ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সুনীল প্রয়াণের চার বছর

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৩ অক্টোবর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুনীল প্রয়াণের চার বছর

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (ফাইল ফটো)

শাহ মতিন টিপু : বিখ্যাত কবিতা ‘কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি’র কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ৪র্থ প্রয়াণ দিবস আজ। ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর কলকাতায় নিজ বাসভবনে তিনি প্রয়াত হন।

 

বাঙলাভাষী সুনীল ছিলেন এক সম্পূর্ণ সাহিত্যিক, একদিকে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার আবার অন্যদিকে সম্পাদক ও সাংবাদিক। কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার জীবনানন্দ-পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি। একই সঙ্গে তিনি আধুনিক ও রোমান্টিক।

 

সাহিত্যে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন সুনীল। তার প্রথম ভালবাসাই ছিল কবিতা। ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ থেকে তিনি এক রহস্যময়ীর সঙ্গে পরিচয় করালেন বাঙালি কবিতার পাঠকদের। গল্প, কবিতা, উপন্যাস নিয়ে তার বইয়ের সংখ্যা দুশো ছাড়িয়ে।

 

১৯৬৫ সালে দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’। সেই উপন্যাসই ছিল আগমনধ্বনি। তারপর থেকেই সাহিত্যিক হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত সুনীল। যদিও কবি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন আগেই। বাংলা আধুনিক কবিতার পত্রিকা ‘কৃত্তিবাস’ এর অন্যতম জনক সুনীল।

 

লেখক হিসাবে চুড়ান্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিলেন সুনীল। প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে লিখতে বসতেন, এমনধারা বজায় ছিল তার পঞ্চাশ বছর অবিরল। কলকাতার নাগরিক জীবনকে তিনি অনন্য সাধারণ মসৃণতায় নিয়ে এসেছেন সাহিত্যে। পরিণত বয়সে এসে রচনা করেছেন ‘সেই সময়’, ‘প্রথম আলো’ অথবা ‘পূর্ব পশ্চিম’ এর মতো মডার্ন ক্ল্যাসিক। আবার ‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে পায়জামা পরা ভবঘুরে বেকার চরিত্রটিকে একটা গোটা প্রজন্মের কাছে প্রায় আইকন করে তুলতে পেরেছিলেন সুনীল।

 

তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘একা এবং কয়েকজন’, প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। ১৯৬৬ সালে প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই ‘আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি’, ‘যুগলবন্দী’ , ‘হঠাৎ নীরার জন্য’, ‘রাত্রির রঁদেভূ’, ‘শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা’, ‘অর্ধেক জীবন’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘অর্জুন’, ‘প্রথম আলো’, ‘সেই সময়’, ‘পূর্ব পশ্চিম’, ‘ভানু ও রাণু’, ‘মনের মানুষ’ ইত্যাদি। শিশুসাহিত্যে তিনি ‘কাকাবাবু-সন্তু’ নামে এক জনপ্রিয় গোয়েন্দা সিরিজের রচয়িতা।

 

১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে জন্ম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। পড়াশুনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। সুনীলের মা কখনোই চাননি তার ছেলে শিক্ষকতা করুক। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান মি. পলেন কলকাতায় এলে সুনীলের সঙ্গে ঘনিষ্ট পরিচয় হয়। সেই সূত্রে মার্কিন মুলুকে গেলেন সুনীল ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে। ডিগ্রী হয়ে গেলে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপগ্রন্থাগারিক হিসাবে কিছুদিন কাজ করেন সুনীল।

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প-উপন্যাসের কাহিনী চলচ্চিত্রে রূপায়ণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ এবং ‘প্রতিদ্বন্দ্বী উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া কাকাবাবু চরিত্রের দু'টি কাহিনী ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ এবং ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’ চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ‘হঠাৎ নীরার জন্য’ও চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে।

 

কাকাবাবু সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি চমৎকার কাল্পনিক চরিত্র। কাকাবাবুর কিছু অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী হল : ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’, ‘নীলমূর্তি রহস্য’, ‘বিজয়নগরের হীরে’, ‘সন্তু ও এক টুকরো চাঁদ’, ‘জোজো অদৃশ্য’, ‘কাকাবাবু হেরে গেলেন’, ‘কাকাবাবুর প্রথম অভিযান’, ‘উল্কা রহস্য’, ‘কাকাবাবু ও বজ্রলামা’, ‘মিশর রহস্য’, ‘সন্তু কোথায়? কাকাবাবু কোথায়?’, ‘আগুন পাখির রহস্য’, ‘কাকাবাবু ও এক ছদ্মবেশী’, ‘কাকাবাবু বনাম চোরাশিকারি’, ‘কাকাবাবু ও চন্দনদস্যু’, ‘কাকাবাবু ও শিশুচোরের দল’, ‘খালি জাহাজের রহস্য’, ‘ভূপাল’, ‘রহস্য’, ‘কাকাবাবু বনাম মূর্তিচোর’, ‘জঙ্গলগড়ের চাবি’, ‘ভয়ংকর সুন্দর’, ‘পাহাড়চূড়ায় আতঙ্ক’, ‘কলকাতার জঙ্গলে’,  ‘জঙ্গলের মধ্যে এক হোটেল’, ‘রাজবাড়ির রহস্য’, ‘মহাকালের লিখন’, ‘একটি লাল লঙ্কা’, ‘সাধুবাবার হাত’, ‘কাকাবাবু ও মরনফাঁদ’, ‘সিন্দুক রহস্য’ ও ‘এবার কাকাবাবুর প্রতিশোধ’।

 

১৯৬৭ সালে তিনি বিবাহ করেন স্বাতী বন্দোপাধ্যায়কে। একমাত্র সন্তান সৌভিক গঙ্গোপাধ্যায়। ২০০২ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা শহরের শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯৮৯ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সাহিত্য আকাদেমি ও পশ্চিমবঙ্গ শিশুকিশোর আকাদেমির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সৃষ্ট চরিত্র ছিল সন্তু, কাকাবাবু, জোজো, নীল মানুষ, নীললোহিত । তিনি নীললোহিত, নীল উপাধ্যায় এবং সনাতন পাঠক ছদ্মনামেও অনেক লেখা লিখেছেন । নীললোহিত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিক প্রচলিত ছদ্মনাম। নীললোহিতের মাধ্যমে সুনীল নিজের একটি পৃথক সত্বা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়