ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ছে

এনআর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়ছে

নৃপেন রায় : আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বাড়তে পারে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদের সংখ্যায়ও পরিবর্তন হতে পারে।

 

আসন্ন কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে এমন পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারক। আগামী ২৮ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

 

বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সংখ্যা ৭৩। কিন্তু দলের আসন্ন কাউন্সিলে এ সংখ্যা ৮১ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বছরকে (১৯৮১) কেন্দ্র করে এ পরিকল্পনা। এ বিষয়ে দলীয় নীতি নির্ধারনী নেতারা ঘরোয়া বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে প্রস্তাবও দিয়েছেন।

 

দলীয় সূত্র জানায়, দলের নীতি-নির্ধারনী সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আগামী কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ৮১ করার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে প্রাথমিকভাবে সম্মতিও জ্ঞাপন করেছেন তিনি।

 

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন প্রেসিডিয়াম সদস্য সংখ্যা ১৫। এ সংখ্যা আরো দু’একটি বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া বর্তমানে সাতটি সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ রয়েছে। এটি বাড়িয়ে বিভাগওয়ারী চাহিদার ভিত্তিতে তা ১০ সদস্য বিশিষ্ট করা হবে। কারণ ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগ হয়েছে। কুমিল্লা এবং ফরিদপুর বিভাগ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াধীন। সে অনুযায়ী সাংগঠনিক সম্পাদকের পদের সংখ্যা তিনটি বাড়তে পারে।

 

আর দলীয় রীতি অনুযায়ী প্রতি দুটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের বিপরীতে যুগ্ম সম্পাদকের পদও বাড়ে একটি করে । সেই বিবেচনায় যুগ্ম সম্পাদকের পদ তিনটি থেকে বাড়িয়ে পাঁচটি করা হতে পারে।  তবে যুগ্ম সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদের কয়টি বাড়বে তা নির্ভর করবে কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ হওয়া না হওয়ার ওপর।

 

সূত্র আরো জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমন্ডলীর যেকোন পদের সংখ্যাই বৃদ্ধি করা হোক না কেন কমিটির সংসদ সদস্য সংখ্যা কোনোক্রমেই ৮১ জনের বেশি হবে না। এর স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরে নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের সংখ্যা কোনক্রমেই মুড়ি-মুরকির মতো বাড়ানো যাবে না।

 

কারণ আওয়ামী লীগ কোন রাতের অন্ধকারে গজিয়ে ওঠা ক্ষমতালোভী সংগঠন নয়। এটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অর্জনের ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই এ সংগঠনের নেতা হওয়ার মর্যাদার ভার অনেক বেশী। এই মর্যাদার ভার সবাই বয়ে বেড়াতে পারে না। অতীতে এমন অনেক নজীর আছে। যারা সময়-সুযোগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ নিয়ে দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টে কাজ করেছেন।

 

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, দেশে সাত বিভাগের পাশাপাশি আরে তিনটি প্রশাসনিক বিভাগ আগামীতে বাড়ছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ বাড়ছে এটা মোটামোটি কনফার্ম। পাশাপাশি যুগোপযোগী চাহিদার সাথে তাল রেখে তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক (আইসিটি) ও প্রাণিসম্পদ সম্পাদক পদ সৃষ্টি হতে পারে।

 

এক্ষেত্রে বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদকমন্ডলীর পদে নতুন করে প্রাণিসম্পদ সম্পাদক পদটি সংযোজন হতে পারে। যুগের সঙ্গে সংগতি রেখে বর্তমান সাফল্য অর্জনে মাথায় রেখে আগামী দিনের লক্ষ্য অর্জনে দলকে গতিশীল ও যুগোপযোগী করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। নেতারা জানান, বর্তমান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩২টি সম্পাদকীয় পদ রয়েছে। এগুলোকে দলীয় প্রয়োজনে কোনোটাকে ভেঙে স্বতন্ত্র, কোনোটাকে ভেঙে দুটি আর কোনোটাকে ভেঙে অন্য একটির সঙ্গে যোগ করা হতে পারে।

 

সংশ্লিষ্ট নেতারা আরো জানান, এছাড়াও দলের গঠনতন্ত্রে দুটি পরিবর্তন আসবে। একটি হল কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ বাড়ানো এবং অপরটি হল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়ার বিধান সংযোজন করা। অবশ্য ঘোষণাপত্র পরিবর্তন হচ্ছে না বলেও উল্লেখ করেন তারা।

 

তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ সংখ্যা কিংবা গঠনতন্ত্রে পরিবতর্ন বা সংযোজন যাই হোক না কেন এবার কলেবর কমছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকদের পদের সংখ্যা।  কারণ, গত ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নাম ঘোষণার সময়ই কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদে ৬৬ জনের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

 

এরপর গত ৭ আগস্ট কয়েকটি সংবাদপত্রে আওয়ামী লীগের নতুন ৮৩ সহ-সম্পাদকদের নামের তালিকা প্রকাশ হয়।  পরবর্তীতে এভাবে আরো কয়েক দফায় সহ-সম্পাদকের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এ নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই কথা ওঠে। কারণ সহ-সম্পাদকদের বিভিন্ন কার্যকলাপে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও বিরক্তি প্রকাশ করেন। খোদ ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে সহ সম্পাদক পদধারী কয়েকজন নেতা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

 

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের দুই নেতা জানান, এবার গতবারের মতোই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদকের তালিকা চূড়ান্ত করে দেওয়া হবে। এবার আর এই তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্তি করার সুযোগ থাকবে না। এবার এই উপ-কমিটির সংখ্যা দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে চূড়ান্ত হবে।

 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম রাইজিংবিডিকে বলেন, এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারনী মহল সিদ্ধান্ত নেবে।

 

প্রসঙ্গত, গত  ৯ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সম্মেলন আগামী ২৮ মার্চ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সম্মেলন সম্পন্ন হয়। গঠনতন্ত্রে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদকাল নির্ধারিত আছে তিন বছর।



 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এনআর/নওশের

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়