ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘জন্মিলে মরিতে হবে’ যাদের জীবনে একথা খাটে না

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ২৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘জন্মিলে মরিতে হবে’ যাদের জীবনে একথা খাটে না

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আফসোস করে বলেছিলেন, কচ্ছপের মতো প্রাণি চারশ বছর বাঁচে, অথচ মানুষের আয়ু কত কম! কিন্তু পৃথিবীতে এমনও প্রাণি আছে যাদের জীবনে ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ এই কথা পুরোপুরি খাটে না। হাজার বছর তারা সবকিছুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি বেঁচে আছে। যদিও অন্য প্রাণির আঘাতে তাদের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু এজন্য বাঁচার কৌশলও তাদের জানা। রহস্যময় প্রকৃতির এ আরেক রহস্য!       

সেই ছোটবেলা থেকেই জানি, পানি ছাড়া মাছ বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু লাংফিশ আপনার এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করবে। এই মাছ পানিশূন্য ডাঙাতেও বছরের পর বছর জীবিত থাকতে পারে। শুষ্ক মৌসুমে জলাশয়ের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর মাটির নিচে এরা ঘাপটি মেরে থাকে। এ জন্য লাংফিশ প্রস্তুতি নেয়। জলাশয়ের পানি কমছে বুঝতে পারলেই মাছটি গর্ত খোঁড়া শুরু করে। পানি একেবারে শুকিয়ে গেলে সাঁই করে নিজেকে ওই গর্তে লুকিয়ে ফেলে।

এ সময় তারা শরীর থেকে একপ্রকার পদার্থ নিঃসরণ করে। যা মাছটির চারপাশে একটি শক্ত আবরণ তৈরি করে। আবরণের মধ্যে দীর্ঘদিন মাছটি হাইবারনেশন পদ্ধতিতে জীবিত থাকে। অবাক করা বিষয় হলো, এ সময় তারা কোনো খাবার খায় না। এমনকি নড়াচড়া পর্যন্ত করে না। বর্ষা মৌসুম আসার পর লাংফিশ আবরণ থেকে বেরিয়ে আসে এবং নতুন জীবন শুরু করে। শিকারি মাছদের পেটে যাওয়া কিংবা জেলেদের জালে আটকা পড়ার আগ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় বছরের পর বছর জীবিত থাকতে পারে লাংফিশ। দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ শুকনো মৌসুমে জলাশয়ের মাটি খুঁড়ে এই মাছ মহানন্দে শিকার করে। 

ওয়াটার বিয়ারের নাম শুনেছেন? বৈজ্ঞানিক নাম Tardigrade. এই জীব পৃথিবীর সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকতে পারে। অথচ এটি মাত্র হাফ মিলিমিটারের মতো সুক্ষ্ম! ফলে খালি চোখে দেখা যায় না। ওয়াটার বিয়ার পানিতে বাস করে এবং খুব ধীরে চলাচল করে। মাইনাস ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো প্রখর ঠাণ্ডা কিংবা ১৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো প্রচণ্ড গরমেও ওয়াটার বিয়ারের কিছুই হয় না! অদ্ভুত এই জীব রেডিয়েশনের সর্বোচ্চ লেভেলের চেয়েও হাজার গুণ বেশি রেডিয়েশন সহ্য করতে সক্ষম। এমনকি পানি ছাড়াও দশ বছর বেঁচে থাকতে পারে। ওয়াটার বিয়ারের সহ্য ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য ২০০৭ সালে একটি কাঁচের ভ্যাকিউম জারে ভরে মহাকাশে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। 

এই তালিকায় তৃতীয় জীবটির নাম হাইড্রা। উনিশ শতকে এই অমর প্রাণির কথা বিজ্ঞানীরা প্রথম জানতে পারেন। কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণ প্রমাণের অভাবে এই তত্ত্বটি তখন জোড়ালোভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এসে এটা প্রমাণিত হয় যে, হাইড্রা অমর। হাইড্রার দেহ অনেকটা ছিপছিপে গড়নের। দেহের পুরাতন অঙ্গগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন অঙ্গ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ফলে হাইড্রা সব সময়ই চির তরুণ। কিন্তু এই জীব সংখ্যায় অনেক কম। কারণ বেশিরভাগ হাইড্রা তার চেয়ে আকারে বড় শিকারি প্রাণিদের খাবার হয়ে যায়। কিছু হাইড্রা নানারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। কিন্তু বয়সের কারণে বা বুড়ো হয়ে কখনও এই প্রাণির মৃত্যু হয় না।

আরেকটি প্রাণির কথা বলি। নাম রেড অর্চিন। জীবিত থাকার জন্য যা করা দরকার তার সবই করতে পারে এই প্রাণি। দীর্ঘসময় বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, রেড অর্চিনের আয়ুষ্কাল মাত্র ১৫ বছর। কিন্তু গবেষণায় উঠে আসে বিস্ময়কর এক তথ্য, রেড অর্চিন খুব ধীরে বড় হয়। আর গবেষণার জন্য আনা সবচেয়ে বড় অর্চিনটির বয়স ছিল দুইশ বছরেরও বেশি। এতো বয়স হওয়ার পরেও অর্চিনটি সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল এবং ধীরে ধীরে বেড়েই চলছিল।

সম্প্রতি এক গবেষণায় প্রাণিবিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, পুরোপুরি না হলেও প্রায় অমরত্ব লাভ করেছে ব্যাকওয়ার্ড এজিং জেলিফিশ নামের ছোট্ট এক সামুদ্রিক প্রাণি। ভূমধ্যসাগর ও জাপানের সমুদ্রে দেখা যায় এদের। জাপানের কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, কখনই বার্ধক্য আসে না ব্যাকওয়ার্ড এজিং জেলিফিশের। বয়সের ভারে কখনও এদের মৃত্যু হয় না। কখনও দেহের কোনো অংশে আঘাত লাগলে বা অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে এরা পলিপ দশাতে চলে যায়। পলিপের আকারে দেহের চারপাশে মিউকাস মেমব্রেন তৈরি করে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশ সেরে উঠলেই পলিপ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, পলিপ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসা জেলিফিশগুলোর দেহের প্রায় সব কোষ নতুন ও সজীব। আর এভাবেই নিজেদের বয়স কমিয়ে যৌবন ধরে রাখে তারা।

পড়ুন : *

         *

         *

         *

        *


ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়