শিক্ষার হার বাড়ছে, বাড়ছে সাক্ষরতাও
আবু বকর ইয়ামিন : দেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সাক্ষরতার হারও। দশ বছর আগেও যেখানে বাংলাদেশের সার্বিক সাক্ষরতার হার ছিল অর্ধেক জনগোষ্ঠীরও কম, বর্তমানে তা দুই-তৃতীয়াংশে ওঠে এসেছে।
সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করা কিছু সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে সার্বিক সাক্ষরতার হার ২৬ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই সময়ে মাঝ-বয়সী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যেও শিক্ষার আওতা বেড়েছে।
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হারের ওপর ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্স (ইউআইএস) এর তথ্যমতে ২০১৬ সালে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পুরুষ ও নারীর মধ্যে সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৯২ দশমিক ২৪ ভাগ। যা ২০০৭ সালে ছিল ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাক্ষরতার হার অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারত, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তানসহ অনেকে দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। ইউআইএসের তথ্যমতে ভারতে সার্বিক সাক্ষরতার হার ৬৯ দশমিক ৩০ ভাগ, নেপাল ৫৯ দশমিক ৬৩ ভাগ, ভুটান ৫৭ দশমিক ০৩ ভাগ ও পাকিস্তান ৫৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
ইউআইএস অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে দ্বিগুণ ৪৩৯৯.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ব্যয় করেছে, যা ২০০৮ সালে ছিল ১৯৯৩.৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে ৭ হাজার ৮৮৫ মিলিয়নেরও বেশি (৬৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা) বরাদ্দ করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। সবার জন্য শিক্ষার অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য সরকার জাতীয় শিক্ষা নীতিমালা-২০১০ প্রণয়ন করেছে।
এই লক্ষ্য অর্জন নীতিমালায় শিক্ষার মূল সম্পদ নিশ্চিত করা, শ্রেণিকক্ষ ও পাঠ্যপুস্তক ডিজিটাইজেশন করা, শিক্ষাক্রম সংস্কার, সৃজনশীল প্রশ্ন চালু, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমাদের শিক্ষার হার ক্রম ঊর্ধ্বমুখী। এটা খুবই সন্তোষজনক। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে এটিকে শতভাগে উন্নীত করা। তবে এখানে কিছু বাধা আছে। যার কারণে সে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। ৫০ বছরের বেশি বয়সী একটি বড় অংশ আছে যাদেরকে সাক্ষরতার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। একটা সময়ে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছা যাবে বলে মনে করেন এ শিক্ষাবীদ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে সাক্ষরতার হার শতভাগ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ কাজে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়াও একটা বড় কারণ। কিন্তু তারপরও যতক্ষণ একজনও নিরক্ষর মানুষ থাকবে ততক্ষণ সরকার কাজ চালিয়ে যাবে। আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা চেষ্টা করে যাব।’
মন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে নিরক্ষরতা সম্পূর্ণরূপে দূরীকরণে এবং দেশের মানুষকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে সরকার সপ্তম পঞ্চবর্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি-৪ এর লক্ষ্যসমূহ অর্জনে জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে ১৫ এবং তদূর্ধ্ব বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষর নারী ও পুরুষকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদানের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সাব সেক্টরে একটি দীর্ঘমেয়াদী সেক্টর ওয়াইড অ্যাপ্রোচ প্রোগাম হিসেবে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে দেশে বিদ্যমান ৩ কোটি ২৫ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান, বিদ্যালয়বহির্ভূত ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী ১০ লাখ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান, ৫০ লাখ নব্য সাক্ষরতাকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, মানুষের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ তৈরির জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন, প্রতি ইউনিয়নে এবং শহর এলাকায় ৫০২৫টি আইসিটি ভিত্তিক স্থায়ী কমিউনিটি লার্নিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং প্রতি জেলায় ১টি করে ৬৪টি স্থায়ী জীবিকায়ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
মন্ত্রী বলেন, সাক্ষরতাই শিক্ষার সোপান। যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত ও ক্ষমতাবান। এজন্য সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীতে একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী পরিবেশ বিনির্মাণে সাক্ষরতার কোনো বিকল্প নাই।
ড. আখতারুজ্জামান বলেন, এটা খুবই আশার আলো যে আমাদের দেশের সাক্ষরতার হার অন্য দেশের তুলনায় অনেক ভাল। আমাদের আশেপাশে বিভিন্ন দেশের সাক্ষরতার হার বছরে বছরে উঠানামা করে। কিন্তু আমাদের দেশে ক্রম বর্ধমান। এটা খুব ভাল একটি দিক।
পড়ুন :
রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮/ইয়ামিন/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম