ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

২০০ টাকার ব্যবসায় রাখীর মাসিক আয় দশ হাজার  

মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২১  
২০০ টাকার ব্যবসায় রাখীর মাসিক আয় দশ হাজার  

মেহজাবীন রাখী, জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফেনীতে। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান রাখী। ফেনী সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। বর্তমানে রাখী ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স) ও ডিএসবির (ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ) মডারেটর হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।   

পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একজন দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগের নাম ‘Rup's Heaven’। তিনি একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। তার পণ্যের মধ্যে হাতে তৈরি গহনা ও দেশি শাড়ি অন্যতম। উদ্যোক্তার বাইরে সাংস্কৃতিক কর্মী (আবৃত্তি শিল্পী, উপস্থাপিকা) ও সংগঠকের কাজও করেন রাখী। তিনি তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডিতে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতি সিনথিয়া।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা নিশ্চয়ই সহজ ছিল না। শুরুর দিকের গল্পটা যদি বলতেন। 

মেহজাবীন রাখী: মায়ের অনুপ্রেরণায় নিজের শখের জায়গা এখন ক্যারিয়ার হয়ে গেছে। শুরুর দিকে মূলধন কম ছিল, যেহেতু শিক্ষার্থী ছিলাম। বাবা-মায়ের সাপোর্ট ছিল কিন্তু সামাজিকভাবে অনেক বাঁধা ছিল, যেমনটা হয় সচরাচর। ২০১৭ এর ২৪ জুলাই স্বল্প পরিসরে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে শুরু, এরপর সে বছর নভেম্বরে হঠাৎ একটি আউটলেট দেই, যা একদম ভুল সিদ্ধান্ত ছিল পরে বুঝতে পেরেছিলাম। কেননা আমার মা-বাবা দুজনে চাকরিজীবী। ছোটবোনকে দেখাশোনা, দিনের রান্নার দায়িত্ব, পড়ালেখা, অনলাইন কাস্টমার, প্রডাক্ট রেডি করা, হ্যান্ডমেইড প্রডাক্ট প্যাকেজিং, ডেলিভারি সব আমি একা করতাম, কোনো সহযোগী ছিল না। আউটলেট দেওয়ার পর সব একসঙ্গে সামলাতে না পেরে দুই মাসের মাথায় বন্ধ করে দিতে হয়।  এতে প্রায় দুই লাখ টাকা লোকসান হয়। এরপর শুধু অনলাইনকে বেইজ করে কাজ করতে শুরু করি আবার।

রাইজিংবিডি: কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

মেহজাবীন রাখী: হাতে তৈরি গহনা ও দেশি শাড়ি। এর মধ্যে মেটালসহ বিভিন্ন ধাতুর লকেট, চার্ম, বিডস, পাথরকে সংযুক্ত করে নিজস্ব নকশায় গহনা তৈরি করি আমি নিজে। আর শাড়ির মধ্যে টাঙাইল তাঁত নিয়ে কাজ করছি।

রাইজিংবিডি: ঠিক কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা থেকে এমন পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা ছিল?

মেহজাবীন রাখী: নিজের সাজগোজের প্রতি ভালো লাগা থেকে সেটি নিয়ে শুরু করা। আর শাড়ি নিয়ে আগে করলেও খুব সিরিয়াসলি করিনি। কিন্তু ২০২০ সালের জুলাই মাসে শ্রদ্ধেয় রাজিব ভাইয়ার পরামর্শে আবার নতুন করে দেশি শাড়ি সংযোজিত করেছি গহনার পাশাপাশি।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইন কেন্দ্রিক, নাকি অন্য কোনো উপায়ে ছিল?

মেহজাবীন রাখী: প্রথমে অনলাইন অর্থাৎ ফেসবুক গ্রুপভিত্তিক, পরবর্তী সময়ে এর পাশাপাশি পেজভিত্তিক করি। এরপর আউটলেট দিয়ে দুমাস পর বন্ধ করে দেই এবং তখন থেকে এখন পর্যন্ত অনলাইনেই রয়েছে।

রাইজিংবিডি: কাজ করতে গিয়ে কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন?

