ঢাকা     মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

কণ্ঠশিল্পী নিজাম সরকার মৃত্যু পথযাত্রী

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কণ্ঠশিল্পী নিজাম সরকার মৃত্যু পথযাত্রী

দুই সন্তানসহ কণ্ঠশিল্পী নিজাম সরকার

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : গীতিকার, সুরকার ও কন্ঠশিল্পী মো. নিজাম সরকার এখন মৃত্যু পথযাত্রী।তার দু’টি কিডনিই এখন বিকল। ক্রমশই দুর্বল হয়ে পড়ছেন তিনি। দ্রুত কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট জরুরী তার।

কন্ঠশিল্পী নিজাম সরকারের জন্ম নেত্রকোণা জেলায় হলেও স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে গত ২২ বছর ধরে কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায় শ্বশুর বাড়িতে বাস করছেন। বয়স মাত্র ৫২ বছর। এখন আর আগের মতো একাডেমিতে গিয়ে বা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে গান শেখাতে পারেন না। আর্থিক অক্ষমতার জন্য ঠিকমত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

আক্ষেপ করে শিল্পী নিজাম সরকার বলেন, ‘সারা জীবন গানের পিছনেই ছুটেছি, গানকেই ভালোবেসেছি।  জীবনে কখনো টাকা পয়সা রোজগার করে বিত্তবান হওয়ার পিছনে ছুটিনি। আজ পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনের শেষ সময়টুকু কাটাতে হচ্ছে। নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছি না। মেয়ের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। কখনো ভাবিনি এভাবে আমাকে নিদারুণ কস্টে জীবনের শেষ সময়টুকু পাড়ি দিতে হবে ।’

দেশাত্মবোধক, আধুনিক, ফোক, হামদ না’তসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪০০ এর মতো গান রচনা করেছেন। একই সাথে নিজের রচিত এ সকল গানে সুর ও কন্ঠ দিয়েছেন। নিজাম সরকার রচিত ও সুর করা জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘মুজিব তুমি ছিলে বিশ্বাসে অটল’, ‘আমার এ জীবন থেকে ঝরে যাবে দিন’, ‘তুমি কি দোষে গিয়াছো বন্ধুরে’, ‘ওরে ভাই সুবল, কেমন আছে রাধা বল’, ‘আমার আগুন জ্বলে মনে’, ‘বাঁশির সুরে মনোহরে শুনিব সে নিরালা’, ‘রহম করো আল্লাহ তুমি আমার এ ঘোর নিদানে’, ‘জিকিরে আমাদের দূর করে দাও মনের এ কালিমা আল্লাহ’, ‘ধন্য ধন্য বলি ধন্য মা আমিনার কোল, শান্তির বাণী নিয়ে এলেন মোহাম্মদ রাসুল’ ইত্যাদি।

তার বাবা আলী হোসেন সরকার ছিলেন খ্যাত বাউল শিল্পী, মা সায়েদুন্নেছা সরকারও ছিলেন গীতিকার ও সুরকার। গানের প্রতি তার গভীর অনুরাগ তিনি মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়েছিলেন। তাই অন্য কোন পেশায় না গিয়ে গানকেই সঙ্গী করেছেন সারাটি জীবন। একসময় শিক্ষকতা করেছেন ঢাকার রোমান্স ললিতকলা একাডেমিতে। বাড়িতে বাড়িতে যেয়েও গানের শিক্ষকতা করেছেন।

মেয়ে জেবুন্নেছা সরকার নিঝুম গুরুদয়াল সরকারি কলেজে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে অনার্স ১ম বর্ষে এবং ছেলে মুকিতুর রহমান নীরব নরসিংদীতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত। বর্তমানে তিনি ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি শঙ্কিত।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপসচিব তরফদার মো: আক্তার জামীল জানান, শিল্পীর অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিল্পী নিজাম সরকারের চিকিৎসার্থে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাসও দেন তিনি। ‘সুখ পেলাম দু’এক কেজি, দু:খ পেলাম হাজার টন’ গানের কলিটি খুবই মনে পড়ে তার। তিনি এ গুণী শিল্পীর জীবন রক্ষার্থে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান।




রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/১৩ জুন ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়