ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এখন যৌবন যার...

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখন যৌবন যার...

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়- বিখ্যাত এই চরণ দু’টির জনকের জন্মদিন আজ।

হ্যাঁ হেলাল হাফিজ। ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় তার জন্ম। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার স্বনামধন্য শিক্ষক। মা কোকিলা বেগম। মাকে হারান মাত্র তিন বছর বয়সেই । মা হারানো ছেলেটির মনে ধীরে ধীরে একসময় কবিতায় আশ্রিত হলেন। কালজয়ী সব কবিতার লাইন রচনা করলেন অনুভূতিপ্রবণ হেলাল হাফিজ। জীবদ্দশাতেই পাঠকের মুখে মুখে তার কবিতা হয়ে উঠেছে কিংবদন্তিতুল্য।

জাগতিক শরীরী যৌবন অনেক আগেই হারিয়েছেন কবি। ৭২-এ পা রেখেছেন, তিনি এখন বয়সের ভারে নুব্জ্য। শরীরে বাসা বেঁধেছে অসুখ-বিসুখ। শারীরিক দুর্বলতা ও ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় ভুগছেন। খুব অসুস্থ হয়ে পড়ায় গত ২১ মে রাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য এই কবিকে আগে নিয়মিত ক্লাবে দেখতে পাওয়া গেলেও এখন আর দেখা যায়না। যৌবনের পূজারী কবির যুদ্ধটা এখন নিজের জীবনেরই সাথে।

হেলাল হাফিজকে দেখলে বোঝা যায় তিনি কতটা নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু ডাক্তার হলে পড়াশোনার চাপে আর কবিতা লিখতে পারবেন না বলে ডাক্তারিতে ভর্তি হননি। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

হেলাল হাফিজের সারা জীবনের অমর সৃষ্টি হলো ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। সতেরো বছর কবিতার লেখার পর ১৯৮৬ সালে এই বইটি তিনি প্রকাশ করেন। বইয়ের প্রায় সবগুলো কবিতাই তিনি লিখেছেন ঢাকা প্রেস ক্লাব লাইব্রেরিতে বসে। লেখার ব্যাপারে তিনি খুবই খুঁতখুঁতে। প্রায় তিনশ’ কবিতা থেকে মাত্র ৫৬টি কবিতা তিনি বাছাই করেন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র জন্য। কবিতাগুলো বাছাই করতেই তিনি সময় নেন ছয় মাস। এরপর তিনি সমস্যায় পড়েন বইয়ের নাম নির্বাচন নিয়ে। এমনিতেই একদিন ওয়াশরুমে দাঁত মাজতে গিয়ে হঠাৎ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ নামটি তার মাথায় আসে। প্রকাশের পরেই বইটি ইতিহাসের অংশ হয়ে যায়। দুর্দান্ত জনপ্রিয় এই কবিতাগুলোর সাথে সাধারণ মানুষ নিজেদের একাত্ম করে নেয়।

হেলাল হাফিজ আজীবন কবিতাই লিখে গেছেন। প্রেমে পড়েছেন অসংখ্য নারীর। তার কবিতায় ব্যবহার করা নাম হেলেন, হিরণবালা, সাবিতা মিস্ট্রেস সবই বাস্তবের রমণী। তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, “ভালোবেসেই নাম দিয়েছি ‘তনা’/মন না দিলে ছোবল দিও তুলে বিষের ফণা।”

আসলে তার কবিতায় লাইনে লাইনেই ছড়িয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। যেমন-

‘আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।/অলৌকিক কিছু নয়/ নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি/তোমার স্পর্শেই আমার উদ্ধার।’

আবার ফেরিওয়ালা কবিতায়,

‘কষ্ট নেবে কষ্ট/হরেক রকম কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট! /লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট/পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট/আলোর মাঝে কালোর কষ্ট/মালটি-কালার কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট।/ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট/দাড়ির কষ্ট/চোখের বুকের নখের কষ্ট/একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট।‘

আবার-

‘কে আছেন? / দয়া করে আকাশকে একটু বলেন-/সে সামান্য উপরে উঠুক/ আমি দাঁড়াতে পারছি না।’

আবার-

‘তুমি আমার নিঃসঙ্গতার সতীন হয়েছো! / জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,/কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল।’

আবার এমন কথাও লিখলেন-

‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না।’

‘যে জলে আগুন জ্বলে’র ছাপ্পান্নটি কবিতার সাথে আরও নতুন পনেরোটি কবিতা যোগ করে ২০১২ সালে প্রকাশিত হয়েছে ‘কবিতা একাত্তর’। ২০১৩ সালে হেলাল হাফিজকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়।



ঢাকা/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়