ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শীতকালে জীবনযাপনে পাঁচ পরিবর্তন ও কুফল

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ২১:২৬, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
শীতকালে জীবনযাপনে পাঁচ পরিবর্তন ও কুফল

শীত হলো এমন একটা মৌসুম যা আমাদের জীবনযাপনে কিছু না কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসে। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ঠান্ডা থেকে শরীর ও ত্বককে রক্ষা করতে আমরা বেশ সচেতন থাকি, যেমন- হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে গরম পোশাক পরা ও ত্বকের শুষ্কতা এড়াতে ময়েশ্চারাইজার বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা। 

কিন্তু শীতকালে আমাদের জীবনযাপনে এমনও কিছু পরিবর্তন আসে যার ক্ষতিকারক প্রভাব সম্পর্কে আমরা তেমন খেয়ালই করি না। উদাহরণস্বরূপ, শীতকালে অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরাও পর্যাপ্ত পানি পানে উদাসীন থাকেন। এখানে শীতের আগমনে জীবনযাপনের পাঁচটি পরিবর্তন ও এর কুফল সম্পর্কে বলা হলো।

* এক্সারসাইজ না করা: এক্সারসাইজ (শরীরচর্চা) হলো শক্তিশালী স্ট্রেস রিডিউসার। গবেষণায় দেখা গেছে, এক্সারসাইজ করলে মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো সমস্যা কমে যায়। শীতকালে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয় বলে এসময় এক্সারসাইজের গুরুত্ব রয়েছে। কেবল মানসিক স্বাস্থ্য নয়, এক্সারসাইজে শারীরিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়। নিয়মিত এক্সারসাইজ করলে শরীর ফিট থাকে ও নানারকম রোগের ঝুঁকি কমে। কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়া যে কাউকে এক্সারসাইজের প্রতি বিমুখ করতে পারে। একারণে শীতকালে মানসিক ও শারীরিক সমস্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে পাঁচ দিন ৩০ মিনিট করে এক্সারসাইজ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এক্সারসাইজের পাশাপাশি ইয়োগাও করতে পারেন। ইয়োগা মানসিক অবস্থা ঠিক রাখতে সাহায্য করে ও শরীরেরও কিছু উপকার হয়।

* ঘরে আটকে থাকা: শীতকালের ঠান্ডা আবহাওয়া মানুষকে ঘরে থাকতে প্ররোচিত করে। এসময় উষ্ণ কম্বলের নিচে শুয়ে ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও ভিডিও দেখার প্রবণতা বেড়ে যায়। শীতকালে বিষণ্নতার মতো মানসিক সমস্যা বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘরে অবস্থানের সময়সীমা বেড়েছে। কিন্তু ঠান্ডা আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে বাইরে বের হলে ভালো অনুভূতি পাওয়া যায়। শীতেও একটা নির্দিষ্ট সময় গায়ে রোদ লাগানো উচিত। রোদ পোহালে মেজাজ ভালো হয় ও বিষণ্নতা হ্রাসকারী ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। কেবল রোদ পোহানো নয়, কুয়াশাচ্ছন্ন সময়েও বাইরে বের হলে মনে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। শীতের শুরু থেকেই নিয়মিত বাইরে বের হলে শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা আবহাওয়ায় খাপ খেতে পারবে ও মানসিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

* সানস্ক্রিন ব্যবহার না করা: গরমকালে আমরা সানস্ক্রিন ব্যবহারে যতটা মনোযোগী হই, শীতকালে ততটা উদাসীন হয়ে পড়ি। আমরা জানি যে সূর্য থেকে ত্বককে রক্ষা করতে পারলে রিংকেল ও ডার্ক স্পট তথা অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ প্রতিরোধ হবে। তাই আমরা গ্রীষ্মকালে ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুল করি না। কেবল তা নয়, সানস্ক্রিনের আরো উপকারিতা রয়েছে। সানস্ক্রিন ত্বককে মারাত্মক পরিণতি থেকেও রক্ষা করতে পারে, যেমন- ত্বকের ক্যানসার। সূর্য থেকে নিঃসরিত অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে মেলানোমার মতো মারাত্মক ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে শীতকালে ত্বকের তেমন ক্ষতি হবে না। তাই তারা সানস্ক্রিন ব্যবহারে উদ্যোগী হন না। কিন্তু শীতকালের সূর্যও ত্বকে বাদামী দাগ ও ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

* বেশি ঘুমানো: শরীর ও মনের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ঘুমের সময়সূচি অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। গবেষকরা জানান যে কম ঘুমেও সমস্যা, বেশি ঘুমেও সমস্যা। তাই শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে কম বা বেশি নয়, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। মৌসুম যেটাই আসুক, ঘুমের সঠিক সময়সূচি মেনে চলতে হবে। শীতকালে মানুষ বেশি ঘুমাতে চায় এটা জানার জন্য গবেষণার প্রয়োজন নেই, আশপাশের মানুষকে পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। কিন্তু শীতে বাড়তি ঘুমে উপকার নাকি অপকার হচ্ছে তা জানতে গবেষণা প্রতিবেদনে চোখ বুলাতে হবে। এ বিষয়ে পরিচালিত গবেষণা ধারণা দিয়েছে, শীতকালের বাড়তি ঘুম উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। স্লিপ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত ঘুম বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু গবেষণা বলছে, প্রতিরাতে ৮ ঘণ্টার চেয়ে বেশি ঘুমালে স্ট্রোক, স্থূলতা ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

* গরম পানিতে দীর্ঘসময় গোসল করা: কে চায় শীতকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে? এসময় ঠান্ডাভীতি জেঁকে বসে বলে আমরা গরম পানি ছাড়া গোসলের কথা ভাবতেই পারি না। এসময় কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে আরাম পাওয়া যায় ও শরীর ঠান্ডার তীব্রতা থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু অনেকেই দীর্ঘসময় ধরে অতি গরম পানিতে গোসল করে থাকেন, যা ত্বকের জন্য ভালো নয়। অতি গরম পানিতে গোসল করলে ত্বক দ্রুত শুকিয়ে যায়। শুষ্ক ত্বকে চুলকানি ও অস্বস্তি হয়। শুষ্কতা বেড়ে গেলে ত্বক ফেটে যায়। তাই শীতকালে ত্বকের ক্ষতি এড়াতে অতি গরম নয়, কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন। গোসলের পর শরীর তোয়ালে দিয়ে হালকা মুছে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগ করুন। এর ফলে ত্বক থেকে দ্রুত পানি উবে যাবে না, যেকারণে ত্বক আর্দ্র থাকবে।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়