ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নবজাগরণের শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৪৭, ২৭ অক্টোবর ২০২০
নবজাগরণের শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের জন্মদিন

তিনি যখন গান শুরু করেন সময়টা ছিল বাংলার মুসলমান সমাজের নবজাগরণের কাল। আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন নবজাগরণের শিল্পী।  বাংলা লোকসংগীতের এই সুরের পাখির জন্মদিন আজ।

১৯০১ সালের ২৭ অক্টোবর তিনি পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহারে জন্মগ্রহণ করেন। বলা যায়, লোকসঙ্গীতে হইচই ফেলে দেওয়া এই শিল্পীর পুরো পরিবারই সংগীতের কারণে আলোকিত। 

আব্বাসউদ্দীনের বড় ছেলে বিচারপতি মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত আইনবিদ এবং নবম প্রধান বিচারপতি।  সংগীতশিল্পী নাশিদ কামাল মোস্তফা কামালের মেয়ে। সংগীতসম্রাজ্ঞী ফেরদৌসী রহমান আব্বাসউদ্দীনেরই মেয়ে। আরেক ছেলে মুস্তাফা জামান আব্বাসী অসাধারণ সংগীতজ্ঞ, লেখক ও সংগীত গবেষক। 

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম খুব স্নেহ করতেন তাকে। কবি সবার কাছে আব্বাসউদ্দীনকে পরিচয় দিতেন ‘আমার ছোটভাই’ বলে।  প্রায় ২০ বছর তিনি কবি নজরুলের সাহচর্যে ছিলেন। 

যে কোনো গান শোনা মাত্র তিনি সুমধুর কণ্ঠে আয়ত্তে নিতে পারতেন আব্বাসউদ্দীন। জাতীয় কবির বিখ্যাত গান ‘ও মন রমজানেরই রোজার শেষে...’ গানটি প্রথম গেয়েছিলেন তিনি। 

কলকাতায় বেড়াতে এসে আব্বাসউদ্দীন গ্রামোফোন কোম্পানিতে রেকর্ডে গান গাওয়ার সুযোগ পান। প্রথম রেকর্ড করা শৈলেন রায়ের লেখা `স্মরণপারের ওগো প্রিয়` এবং `কোন বিরহীর নয়ন জলে` দু`টি গানই জনপ্রিয় হয়। তিনি কুচবিহার থেকে কলকাতায় চলে আসেন। 

পাকিস্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আব্বাসউদ্দিন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট রাত ১২টার পর ঢাকা বেতার থেকে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সেই থেকে ঢাকায় নতুন করে তার জীবন শুরু।

আব্বাসউদ্দীন ছিলেন প্রথম মুসলিম গায়ক, যিনি আসল নাম ব্যবহার করে প্রতিকূল সময়ে গানের রেকর্ড বের করতেন। রেকর্ডগুলো ছিল বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল। তিনি কবি জসীমউদ্দীন, কবি গোলাম মোস্তফার ইসলামী ভাবধারায় রচিত গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন।

একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আব্বাসউদ্দীনের পরিচিতি ছিল দেশজোড়া। আধুনিক গান, স্বদেশি গান, ইসলামি গান, পল্লিগীতি, উর্দু গান—সবই তিনি গেয়েছেন। তবে পল্লিগীতিতে তাঁর মৌলিকতা ও সাফল্য সবচেয়ে বেশি। জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া, পালা ইত্যাদি গান গেয়ে জনপ্রিয় হন। তিনি তার দরদভরা সুরেলা কণ্ঠে পল্লিগানের সুর যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা আজও অদ্বিতীয়। 

তিনি একজন অভিনেতাও।  তিনি চারটি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।  এগুলো হলো-‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘মহানিশা’ (১৯৩৬), ‘একটি কথা’ এবং ‘ঠিকাদার’ (১৯৪০)।  ঠিকাদার ছবিতে আব্বাসউদ্দীন একজন কুলির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।  এসব সিনেমায় তিনি গানও করেছিলেন। তখনকার দিনে মুসলমান ব্যক্তির সিনেমা করা ছিল খুবই ব্যতিক্রম ঘটনা।

আব্বাসউদ্দীনের রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় ৭০০।  ‘ও কী গাড়িয়াল ভাই’, ‘তোরষা নদী উথাল পাতাল, ‘কারবা চলে নাও’, ‘প্রেম জানে না রসিক কালাচান’, ‘মাঝি বাইয়া যাও’, ‘নাও ছাড়িয়া দে’, ‘ওই শোন কদম্বতলে’, ‘ও ঢেউ খেলেরে’, ‘নদীর কূল নাই’, ‘একবার আসিয়া সোনার’, ‘আল্লাহ মেঘ দে’, ‘আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি’, ‘ও কী ও বন্ধু কাজল ভোমরারে’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের কণ্ঠশিল্পী এই মরমিশিল্পী। 

পল্লীগানের এই সম্রাট ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর অগণিত সংগীতপ্রেমীকে শোকসাগরে ভাসিয়ে চিরবিদায় নেন।  মাত্র ৫৮ বছরের সংগীত ক্যারিয়ারে শিল্পী আব্বাসউদ্দীন যে অবদান রেখে গেছেন, তা যুগ যুগ ধরে বাঙালি স্মরণে রাখবে।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়