ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মার্টিন লুথার কিং-য়ের ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ খ্যাত বক্তব্যে কী ছিল

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১১:৪৯, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
মার্টিন লুথার কিং-য়ের ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম’ খ্যাত বক্তব্যে কী ছিল

মার্টিন লুথার কিং

১৯৬০-এর দশক ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বর্ণবাদবিরোধী নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সবচেয়ে উত্তাল সময়। তখন আইনগতভাবে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও বাস্তবে আফ্রিকান–আমেরিকানরা তখনও—ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তারা শিক্ষা ও চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার ছিলেন। আফ্রিকান–আমেরিকানদের বাসস্থান, গণপরিবহন ও জনপরিসরে আলাদা করে রাখা হয়েছিলো। তারা পুলিশি নির্যাতন ও সহিংসতার মুখোমুখি হতেন। এই প্রেক্ষাপটে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সমতা ও নাগরিক অধিকারের দাবি তুলে ধরেন। ২৮ আগস্ট ১৯৬৩ তারিখে  লিঙ্কন মেমোরিয়াল, ওয়াশিংটন ডিসিতে  প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের সমাবেশ তিনি ‘I Have a Dream’  খ্যাত সেই বক্তব্য প্রদান করেন।

মার্টিন লুথার কিং-য়ের বক্তব্যে যা ছিলো

আরো পড়ুন:

‘‘আজ তোমাদের সঙ্গে একত্র হতে পেরে আমি গভীর আনন্দ অনুভব করছি—কারণ আমরা এমন এক সমাবেশে দাঁড়িয়ে আছি, যা একদিন আমাদের জাতির ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য সংঘটিত সর্বশ্রেষ্ঠ গণজমায়েত হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

একশ বছর আগে, একজন মহান আমেরিকান—যার প্রতীকী ছায়ার নিচে আমরা আজ দাঁড়িয়ে আছি, তিনি—মুক্তির ঘোষণাপত্র এ স্বাক্ষর করেছিলেন। এই ঐতিহাসিক ঘোষণাটি ছিল লক্ষ লক্ষ নিপীড়িত কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্য আশার দীপ্ত শিখা। এটি দাসত্বের দীর্ঘ, অন্ধকার রাতের শেষে নতুন সকালের আলো হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু দুঃখজনক সত্য হলো—একশ বছর পরেও কৃষ্ণাঙ্গ মানুষ আজও মুক্ত নয়। একশ বছর পরেও তাদের জীবন বৈষম্য ও বর্ণবিভেদের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তারা বসবাস করছে দারিদ্র্যের এক নিঃসঙ্গ দ্বীপে, অথচ চারদিকে ছড়িয়ে আছে সমৃদ্ধির বিশাল সাগর। নিজেদের জন্মভূমিতেই তারা আজও অচেনা, নির্বাসিত মানুষ। আর এই লজ্জাজনক বাস্তবতাকেই সামনে আনতেই আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি।

আজ এমন একটি চেক ভাঙাতে এসেছি যাতে স্বাক্ষর করেছিলেন প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতারা। তারা সংবিধান ও  ঘোষণাপত্রে লিখে স্বাক্ষর করেছিলেন—কালো-সাদা নির্বিশেষে সব মানুষের জন্য জীবন, স্বাধীনতা ও সুখের সন্ধানের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে—আমেরিকা সেই চেকে আমাদের নামে ‘অপর্যাপ্ত তহবিল’ লিখে ফেরত দিয়েছে। তারপরেও আমরা বিশ্বাস করি না যে ন্যায়ের ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা বিশ্বাস করি না যে এই দেশের সুযোগের ভাণ্ডার শূন্য। তাই আমরা এসেছি এই চেক নগদ করতে—যাতে আমরা ন্যায়ের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার সম্পদ হাতে পাই।

আমাদের সংগ্রাম চিরকালই চলবে মর্যাদা ও শৃঙ্খলার উচ্চভূমিতে। আমরা আমাদের ন্যায়সংগত প্রতিবাদকে কখনোই হিংস্রতায় পরিণত হতে দেবো না। আমাদের আন্দোলন যেন তিক্ততা বা ঘৃণার পথে না যায়—সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ আজ এখানে উপস্থিত অনেক শ্বেতাঙ্গ ভাই বুঝে গেছেন—তাদের ভবিষ্যৎ আমাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে অটুটভাবে জড়িত।

আমরা একা একা এগোতে পারি না। সবাইকে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। আর যখন আমরা চলবো, তখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকতে হবে—আমরা আর পেছনে ফিরবো না।

বন্ধুগণ, আজ ও আগামী দিনে আমরা যতই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হই না কেন—আমার এখনও একটি স্বপ্ন আছে। এই স্বপ্ন আমেরিকার গভীরতম আদর্শে প্রোথিত। এই স্বপ্ন ন্যায়, সমতা এবং মানবিক মর্যাদার স্বপ্ন।’’

সূত্র: গ্লাইডারম্যান

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়