ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হারিয়ে যাওয়া তারা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:৪৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
হারিয়ে যাওয়া তারা

ছবির কোলাজ

দেখতে দেখতে বিদায় নিচ্ছে আরো একটি বছর। সময়ের পাতায় নতুন স্বপ্ন, নতুন মুখের আগমনের পাশাপাশি বছরটি নক্ষত্র পতনেরও সাক্ষী। শোবিজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বহু গুণী মানুষ চিরদিনের জন্য থেমে গেছেন, রেখে গেছেন শূন্যতা, স্মৃতি আর অবিস্মরণীয় সব কাজ।  

যাদের অক্লান্ত শ্রম, সৃজনশীলতা ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ হয়েছে দেশের শিল্প-সংস্কৃতি। নিয়তির অমোঘ নিয়মে তারা পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। এই শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। বছরজুড়ে হারিয়ে যাওয়া এসব তারকাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন— 

আরো পড়ুন:

অঞ্জনা রহমান: চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি না ফেরার দেশে চলে যান প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করা কিংবদন্তি অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা—তার অভিনয়জীবন ছিল বহুমাত্রিক ও আন্তর্জাতিক। বাংলাদেশ ছাড়াও ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক সম্মাননা, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কারে ভূষিত এই গুণী শিল্পীর মৃত্যু দিয়ে যেন শুরু হয় বিদায়ের মিছিল। 

প্রবীর মিত্র: অঞ্জনা রহমানের শোক কাটতে না কাটতেই ৫ জানুয়ারি ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন রুপালি পর্দার ‘নবাব’ খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র। তার আসল নাম মো. হাসান ইমাম। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে অসংখ্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন। ৬ জানুয়ারি, জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

সন্‌জীদা খাতুন: চলতি বছরের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন হারায় এক বাতিঘরকে। সংগীতজ্ঞ, ছায়ানটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, ভাষা আন্দোলনের অগ্রণী কর্মী সন্‌জীদা খাতুন চলে যান না ফেরার দেশে। দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন এই প্রথিতযশা ব্যক্তিত্ব। বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার সঙ্গে তার নাম চিরঅম্লান। 

গুলশান আরা আহমেদ: গত ১৫ এপ্রিল, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন অভিনেত্রী গুলশান আরা আহমেদ। ‘হৃদয়ের কথা’, ‘ডাক্তার বাড়ি’, ‘লাল শাড়ি’সহ একাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত ছিলেন জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’-এর ‘পলি চেয়ারম্যান’ চরিত্রে। সবশেষ সিয়াম আহমেদের ‘জংলি’ সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি।

মুস্তাফা জামান আব্বাসী: চলতি বছরের ১০ মে দেশের সংগীতাঙ্গন হারায় প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী, গবেষক ও লেখক মুস্তাফা জামান আব্বাসীকে। ৮৭ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ফোক মিউজিক রিসার্চ গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া ও নজরুলগীতিকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বমঞ্চে।

সাঙ্কু পাঞ্জা: ২৯ মে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে পরাজিত হন ঢাকাই চলচ্চিত্রের খল অভিনেতা সাঙ্কু পাঞ্জা। বহু চলচ্চিত্রে শক্তিশালী নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকের মনে আলাদা ছাপ রেখে গেছেন।

তানিন সুবহা: মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ১০ জুন ক্লিনিক্যালি ডেথ ঘোষণা করা হয় চিত্রনায়িকা তানিন সুবহাকে। হৃদরোগজনিত জটিলতায় লাইফ সাপোর্টে থাকা এই অভিনেত্রীর মৃত্যু চলচ্চিত্র অঙ্গনে নেমে আনে শোকের ছায়া।

জীনাত রেহানা: গত ২ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান কালজয়ী গান ‘সাগরের তীর থেকে’-এর কণ্ঠশিল্পী জীনাত রেহানা। নিয়মিত গানে না থাকলেও তার গাওয়া গানগুলো আজও বাঙালির সংগীতচেতনায় উজ্জ্বল।

এ কে রাতুল: ২৭ জুলাই হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর ভোকালিস্ট ও বেজিস্ট এ কে রাতুল। সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবেও সমানভাবে পরিচিত ছিলেন তিনি। প্রয়াত নায়ক জসীমের পুত্র হিসেবেও পরিচিত এই শিল্পীর অকাল মৃত্যু নাড়া দেয় সংগীতাঙ্গনকে।

জাহানারা ভূঁইয়া: ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন অভিনেত্রী, গীতিকার ও নির্মাতা জাহানারা ভূঁইয়া। সত্তর ও আশির দশকের এই অভিনেত্রী ছিলেন দেশের অন্যতম নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা।

ফরিদা পারভীন: লালনসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মারা যান তিনি। তার বিদায়ে শূন্য হয়ে পড়ে দেশের সংগীতাঙ্গন। ‘মিলন হবে কত দিনে’, ‘অচিন পাখি’—তার কণ্ঠে লালনের গান বাঙালির আত্মার অংশ হয়ে আছে। লালনগীতিকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দিতে তার অবদান অনস্বীকার্য।

শেখ নজরুল ইসলাম: মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে গত ২২ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন নির্মাতা শেখ নজরুল ইসলাম। নাটোরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

জেনস সুমন: চলতি বছরের শেষ লগ্নে বিদায়ের তালিকায় যোগ হয় সংগীতশিল্পী জেনস সুমনের নাম। ২৮ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। ‘একটা চাদর হবে’ গান দিয়ে আলোচনায় আসা এই শিল্পী উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান।

চলতি বছরটি শুধু ক্যালেন্ডারের পাতায় নয়, শোবিজ ও সাংস্কৃতি অঙ্গনের ইতিহাসে লেখা থাকবে বেদনার অক্ষরে। যারা চলে গেছেন, তারা আর ফিরবেন না। কিন্তু তাদের সৃষ্টি, অবদান আর স্মৃতি চিরকাল বেঁচে থাকবে শিল্প-সংস্কৃতির হৃদয়ে।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়