ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

পরিত্যক্ত গোয়েন্দা সরঞ্জামের কারণেই ভারতে বন্যা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৮:৫৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
পরিত্যক্ত গোয়েন্দা সরঞ্জামের কারণেই ভারতে বন্যা?

গল্পটির জন্ম ১৯৬০ সালের দিকে। সেই গল্প এখনও ভারতের হিমালয় পর্বতের পাশে থাকা রাইনি গ্রামের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ফেরে। কয়েকটি পারমাণবিক যন্ত্র নিয়ে এই গল্প। 

গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, ষাটের দশকে চীনের পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা ও ক্ষেপনাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার ওপর নজর রাখতে গোপন কৌশল অবলম্বন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এই কৌশলের অংশ হিসেবে হিমালয় পর্বতে তারা পারমাণবিক যন্ত্র রেখে এসেছিল। বহু বছর আগে ফেলে রেখে আসা সেই যন্ত্রগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে। এর ফলে হিমবাহ ধসে বন্যা হয়েছে রেইনি ও আশেপাশের গ্রামগুলোতে।
চলতি মাসের মাাঝামাঝি সময়ে হয়ে যাওয়া ওই বন্যায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। বিজ্ঞানীরা অবশ্য জানিয়েছেন, হিমবাহের একটি খণ্ড এই বন্যার জন্য দায়ী।

বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্ব অবশ্য মানতে নারাজ ২৫০ পরিবারের আবাসস্থল রাইনি গ্রামের বাসিন্দারা। তাদের যুক্তি, এই শীতে হিমবাহ ধস হতে যাবে কেন!

যন্ত্রের গল্পে ফেরা যাক। ১৯৬৪ সালের দিকে চীন প্র্থম পারমানবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। স্নায়ুযুদ্ধের ওই সময়টিতে বিশ্ব তখন দুই শিবিরে বিভক্ত। উত্তর-পূর্ব সীমান্তে চীনের সঙ্গে লাগোয়া এলাকাতেই অবস্থিত ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ নন্দা দেবী। ১৯৬৫ সালের অক্টোবর মাস। ভারত ও আমেরিকার এক দল পর্বতারোহী নন্দা দেবীর সাত হাজার ৮১৬ মিটার উপরে বহন করে নিয়ে গিয়েছিল সাতটি প্লুটোনিয়াম ক্যাপসুল ও নজরদারি সরঞ্জাম। সব মিলিয়ে এগুলোর ওজন ছিল ৫৭ কেজি। 

তবে প্রবল তুষার ঝড়ের কারণে পর্বতের চূড়ায় না উঠেই ফিরতে হয়েছিল দলটিকে। ফিরে আসার সময় তাদেরকে ফেলে রেখে আসতে হয়েছে ছয় ফুট লম্বা অ্যান্টেনা, দুটি রেডিও যোগাযোগ সরঞ্জাম, একটি পাওয়ার প্যাক এবং প্লুটোনিয়ামের সাতটি ক্যাপসুল। এই সরঞ্জামগুলো পবর্ততের একটি ফাঁটলে রেখে আসা হয়েছিল বলে একটি সাময়িকী জানিয়েছে। 

ভারতীয় দলটিকে ওই সময় নেতৃত্ব দেওয়া মনমোহন সিং কোহলি বলেন, ‘আমাদেরকে নেমে আসতে হয়েছিল। নইলে অনেক পর্বতারোহীকে সেদিন মরতে হতো।’

পরের বসন্তে পর্বতারোহী দলটি ফিরে গিয়েছিল নন্দা দেবীতে। কিন্তু ফেলে রেখে আসা সরঞ্জামগুলোর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি, যেন এগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। 

মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এক সাবেক কর্মকর্তা জানান,এর দুই বছর পর দ্বিতীয় দফা অভিযানে যাওয়া হয়েছিল। তবে ওই অভিযানে পুরোপুরি নয়, আংশিক সফলতা মিলেছিল। 

১৯৬৭ সালে তৃতীয় দফা অভিযানে একেবারে নতুন সব যন্ত্রপাতি নিয়ে যাওয়া হয়। এবার অবশ্য চূড়ায় নয়, বরং ছয় হাজার ৮৬১ মিটার উচ্চতায় নন্দা কোটে যন্ত্রগুলো বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। এবার মিশন পুরোপুরি সফল হয়। হিমালয়ে যন্ত্রপাতিগুলোর নজর রাখতে ১৪ আমেরিকান পবর্তারোহীকে তিন বছর প্রতি মাসে এক হাজার ডলার করে বেতন দিয়ে পুষেছে সিআইএ। 

১৯৭৮ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে বোমা ফাটালেন প্রধানমন্ত্রী মোরাজি দেশাই। নন্দা দেবীতে পারমাণবিক যন্ত্র বসাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যৌথভাবে কাজ করেছে বলে জানালেন তিনি। তবে সেই মিশন সফল হয়েছিল কিনা তা জানাননি দেশাই। একই মাসে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ সংক্রান্ত নথি প্রকাশ করে। 

এ ঘটনায় দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে প্রতিবাদ জানায় প্রায় ৬০ বিক্ষোভকারী। তারা ভারতে সিআইএ’র গোপন কর্মকাণ্ড বন্ধের দাবি জানায়। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ভারতে কাজ বন্ধ করো সিআইএ’ এবং আমাদের পানি বিষাক্ত করছে সিআইএ।’

হিমালয়ে ফেলে আসা পারমাণবিক যন্ত্রগুলোর শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে তা আর জানা যায়নি। 
আমেরিকান পবর্তারোহী জিম ম্যাকার্থি বলেন, ‘যন্ত্রগুলো তুষারের নিচে চাপা পড়ে গেছে। ঈশ্বর জানেন এগুলো কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।’

পর্বতারোহীরা অবশ্য জানিয়েছেন, নদীর পানি ও বালিতে তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষার জন্য রাইনি গ্রামে ছোট একটি কেন্দ্র আছে। নদীতে আদতে কোনো দূষণের প্রমাণের পাওয়া গেছে কিনা তা স্পষ্ট নয়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা যাই হোক না কেন, রাইনি গ্রামের বাসিন্দাদের মগজে এখনো গেঁথে আছে সেই পারমাণবিক ক্যাপসুলের গল্প। তাদের দাবি, সরকার তদন্ত করে বের করুক সেই ক্যাপসুলগুলো কোথায় আছে।

ঢাকা/সৌরভী/শাহেদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়