আমিষের বিকল্প উৎস হিসেবে সাপের মাংস খাওয়ার কথা বলছেন গবেষকরা

থাইল্যান্ডের মধ্যাঞ্চলের একটি কৃষি খামারের গুদামে হাজার হাজার অজগর পাত্রে কুণ্ডলীবদ্ধ হয়ে শুয়ে আছে। খামারের কর্মীরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কাঁচে খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। এই অজগরগুলো দামী বেল্ট, ব্যাগ ও হ্যান্ডব্যাগ তৈরির জন্য ইউরোপীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়। তবে কিছু বিজ্ঞানী ও শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বিশ্বাস করেন যে সাপের আসল মূল্য তাদের মাংসের মধ্যে থাকতে পারে।
কার্বন নিঃসরণের বিষয়টি থাকা সত্ত্বেও মাংসের চাহিদার কারণে বিশ্বব্যাপী ঐতিহ্যবাহী পশুপালন বাড়ছে। কেউ কেউ মনে করেন সাপকে গবাদিপশুর মাংসের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যাবে।
সাপ উচ্চ তাপমাত্রা এবং খরা সহ্য করতে পারে, দ্রুত পুনরুৎপাদন করতে পারে এবং অনেক কম খাদ্য গ্রহণ করার সময় প্রাণিজ প্রোটিনের ঐতিহ্যবাহী উৎসের তুলনায় অনেক দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
গবেষকদের অনুমান, শুধুমাত্র চীন এবং ভিয়েতনামে অন্তত চার হাজার অজগরের খামার রয়েছে, যা কয়েক কোটি সাপ উৎপাদন করে, বেশিরভাগ ফ্যাশন শিল্পের জন্য।
চলতি বছরের শুরুতে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ‘পাইথন চাষ বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার জন্য একটি নমনীয় এবং দক্ষ প্রতিক্রিয়া দিতে পারেভ
গবেষকরা ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের দুটি বাণিজ্যিক খামারে প্রায় পাঁচ হাজার বার্মিজ অজগরের ওপর এক বছর গবেষণা করার পর এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
আফ্রিকান ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্লাইড হারপেটোলজির পরিচালক এবং গবেষণায় জড়িত বিজ্ঞানীদের অন্যতম প্যাট্রিক অস্ট বলেছেন, ‘তারা কোনো খাবার ও পানি ছাড়াই মাসের পর মাস বেঁচে থাকতে পারে এবং আক্ষরিক অর্থে তাদের শারীরিক পরিস্থিতির কোনো অবনতি ঘটে না।’
মধ্য থাইল্যান্ডের উত্তরাদিতে এমিলিও মালুচ্চির খামারে প্রায় ৯ হাজার অজগর রয়েছে। চার দশক আগে তিনি ইতালি থেকে থাইল্যান্ডে চলে আসেন। তবে তিনি মানুষকে সাপের মাংস খাওয়ানোর ব্যাপারে খুব কমই সাফল্য পেয়েছেন। শেষ পর্যন্ত চামড়া নেওয়ার পর তিনি অধিকাংশ সাপ আবর্জনায় ফেলে দেন কিংবা মাছের খামারে দিয়ে দেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ অপচয়। আমি আমার সাপ খাই কারণ, আমি জানি তারা কী খায় এবং আমি কিভাবে তাদের বড় করি। সমস্যা হল অজগরের মাংসের কোনো বাজার নেই। আমাদের এর সম্ভাবনা সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করতে হবে।’
প্যাট্রিক অস্ট অবশ্য জানিয়েছেন, মাংসের চাহিদা পূরণে অজগর চাষের ‘বিশাল সম্ভাবনা’ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আপনি এটি বারবিকিউ করতে পারেন বা এটি তরকারি ও ঝোল হিসাবে খেতে পারেন। আমি এটিকে রসুনের সঙ্গে মিশিয়ে মাখনে ভাজতে পছন্দ করি যতক্ষণ না এটি সুন্দর এবং মচমচে হয়। এটি আসলে বহুমুখী মাংস।’
ঢাকা/শাহেদ