বাম জোটে ভাঙন
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
একসঙ্গে দুই রাজনৈতিক জোটে থাকা না থাকা বিষয়ে মতভেদের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে অবশেষে ভেঙে গেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। জোট ছেড়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন।
মঙ্গলবার (২৪ মে) বাম জোটের এক সভায় অন্যতম শরিক এই দুই দলের সদস্য পদ স্থগিতের মধ্য দিয়ে ভাঙনের শুরু হয়।
জানা গেছে, সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং জোনায়েদ সাকির গণসংহতি আন্দোলন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আরও পাঁচটি দলের সঙ্গে মিলে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায় থাকা মোর্চায় দুই শরিকের যুক্ত হওয়া বিষয় নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বাম গণতান্ত্রিক জোটে মতবিরোধ চলছিল। এ নিয়ে বামপন্থি দলের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাম জোটের নয় দলের মধ্যে সাত জনেরই আপত্তি ছিল।
উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে আলোচনার জন্য গত মঙ্গলবার রাজধানীর পুরানা পল্টনের সিপিবি কার্যালয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের জরুরি সভা ডাকা হয়। বাম জোটের সমন্বয়ক ও ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তারের সভাপতিত্বে প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই সভায় সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়।
দীর্ঘ আলোচনার পর সুস্পষ্টভাবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের নেতাদের জানান হয়, তাদেরকে যে কোনো একটি জোটে থাকতে হবে। নীতিগত কারণে দুই জোটে থাকার সুযোগ নেই।
আলোচনায় সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি জোটে তাঁদের সদস্য পদ ‘আপাতত স্থগিত’ রাখার আহ্বান জানান। পরে জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের বাম জোটের সদস্য পদ স্থগিত রাখা হয়।
সভায় সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা মানস নন্দী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা আকবর খান প্রমুখ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠণের প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি। যেহেতু এটা জাতীয় মঞ্চ, তাই বাম জোট শরিকরা নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সেখানে যুক্ত হতে পারবে বলে তারা ভেবেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে শরিক দলের অনেকের মতপার্থক্য রয়েছে। আর তাই কোনরূপ বিরোধে না জড়িয়ে বা এ নিয়ে বিভ্রান্তি এড়াতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনের সদস্য পদ আপাতত স্থগিত রাখতে বলেছি আমরা।’
অপরদিকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাম জোট সরকার পতনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যতোটা সফল হওয়ার কথা, সেটা করতে পারছে না। বৃহত্তর আন্দোলন গড়তে হলে গণতান্ত্রিক মঞ্চ তৈরির মাধ্যমেই আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এই মতের সঙ্গে বাম জোটের অন্যদের মতানৈক্যের কারণে তাঁরা নিজেরাই বলেছেন, সদস্য পদ স্থগিত রাখতে।’
সাকি বলেন, ‘আমরা বাম জোটের বাইরে গিয়ে গণতান্ত্রিক মঞ্চ তৈরির লক্ষ্যে আরও পাঁচটি দলকে সঙ্গে নিয়েছি। তবে বাম জোট যদি মনে করেন, তবে তারাও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।’
জানা গেছে, নতুন এই মোর্চায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন ছাড়াও আরও পাঁচটি দল যুক্ত হয়েছে। দলগুলো হচ্ছে- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ভাসানী অনুসারী পরিষদ, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ এবং হাসনাত কাইয়ুমের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
মেয়া/সনি
আরো পড়ুন