ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

টপলেস ফটোশুট বদলে দেয় মমতা কুলকার্নির জীবন

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৪, ৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
টপলেস ফটোশুট বদলে দেয় মমতা কুলকার্নির জীবন

মমতা কুলকার্নি

শোবিজ অঙ্গনের শিল্পীদের কাছে বিতর্ক কখনো আশীর্বাদ আবার কখনো অভিশাপ। বিতর্কিত ঘটনার মাধ্যমে আলোচিত হয়ে কেউ ক্যারিয়ার গড়েছেন। আবার কারো ক্যারিয়ার ধ্বংসও হয়েছে। বলিউড অভিনেত্রী মমতা কুলকার্নি এমন একজন তারকা। একটি টপলেস ফটোশুট তার অভিনয় ক্যারিয়ারে পুরো পাল্টে দেয়। রাতারাতি আলোচনায় আসেন এই অভিনেত্রী।

মধ্যবিত্ত মারাঠা পরিবারে জন্ম নেওয়া মমতা কুলকার্নি স্বপ্ন দেখতেন বড় অভিনেত্রী হবেন। কিন্তু লেখাপড়া শেখেননি। ইংরেজিও ঠিকঠাক বলতে পারেন না। এছাড়া বলিউডে তার কোনো জানা শোনাও ছিল না। কিন্তু তারপরও ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তিরাঙ্গা’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান। সিনেমাটিতে তার চরিত্র খুবই স্বল্প সময়ের ছিল। ওতটুকু সময়েই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ‘অশান্ত’, ‘আশিক আওয়ারা’, ‘ওয়াক্ত হামারা হ্যায়’ সিনেমায় অভিনয় করেন। সিনেমাগুলো সেই সময়ের উঠতি তারকা অক্ষয় কুমার, সাইফ আলী খান, সুনীল শেঠির সঙ্গে পর্দায় হাজির হন তিনি। বক্স অফিসে সিনেমাগুলো মাঝারি ব্যবসা করে। এতে নায়কদের ক্যারিয়ারে সুবিধা হলেও মমতা বুঝেছিলেন তাকে আরো কঠিন পথ পারি দিতে হবে।

এরই মধ্যে ‘ফিল্মফেয়ার ফেস অব দি ইয়ার’ অ্যাওয়ার্ড পান মমতা। এরপর রাকেশ রোশান, এন চন্দ্র, সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার মতো প্রযোজকরা আমির খান, সালমান খান, গোবিন্দর বিপরীতে তাকে সিনেমায় নেওয়ার জন্য আলোচনা করেন। তারপরও মমতা খুশি ছিলেন না। কারণ সবকিছু অনেক মন্থর গতিতে চলছিল। এই অভিনেত্রী বুঝতে পারছিলেন, যদি তার সিনেমা না চলে তাহলে তাকে ইন্ডাস্ট্রি ছাড়তে হবে এবং তিনি কোনো ভালো চরিত্রের জন্য প্রস্তাবও পাবেন না।

এদিকে ফটোগ্রাফার জায়েস শেঠ একটি স্বনামধন্য ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের জন্য আবেদনময়ী এবং সাহসী ফটোশুটের পরিকল্পনা করছিলেন। এজন্য সরল কিন্তু আবেদনময়ী চেহারার একজন অভিনেত্রী চাইছিলেন। প্রাথমিকভাবে মাধুরী দীক্ষিত ও জুহি চাওলাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তারা এ প্রস্তাবে রাজি হননি। পরবর্তী সময়ে মমতা কুলকার্নিকে বেছে নেওয়া হয়।

পকিল্পনা শুনে প্রথমে ভীষণ অবাক হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। কারণ এই ফটোশুটে তাকে অর্ধনগ্ন হতে হবে। তবে ফটোগ্রাফার মমতাকে আশ্বস্ত করেন, রুচিশীলভাবেই ছবিটি তোলা হবে। কিন্তু তারপরও দ্বিধায় ভুগছিলেন মমতা। ওই সময়ে অভিনেত্রী ডেমি মুরের একই রকম একটি ছবি দেখে রাজি হন। তবে শর্ত দেন— ম্যাগাজিন প্রচ্ছদের ছবিটি তিনি নির্বাচন করবেন। তার শর্ত মেনে শেষ পর্যন্ত ফটোশুট সম্পন্ন হয়।

