সদকাতুল ফিতর: এক অনন্য ইবাদত
সদকাতুল ফিতর একটি অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যা রমজান শেষে ঈদুল ফিতরের পূর্বে আদায় করা হয়। কেননা রোজা রাখতে গিয়ে অনেক ভুল-ত্রুটি হয়। সদকায়ে ফিতরের মাধ্যমে রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণ হয়। যেমনি নামাজের ত্রুটি-বিচুত্যি পূরণ হয় সাহু সিজদার মাধ্যমে। এ ছাড়া ধনী-গরিব উভয়ে যেন অন্তত ঈদের দিন উত্তম পোশাক ও ভালো খাবার খেতে পারে এজন্যই এ ফিতরার ব্যবস্থা। ফিতরা দ্বারা সমাজের অসহায় শ্রেণির সহায়তা করে ইসলাম অনন্য নজির স্থাপন করেছে। হাদিসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রোজাকে অনর্থক কথা ও অশালীন কাজ হতে পবিত্র করার জন্য এবং নিঃস্বদের মুখে খাদ্য দেওয়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ) হযরত জারির রা. সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের রোজা সদকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব)
ফিতরার নিসাব: ঈদের দিন সুবহে সাদিকের সময় যার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকে, তার উপর সদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। যে শিশু-সন্তানটি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে ভূমিষ্ঠ হবে, তার ফিতরাও আদায় করতে হবে। অর্থাৎ পরিবারের যতজন সদস্য ফিতরাও ততটি আদায় করতে হবে।
ফিতরার পরিমাণ: ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৭০ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ইফা বলছে, ফিতরার পণ্যের [আটার ক্ষেত্রে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম। খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যবের ক্ষেত্রে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম] স্থানীয় খুচরা বাজার মূল্যে তারতম্য রয়েছে। ফলে স্থানীয় মূল্য পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হবে।(দৈনিক যুগান্তর : ২১ এপ্রিল ২০২১)
ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা দেয়া: ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব। তবে সময়ের আগেও তা আদায় করা যায়। আবার কোনো কারণে সময় মতো আদায় করতে না পারলে পরেও আদায় করা যায়। অবশ্য পরে আদায় করলে ফজিলত কমে যাবে এবং সেটা সাধারণ দান বলে গণ্য হবে। কেউ আদায় না করে মারা গেলে তার পক্ষ থেকে তার উত্তরাধিকারী দিয়ে দিলেও আদায় হয়ে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন, নারী, পুরুষ, ছোট-বড় সকলের ওপরে সদকায়ে ফিতর হিসেবে এক সা (সাড়ে তিন কেজি প্রায়) খেজুর অথবা এক সা যব ফরজ করেছেন। আর তা ঈদের নামাজে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সহিহ বুখারি) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদকাতুল ফিতর আদায় করাকে আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (সহিহ বুখারি)
আমাদের সমাজে অনেকেই ফিতরার সর্বনিম্ন পরিমাণ জনপ্রতি ৭০ টাকা হিসেবে আদায় করে থাকেন। এটা সর্বনিম্ন সম্পদের মালিকের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে সামর্থ্য দিয়েছেন, তাদের জন্য উচিত হলো ফিতরার সর্বোচ্চ পরিমাণ ২ হাজার ৩১০ টাকা আদায় করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে সদকাতুল ফিতর আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
নির্বাহী সম্পাদক: মাসিক ইসলামী বার্তা ও অর্থ সম্পাদক: বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
ঢাকা/শান্ত
আরো পড়ুন