ইসলামী আন্দোলনের গণমিছিল
গণভোট দিন, জনতা না চাইলে আমরাও দাবি করব না: ফয়জুল করীম
বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
জুলাই সনদের ভিত্তিতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে সমস্যা হলে গণভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম।
সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বিএনপি জনতার ওপরে আস্থা রাখতে পারছে না কেন? আপনারা পিআর প্রশ্নে গণভোট দেন। জনতা যদি পিআরের পক্ষে মত না দেয় তাহলে আমরাও আর দাবি করব না।”
পিআর নির্বাচন আয়োজন, গণহত্যার বিচার ও ফ্যাসিবাদের দোসর জাপাসহ অন্যদের বিচারের আওতায় আনা এবং বিচারকালীন তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ পাচ দাবিতে বৃহস্পতিবার বায়তুল মোকাররমে আয়োজিত গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর যুগপৎ কর্মসূচিতে প্রথম রাজপথে নামে দলটি। আলাদা আলাদা কর্মসূচি হলেও জামায়াতসহ অন্যদলগুলোর পাচ দফা দাবি ও কর্মসূচি অভিন্ন। বিকেলে একই দাবিতে বায়তুল মোকাররম এলাকায় পৃথক ব্যানার নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে দলুগলো।
সমাবেশে ফয়জুল করীম বলেন, “এত রক্ষক্ষয়ী একটি গৌরবময় গণঅভ্যুত্থানের পরে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করা, হত্যাকারীর বিচার করা এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের উৎপাত বন্ধ করার মতো গণদাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করা লাগবে তা চিন্তাও করি নাই।”
“আমরা বহু বছর ধরে আন্দোলন করে আসছি। কথা বলেছি। দেশের অধিকাংশ মানুষ পিআর চায়। এখন পিআর নিয়ে আমরা রাজপথে আন্দোলন করতে চাই না। বিএনপি যদি জনতার ওপরে আস্থা রাখতে পারে তাহলে পিআরে তাদের সমস্যা কি? তারা ৯০% ভোট পেয়ে ২৭০ আসন নিয়ে এককভাবে দেশে পরিচালনা করুক; আমাদের তো সমস্যা নাই।”
ফয়জুল করীম বলেন, “আমাদের দাবি স্পষ্ট। সংস্কার করতে হবে, জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি দিতে হবে, বিচার দৃশ্যমান হতে হবে এবং পিআরে নির্বাচন হতে হবে। এটা জনতার দাবি। কেন আপনারা এই দাবি মানছেন না? সমস্যা কোথায়? নাকি ভারত চায় না বলে জুলাইয়ের আইনি স্বীকৃতি দিতে ও বিচার করতে গড়িমসি করছেন? সংস্কার ও বিচারের আগেই যদি নির্বাচন করেন তাহলে আমরা ধরে নেবো সরকার কোন দল বিশেষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।”
যুগপৎ আন্দোলনের চরিত্র তুলে ধরে দলটির নায়েবে আমির বলেন, “একই দাবিতে যার যার মতো আন্দোলন করা। যুগপৎ আন্দোলন কারো নেতৃত্বে হয় নয়। কিন্তু কেউ কেউ এই যুগপৎ আন্দোলনকে বিশেষ কোন দলের নেতৃত্বে বলে বর্ণনা করছেন। এটা যথার্থ না। সংবাদ প্রচারে আরো সতর্ক হতে হবে সাংবাদিকদের।”
মাধ্যমিকে গানের শিক্ষক নিয়োগের বিষযে তিনি বলেন, “প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনার মান খুবই খারাপ। সেখানে ভাষা, বিজ্ঞান, গণিত ও তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষক নিয়োগ না করে গানের শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিষয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, “ঐক্যমত কমিশনে আমরা বিগত ৫ মাস ৫ দিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও যখন নিম্নকক্ষে পিআরের বিষয়টা আলোচনায় আনতে ব্যর্থ হয়েছি; তখনই আমরা রাজপথে এসেছি। ঐক্যমত কমিশন বলে, ওপরের নির্দেশে পিআকে তারা এজেন্ডাভুক্ত করতে পারছে না। আমরা জানতে চাই, কারা সেই ওপরে থাকা শক্তি?”
ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা ইমতেয়াজ আলম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থান কেবল নির্বাচনের জন্য না। রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারই ছিল মূল লক্ষ্য। সেই সংস্কার এই আমলেই করতে হবে। নির্বাচনের পরে সংস্কার করার যে কথা বলা হচ্ছে তার ওপরে আস্থা রাখা যায় না। ৫ আগষ্টের পরে সামান্য সুযোগ পেয়েই সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে তাতে নির্বাচনের পরে সংস্কারের চিন্তাও করা যায় না।”
গণসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আব্দুল কাউয়ুম, মুফতি রেজাউল করীম আবরার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাকি, মাওলানা খলিলুর রহমানসহ কেন্দ্র ও মহানগর নেতারা।
সমাবেশ শেষে গণমিছিল মিছিল শুরু হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররমে এসে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়।
শুক্রবার একই দাবিতে বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় বাড্ডা ও ধোলাইখাল এলাকায় দুইটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে । ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম উভয় সমাবেশ উপস্থিত থাকবেন বলে দলটি জানিয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