মেহজাবীন রাখী: বহুবার। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাস্টমার হয়রানি করেছেন, বুক করে রেখে পেমেন্ট দেরিতে করেন, প্রডাক্ট নেন না ডিউ টাইমে। এছাড়া কুরিয়ার কোম্পানিগুলোর ভুলের দায়ে অনেকবার পণ্য নষ্ট হয়েছে, হারিয়ে গেছে, এর ফল মাথা পেতে হয়েছে আমাকে, লসও গুণতে হয়েছে। তবুও আমি বলবো, বাঁধা-চ্যালেঞ্জ জীবনের অংশ ও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।

রাইজিংবিডি: নতুন উদ্যোক্তারা এই পেশায় আসতে চাইলে, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

মেহজাবীন রাখী: যে পণ্য নিয়ে কাজ করতে চান, সেটি নিয়ে নিজে জানুন ও অন্যকে জানানোর মতো করে শিখুন সে সম্পর্কে। উদ্যোগ শখের নয়, কাজের জায়গা। তাই এটিকে নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার সাহস ও আগ্রহ থাকতে হবে। টেকনিক্যাল নলেজ এবং আইটি সেক্টরের টুকটাক অভিজ্ঞতা থাকা ভালো। ধৈর্য, কষ্ট করার মানসিকতা এবং সততা খুব প্রয়োজন। আর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে শান্ত রাখা ও প্রতিদিন সময় দেওয়া।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল? 

মেহজাবীন রাখী: এক্ষেত্রে দুইজন মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রথমত, আমার মা শাহনাজ বেগম, যিনি নিজে একজন সরকারি চাকরিজীবী। মায়ের অনুপ্রেরণা এবং সাপোর্ট সবসময় ছিল সঙ্গে। দ্বিতীয়ত, অবশ্যই শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ ভাইয়া, ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট এবং সার্চ ইংলিশের ফাউন্ডার। আমার উদ্যোক্তা জীবন ২০১৭ তে শুরু হলেও এটির প্রায় সব কিছুই ভুল তথ্যের ওপর ছিল, যা গত এক বছরে পুনর্জীবন পেয়েছে ভাইয়ার পরামর্শে। পাশাপাশি উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম ও ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মের প্রতি ধন্যবাদ জানাতে চাই আমার উদ্যোগে ভূমিকা রাখার জন্য।

রাইজিংবিডি: বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনার ব্যবসা নিয়ে ভবিষ্যতে কতদূর যেতে চান এবং পরিকল্পনা কী? 

মেহজাবীন রাখী: দেশিপণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে সুনামের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। এটির ধারাবাহিকতায় প্রতিটি দেশিপণ্য এক সময় প্রচুর চাহিদা এবং খ্যাতির অংশ হবে। আমি চাই, দেশি গহনা ও দেশি শাড়ির বাজার সমৃদ্ধ হোক, বিয়ের মতো উৎসবগুলোতে এটির ব্যবহার বাড়ুক। আমার পরিকল্পনা আপাতত নিজেকে তৈরি করা। দেশিপণ্য নিয়ে রূপ’স হ্যাভেন কাজ করছে, ভবিষ্যতেও করে যাবে ও এটির নতুনত্ব বাড়াতে চেষ্টা করবো।

রাইজিংবিডি: আপনার উদ্যোগ রুপস হ্যাভেনের সফলতার কথা জানতে চাই। 

মেহজাবীন রাখী: রূপ’স হ্যাভেনের সফলতার গল্প খুব ছোট। কারণ, এটি মাত্র হাঁটতে শিখেছে৷ অনেক পথ বাকি আমি মনে করি। দেশের প্রায় ৩০টির মতো জেলায় গিয়েছে এর পণ্য। দেশের বাইরে গিয়েছে পাঁচবার।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কত দিন ধরে এবং রেভিনিউ কেমন? 

মেহজাবীন রাখী: ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই থেকে শুরু ও বর্তমানে চলমান। রেভিনিউ নিয়ে আমি সন্তুষ্ট, তবে আরো সময় দিতে হবে। 

রাইজিংবিডি: আনুমানিক কত টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন ও মূলধন কেমন দাঁড়িয়েছে?

মেহজাবীন রাখী: ২০০ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন মাসিক গড়ে সেটি ১০ হাজারও হয়।

রাইজিংবিডি: নিজের আরো যদি কিছু বলার থাকে, তাহলে বলতে পারেন। 

মেহজাবীন রাখী: আছে তো, সিনথিয়া আপুকে ভালোবাসি।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়