ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আওয়াল মিয়ার পুঁথি পাঠ

আশরাফুল আলম লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আওয়াল মিয়ার পুঁথি পাঠ

নিজ বাড়িতে পুঁথি পাঠের আসরে আওয়াল মিয়া

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : একসময় গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক ছিল পুঁথি পাঠ। ‘ কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার সেই ঐতিহ্য। বিলুপ্ত প্রায় সেই পুঁথি পাঠ করে এখনো গ্রামের সাধারণ মানুষদের মাঝে ধর্মীয় শিক্ষা, ইতিহাস ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক জ্ঞানদান করে যাচ্ছেন আব্দুল আওয়াল মিয়া।

আওয়ালের বয়স এখন ৬২। তিনি মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত ঘিওর উপজেলার পয়লা গ্রামের মৃত: আব্দুর রহিমের পুত্র। জীবনের ৪০ টি বছর ধরে গ্রামে গ্রামে সাধারণ মানুষদের পুঁথি শুনিয়ে আসছেন। পারিবারিক জীবনে আওয়ালের ২ স্ত্রী, ৫ ছেলে ও ৬ জন কন্যা সন্তান রয়েছে। বাবার রেখে যাওয়া বিঘাখানেক জমিতে চাষাবাদ করেই চলে তার সংসার। আর কাজের ফাঁকে ফাঁকে রাতের পর রাত তিনি কাটিয়েছেন পুঁথি পাঠ করে।

শখের বসে পুঁথিপাঠ করে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটানো আব্দুল আওয়াল জানান, বাল্য শিক্ষার গন্ডি তিনি ছাড়াতে পারেননি। তবে বাল্য শিক্ষা দিয়েই তিনি পড়ে ফেলতে পারেন অনেক কঠিন ভাষার বই।

তিনি জানান, ২০ বছর বয়সে প্রতিবেশি চাচা আব্দুল গনির কাছ থেকেই তার পুঁথি পাঠের হাতে খড়ি। চাচার পুঁথিপাঠ শুনেই তিনি এটিতে আসক্ত হয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে বাবা-মার চক্ষু ফাঁকি দিয়ে তিনি চাচার সাথে ঘুরে বেড়িয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম। চাচার মৃত্যুর পর থেকে তিনি একাই পুঁথিপাঠ করে বেড়ান।


তিনি আরোও জানান, গ্রামে কোন নবজাতক শিশু জন্মালে ওই শিশুর ৬ দিন বয়সে একটি উৎসব হতো। সেই উৎসবে ডাক পড়ত তার। নবজাতককে সামনে রেখে পুঁথিপাঠ করলে ওই শিশু বড় হয়ে ভাল চরিত্র ও শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত হবে এমনটাই ধারণা ছিল তখন। গ্রামের বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে তিনি কালু গাজী, ছয়ফুল মল্লুক বদিউজ্জামান, সোনাবানু, জঙ্গে কারবালা, লাইলী মনজু, আওলিয়া নিজাম উদ্দিনসহ প্রায় শত খানেক পুঁথি তিনি পাঠ করে থাকেন। এছাড়াও সপ্তাহে দুই তিনদিন তার নিজ বাড়িতে চলে পুঁথি পাঠের আসর। পুঁথি শুনতে বিভিন্ন এলাকার অনেক মানুষ জড়ো হয় তার বাড়িতে।


তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, পুঁথি পাঠের ঐতিহ্য এখন হারাতে বসেছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এর চাহিদা খুবই কম। তবে এই ঐহিত্য বিলুপ্তির জন্য তিনিও আকাশ সংস্কৃতিকেই দায়ী করেন। গ্রাম বাংলার এই হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।    

 

 

 


রাইজিংবিডি/মানিকগঞ্জ/ ৩ ডিসেম্বর ২০১৪/ আশরাফুল আলম লিটন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়