ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

হিন্দি নিয়ে সহিংস হচ্ছে ভারতের মহারাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১১ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১৮:৫২, ১১ জুলাই ২০২৫
হিন্দি নিয়ে সহিংস হচ্ছে ভারতের মহারাষ্ট্র

ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রে ভাষা ও পরিচয় নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক বিবাদ চলছে। এপ্রিল মাসে মহারাষ্ট্র সরকার রাজ্য পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ইংরেজি এবং মারাঠি (রাজ্যের প্রধান ভাষা) ছাড়াও তৃতীয় ভাষা হিসেবে হিন্দি শেখানো বাধ্যতামূলক করার পর এই বিরোধ শুরু হয়। 

১৯৬৮ সালে প্রবর্তিত জাতীয় শিক্ষা নীতি (এনইপি) ভারতে শিক্ষার প্রচার ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করে এবং সরকার মাঝে মাঝে এটি আপডেট করে। পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার প্রবর্তিত নীতির সর্বশেষ পুনরাবৃত্তিটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর আগেও ভাষা নিয়ে মোদির শিক্ষানীতি বিতর্কিত হয়েছে।

মহারাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন নাগরিক সমাজের গোষ্ঠী, ভাষা কর্মী এবং বিরোধী নেতারা। তাদের অভিযোগ, রাজ্যে হিন্দি - যা মূলত উত্তর ও মধ্য ভারতের রাজ্যগুলোর ভাষা-তা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

ভাষা ভারতে একটি সংবেদনশীল বিষয়। স্বাধীনতার পর মহারাষ্ট্রসহ অনেক রাজ্য ভাষাগত ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। স্থানীয় ভাষা প্রায়শই আঞ্চলিক গর্ব এবং পরিচয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আঞ্চলিক ভাষার ব্যাপারে যেকোনো পরিবর্তন রাজ্যগুলোতে হুমকি হিসেবে দেখা হয়। উদাহরণস্বরূপ, গত বছর, ভারতের সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিত বেঙ্গালুরুতে কন্নড় ভাষার কর্মীরা বিলবোর্ডগুলো কেবল ইংরেজি নয়, স্থানীয় ভাষায় লেখার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন।

কিন্তু ভারতের সর্বাধিক কথ্য ভাষা হিন্দির ক্ষেত্রে অস্বস্তি বিশেষভাবে বেশি। বছরের পর বছর ধরে হিন্দি প্রচারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপগুলো অ-হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোর মধ্যে এক আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলেছে- হিন্দির প্রভাবে স্থানীয় সংস্কৃতি বিলীন হবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অভয় দেশপাণ্ডে জানান, ২০১৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর এই উদ্বেগগুলো আরো বেড়েছে। বিজেপির শীর্ষ নেতারা - হিন্দিভাষী রাজ্যগুলোতে শক্তিশালী। তারা প্রায়শই হিন্দিকে বিশেষাধিকার দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

মহারাষ্ট্রে উত্তেজনা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোট শাসিত রাজ্য সরকার তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে এবং তিন ভাষা নীতি পুনর্বিবেচনার জন্য একটি কমিটি নিয়োগ করে। কিন্তু বিতর্ক থামার নাম নেই।

ভারতের সবচেয়ে ধনী পৌর করপোরেশন মুম্বাই শহরসহ রাজ্যে দীর্ঘ বিলম্বিত পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে, তার কয়েক মাস আগে এই বিরোধ শুরু হয়েছে। এটি ক্ষমতাসীন জোট এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সূত্রপাত করেছে। প্রতিটি পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক খেলার অভিযোগ করছে।

রাজ্যে অ-মারাঠিভাষীদের বিরুদ্ধেও সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।

এপ্রিল মাসে মুম্বাইতে একজন নিরাপত্তারক্ষীকে বিরোধী দল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর কর্মীরা মারধর করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কারণ ওই নিরাপত্তারক্ষী বলেছিলেন যে তিনি মারাঠি জানেন না।

মে মাসে, মুম্বাইয়ের এক দম্পতি মারাঠি ভাষায় কথা বলতে অস্বীকৃতি জানানোর পর একজন ডেলিভারি এজেন্টকে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। গত সপ্তাহে, মারাঠি না বলার জন্য একজন দোকান মালিককে এমএনএস কর্মীরা লাঞ্ছিত করার একটি মর্মান্তিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল।

যদিও এই বিষয়টি সামাজিক বিভাজন বৃদ্ধি করেছে বলে মনে হচ্ছে, তবুও বিচ্ছেদের প্রায় দুই দশক পর এটি দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে একত্রিত করেছে।

গত সপ্তাহে রাজ্যের বিরোধী দল শিবসেনার প্রধান উদ্ধব ঠাকরে এবং এমএনএসের নেতা হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগের বিরোধিতা করার জন্য যৌথ সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। হিন্দির বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য রাজ্যের দুই বিরোধী দল দীর্ঘদিনের বিরোধ মিটিয়ে জোট করেছে।

সাংবাদিক ও সাবেক রাজনীতিবিদ প্রশান্ত দীক্ষিত বলেন, “মারাঠি ভাষা ও সংস্কৃতির বিষয়টি জনগণের হৃদয়ের খুব কাছাকাছি। এটি একটি আবেগপ্রবণ বিষয়, বিশেষ করে মুম্বাইতে বসবাসকারী মানুষের জন্য।”

ঢাকা/শাহেদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়