ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভারতে প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশে হিরো আলম

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ১৪ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৬:২৮, ১৪ অক্টোবর ২০২০
ভারতে প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশে হিরো আলম

১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পায়। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে নিজস্ব কোনো চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে ওঠেনি। স্থানীয় সিনেমা হলগুলোতে কলকাতা অথবা লাহোরের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হতো। তবে ‘মুখ ও মুখোশ’  নির্মাণের পর এ দৃশ্য পাল্টে যায়। বিষয়টি উপলব্ধি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল উত্থাপিত বিলের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (ইপিএফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।

দেশ স্বাধীনের পর ঢাকাই সিনেমার সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরেও সুনাম অর্জন করে। চলচ্চিত্রের আঁতুর ঘর বিএফডিসি এক সময় লাইট, ক্যামেরার ঝলকানি, পরিচালকের কণ্ঠে ‘অ্যাকশন-কাট’ উচ্চারণ এবং তারায় তারায় মুখরিত ছিল। করোনার কারণে খুব দ্রুত পরিস্থিতি বদলে যায়। এফডিসি গত মার্চ থেকে নীরব, নিস্তব্ধ। টুকটাক সিনেমার শুটিং শুরু হলেও সিনেমা হলগুলোতে দীর্ঘ সাতমাস তালা ঝুলছে।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের দাবির মুখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে দেশের সবগুলো সিনেমা হল খুলে দেওয়া হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- হলগুলো খুলে দেওয়া হলেও দর্শক হলমুখী হবে তো? দর্শকদের হলমুখী করতে কোনো সুস্পষ্ট উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কোন সিনেমা দিয়ে হলগুলো খুলে দেওয়া হবে এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। কারণ হল খুলে দিলেই তো হবে না, ভালো সিনেমাও প্রয়োজন। নইলে এই দুর্যোগকালে বিনোদন পেতে মানুষ হলমুখী হবে কেন?

যদিও এখন পর্যন্ত হিরো আলম অভিনীত ও প্রযোজিত ‘সাহসী হিরো আলম’ সিনেমাটির মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। এ নিয়েও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে সমালোচনা করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক সেদিন কথাপ্রসঙ্গে বললেন, ‘হিরো আলমের সিনেমা দিয়ে দর্শকদের প্রেক্ষাগৃহে ফেরানো যাবে না। প্রয়োজন বিগ বাজেটের ভালো মানের সিনেমা। মানহীন সিনেমা মুক্তির মাধ্যমে সিনেমা হল খোলা হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।’

করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এক সিট ফাঁকা রেখে সিনেমা প্রদর্শন করতে হবে। স্বাভাবিক কারণে সিনেমা হলে দর্শকসংখ্যা কমবে। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় বিগ বাজেটের সিনেমা মুক্তি দিতে চাচ্ছেন না প্রযোজক। ফলে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন সংকট।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও গত মার্চ থেকে সিনেমা হল বন্ধ ছিলো। এতে লোকসান হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ভারতেও আগামী ১৫ অক্টোবর হল খুলে দেওয়া হবে।এ দিন মুক্তির জন্য তারা বেছে নিয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জীবন নিয়ে নির্মিত সিনেমা। আমরাও এমন উদ্যোগ নিতে পারতাম।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট ভাবনা এবং অনুদান রয়েছে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারিভাবে ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে এই দিনটিতে বর্ণিল আয়োজনে দিবসটি উদযাপন করে বিএফডিসি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় চলচ্চিত্র উন্নয়নে তিনি অনুদান দিয়ে আসছেন। শিল্পীদের বিপদে সবসময় প্রধানমন্ত্রী মাতৃস্নেহে পাশে থেকেছেন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ করোনাকালীন এই সংকট কাটিয়ে উঠতেও তিনি অনুদান দিয়েছেন।

‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ ডকুড্রামা দিয়েও দেশের সিনেমা হলগুলো খোলা যেতে পারে। হল মালিকেরাও এই সিনেমা প্রদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রযোজক ও হল মালিক সমিতি সমন্বয় করে বিষয়টির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষায় আছেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়