ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

মাগফেরাতের বারিধারায় সিক্ত হোক মুমিন হৃদয়

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২১, ১৩ এপ্রিল ২০২২  
মাগফেরাতের বারিধারায় সিক্ত হোক মুমিন হৃদয়

রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। রহমতের দশক শেষে আজ থেকে শুরু হয়েছে মাগফেরাতের দশক। মহান রাব্বুল আলামিন মহিমান্বিত রমজান মাসে বান্দার জন্য রেখেছেন তিনটি সুবর্ণ সুযোগ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাত লাভের এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাত প্রাপ্তির। (মিশকাত শরিফ) এই দ্বিতীয় দশকে আল্লাহ তায়ালা অগণিত রোজাদার ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। সিক্ত করেন মাগফেরাতের বারিধারায়।

বছরে একমাস সিয়াম সাধনা মুমিন মুসলমানের পরম আরাধ্য বিষয়। সারাবছর একজন মুমিন মুসলমানের আমলে-ইবাদতে ও নেককর্মে যেসব ত্রুটি ঘটে তা পূরণ করার মাস রমজান। রমজান হলো পাপ-পঙ্কিলতা ও অন্যায়-অনাচার থেকে নিস্কৃতির মাস। কেননা একজন মানুষ যখন খাঁটি দিলে তওবা করেন তখন মহান আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা এবং এক রমজান থেকে আরেক রমজান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলো মুছে দেয় যদি সে কবিরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (সহিহ মুসলিম)

সাধারণত রমজান মাসে রোজাদারের আমল-ইবাদত ও নেককাজের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। একজন রোজাদার ব্যক্তি গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের প্রানান্তকর চেষ্টা করেন। অতীতের কৃত গুনাহর জন্য তওবা-ইস্তিগফার করেন। হতে চান পবিত্র ও পরিশুদ্ধ জীবনের অধিকারী। হাদিসে এসেছে, স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ১০০ বার করে ইস্তেগফার করতেন। (তাবারানি, মুজামুল আওসাত) হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে আমার বান্দারা! যদি তোমরা দিনরাত গুনাহ করে থাকো আমি তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেব যদি তোমরা ইস্তেগফার করো (সহিহ মুসলিম)

তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে আমাদের বেশি বেশি ক্ষমা ও মাগফেরাত কামনা করার তাগিদ দিয়েছেন। যেমন তিনি ইরশাদ করেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলোয় ধুসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না। (সুনানে তিরমিজি) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তার নাক ভূলুণ্ঠিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লিখিত হলো; কিন্তু সে আমার ওপর দরুদ পাঠ করেনি। ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যার কাছে রমজান মাস এলো অথচ তার গুনাহ মাফ হয়ে যাওয়ার আগেই তা পার হয়ে গেল। আর ভূলুণ্ঠিত হোক তার নাক, যার কাছে তার মা-বাবা বৃদ্ধে উপনীত হলো; কিন্তু তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি (সে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে জান্নাত অর্জন করেনি)। (তিরমিজি)

রমজান মাসে মহান আল্লাহ অসংখ্য মানুষের দোয়া কবুল করেন। আবেদন মঞ্জুর করেন। জাহান্নামির নাম জাহান্নামের তালিকা থেকে মুছে দেন। দোজখ থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদ) হাদিসে আরও এসেছে, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না- রোজাদারের দোয়া, ইফতার পর্যন্ত। ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া। মজলুমের দোয়া।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান)

সুতরাং প্রত্যেক মানুষের উচিত, মাগফেরাতের এই দশকে গুনাহ থেকে বিরত থেকে এবং বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করে নিজেকে ক্ষমাপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা
 

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়