১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যাগাজিনটি বাজারে আসে। রীতিমতো ঝড় তোলে এটি। দেদারছে বিক্রি হতে থাকে। ২০ রুপি মূ্ল্যের এই ম্যাগাজিন কালো বাজারে ১০০ রুপিতেও বিক্রি হয়।

জনগণের কাছে এই ম্যাগাজিন সাড়া ফেললেও মমতার এই সাহসী সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই। যে সকল নামি প্রযোজকরা তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করছিলেন তারা সরে যেতে থাকেন। এমনকি এই ফটোশুটের আগে তার সেক্রেটারি আসিফ মার্চেন্টের সঙ্গেও আলোচনা করননি মমতা। তার মা-বাবাও বিষয়টি জানতেন না। সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু অর্ধনগ্ন  হয়ে শুধু জিন্স পরে মমতার এই ফটোশুট তার পরিবার মেনে নিতে পারেনি। ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা মনে করেন, তার সেক্রেটারির প্ররোচনাতেই কাজটি করেছেন মমতা। কিন্তু এই অভিনেত্রী জানান, নিজের সিদ্ধান্তেই কাজটি করেছেন তিনি। মমতা তার এই সিদ্ধান্তের জন্য নিজেকে অপরাধী ভাবতে থাকেন এবং বুঝতে পারেন তার সিদ্ধান্তটি বোকামি ছিল।

এদিকে মমতার এই ছবি প্রকাশের পর তার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ হয়। এখানেই শেষ নয়, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়। যদিও তিনি তৎক্ষণাত জামিন পেয়ে যান। তবে মামলাটি দীর্ঘদিন চলতে থাকে।

মমতা যখন এ বিষয়ে জনসম্মুখে ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবছিলেন, তখনই ঘটল অন্য ঘটনা। মাধুরী দীক্ষিতের সেক্রেটারি রিংকু রাকেশ নাথ মাধুরীর একটি সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে মমতাকে আমন্ত্রণ করেন। যদিও সেই সময় এই অভিনেত্রী এ ধরনের আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তবে এই অনুষ্ঠানে যাবেন বলে মনোস্থির করেন। তিনি অনুষ্ঠানে গিয়ে অন্ধকারের মধ্যে শেষ সারিতে বসেন। কারণ জনসম্মুখে আসতে ভয় পাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ মমতাকে মঞ্চে হাজির হওয়ার অনুরোধ করেন রিংকু রাকেশ নাথ। ভয়ে ভয়ে মঞ্চে এগুতো থাকেন মমতা। এই অভিনেত্রীকে অবাক করে দিয়ে অডিটোরিয়ামে উপস্থিত যুবকরা তার দিকে গোলাপ ফুল ছুড়তে থাকে। আর চিৎকার করতে থাকে, ‘মমতা আমরা তোমাকে ভালোবাসি।’

তিরস্কারের পরিবর্তে এমন পুরস্কার পেয়ে অবাক হয়ে যান মমতা। সেই সন্ধ্যা হয়ে ওঠে মমতাময়। এই অভিনেত্রীও বুঝতে পারেন, কিছু লোক তার নিন্দা করলেও দর্শক ও ভক্তরা তার সাথেই আছেন। আর সেই ঘটনাই মমতার ধারণা পাল্টে দেয়। নিজেকে ‘সেক্স সিম্বল’ হিসেবে মেলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সহজ, সরল মেয়ে থেকে রাতারাতি তিনি হয়ে ওঠেন আবেদনময়ী। নেতিবাচক কোনো মন্তব্যই তিনি গায়ে মাখতেন না। তার সাক্ষাৎকারগুলো দিন দিন আরো সাহসী হতে থাকে। আবেদনময়ী দেখানো এবং সাহসী হওয়া তার মূল মন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তী সময়ে তাকে সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ করতে প্রযোজকরাও লাইন ধরতে থাকেন।

ঢাকা/মারুফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়