ সমবেত অভিযাত্রার কথা শুনে শোষক শ্রেণীর মহাজন জমিদাররা ভীত হয়ে ওঠে। তারা দারোগা মহেশলাল দত্তকে ঘুষ দিয়ে সিদু ও কানুকে গ্রেফতার করার জন্য প্ররোচিত করে। দারোগা সিদু ও কানুকে  ডাকাতির অভিযোগে গ্রেফতার করতে গেলে সাঁওতাল বিদ্রোহীরা বাঁধা দেয়। দারোগা

জোরপূর্বক সিদু, কানুকে গ্রেফতার করতে চাইলে বিদ্রোহীরা দারোগা মহেশলাল দত্ত, মহাজন মানিক মুদিসহ ১৯ জনকে হত্যা করে। কানু ঘোষণা দেন, ‘বিদ্রোহ শুরু হয়ে গেছে, এখন আর কোনো হাকিম নেই, ইংরেজ নেই, সরকার নেই। সাঁওতালদের রাজত্ব এসে গেছে।’

সাঁওতালরা বহু থানা, ইংরেজ সৈন্যদের ঘাঁটি, নীলকরদের কুঠি আক্রমণ ও ভস্মীভূত করে। অগণিত জমিদারবাড়ি লুণ্ঠন ও জমিদারদের হত্যা করা হয়। সমগ্র বিহার, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সাঁওতালরা আধিপত্য বিস্তার করে। ইংরেজ সরকার এ বিদ্রোহের প্রচণ্ডতায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।

অবশেষে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে ১৫হাজার সৈন্য, অশ্বারোহী বাহিনী, কামান বাহিনী ও হস্তী বাহিনী দ্বারা বিদ্রোহ দমনে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়। প্রচণ্ড বর্বরতায় উন্মত্ত হাতি ছেড়ে দেয়া হয় সাঁওতাল নারী ও শিশুদের মধ্যে। কামান ও বন্দুকের সামনে টিকতে না পেরে, বিদ্রোহীরা গভীর জঙ্গলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

৩০ হাজার সাঁওতাল বিদ্রোহীকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে ইংরেজ সম্মিলিত বাহিনী। ভাগলপুরে এক ভয়াবহ বন্দুক যুদ্ধে বিদ্রোহের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক চাঁদ ও ভৈরব নিহত হন। এরপর সিদু ও কানু ধরা পড়ে যায়। সিদুকে সঙ্গে সঙ্গেই হত্যা করা হলেও, কানুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। এক সময় নেতৃত্বহীনতায় স্তিমিত হয়ে আসে এই বিদ্রোহ।

সাঁওতাল বিদ্রোহ পথ দেখিয়েছিল ভারতবাসীকে। এই সংগ্রাম জয়ের দেখা না পেলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয়নি। এই সংগ্রাম ভারতবর্ষের কৃষক সংগ্রামের ঐতিহ্যকে আরও উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত করেছে। বিদ্রোহীদের আত্মত্যাগ ও বীরত্বের কাহিনি প্রেরণা যুগিয়েছে ভারতবর্ষের পরবর্তী সকল স্বাধীকার আন্দোলনে। ফাঁসির মঞ্চে কানুর দৃপ্ত  উচ্চারণ ছিল,  ‘আমি আবার ফিরে আসব, সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলব।’

বিজয়, বাদল, দীনেশ, ভগত সিং, ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্যসেন তো এই সিদু কানুদেরই উত্তরসুরি। সাঁওতাল বিদ্রোহ দেখিয়েছে মুক্তির সংগ্রাম শেষ হয়ে যায় না। মানুষ পৃথিবীতে যতদিন থাকবে মুক্তির সংগ্রাম চলবে ততদিন।

আজও অর্থনৈতিক শোষণের পাশাপাশি সামাজিক শোষণ, বঞ্চনা ও অস্পৃশ্যতার শিকার এ দেশের আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠী। নানা সমস্যায় জর্জড়িত তারা। জমি বেদখল, সহিংসতা, মিথ্যা মামলা, জাল দলিল, জাতিগত বৈষম্য, হয়রানি ইত্যাদি তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে। তারা ভীষণভাবে সঙ্কটাপন্ন। তাদের ভাষা বিপন্ন। এসব সমাধানে অদ্যাবধি তেমন আন্তরিক ও জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি ব্যক্তি কিংবা সরকারিভাবে। তারা কী চায়? তারা কেন স্বাধীন রাষ্ট্রে এধরনের অবহেলার শিকার বোঝার চেষ্টা করেনি কেউ। রাষ্ট্রের মানুষ হয়েও তারা যেন এ রাষ্ট্রের কেউ নয়।

অধিপতিশীল জ্ঞানকাঠামোয় সিদু-কানুদের আত্মত্যাগের ইতিহাস সেভাবে উচ্চারিত হয় না। তাতে কী আসে যায়? জীবন যেখানে দ্রোহের প্রতিশব্দ, মৃত্যু সেখানে শেষ কথা নয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুলাই ২০১৪/তাপস রায়

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়