কিভাবে বুঝবেন যে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা অ্যালঝেইমারস রোগ?
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : বয়স বিশের দিকে যখন আমরা কোনো প্রিয় মুভির আকর্ষণীয় চরিত্রের নাম স্মরণ করতে পারি না, তখন আমরা বিষয়টিকে মজা হিসেবে নিই। বয়স ত্রিশের দিকে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আমরা বিষয়টিকে ‘ব্রেইন ফ্রিজ’ বলি। বয়স চল্লিশের দিকে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা এটাকে ‘সিনিয়র মোমেন্ট’ হিসেবে হাসি-তামাশা করি।
এতো গেল হাসি-তামাশার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো- আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা হাসি নয়, দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। কারণ এ প্রবণতা অশুভ কিছুর ইঙ্গিত হতে পারে। যারা স্বাস্থ্য নিয়ে মোটামুটি ধারণা রাখেন, তাদের মনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেতিবাচক প্রশ্নের উদয় হতে পারে: আমি কি স্মৃতিশক্তি হারাচ্ছি? অথবা এটা কি অ্যালঝেইমারস রোগের কোনো লক্ষণ?
আপনার জন্য আশ্বস্তের খবর হলো: যদি আপনি আপনার ভুলে যাওয়ার প্রবণতা শনাক্ত করতে পারেন, তাহলে তা খুব ভালো লক্ষণ- অন্ততপক্ষে অ্যালঝেইমারস অথবা অন্যান্য ধরনের ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে। নিশ্চিত হোন যে আপনার ডিমেনশিয়া ও অ্যালঝেইমারসের মধ্যে পার্থক্য জানা আছে। কানাডার সেন্টার ফর অ্যাডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা তেমন একটা ভয়ের কারণ নয়, যদি আপনি নিজের এ প্রবণতা শনাক্ত করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি ভুলে যাওয়ার এ প্রবণতা শনাক্ত করতে না পারেন, তাহলে তা দুশ্চিন্তা করার মতো বিষয়।
অন্যভাবে বলা যায়, নিজের স্মৃতিশক্তি হারানো সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারা একটি ভালো অনুমানকারী হতে পারে যে আপনার অ্যালঝেইমারস বিকশিত হচ্ছে না। এ গবেষণাটি জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত হয়।
এ গবেষণায় গবেষকরা অ্যালঝেইমারসের একটি তত্ত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেন: অ্যালঝেইমারস রোগের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এ অসুস্থতা সম্পর্কে রোগীদের সচেতনতার ঘাটতি, অর্থাৎ তারা নিজেরাই বুঝতে পারে না যে তাদের অ্যালঝেইমারস রোগ আছে (মেডিক্যালের ভাষায় এটাকে অ্যানোসোগনোসিয়া বলে)। গবেষকরা মিল্ড কগনিটিভ ইম্পেয়ারমেন্ট আছে এমন লোকের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা শনাক্ত করতে না পারাকে অ্যালঝেইমারস রোগের পরিপূর্ণ বিকাশের ভবিষ্যৎবক্তা বলা যায় কিনা তা উদঘাটনের চেষ্টা করেছেন। মিল্ড কগনিটিভ ইম্পেয়ারমেন্টের মানে হলো- স্মরণ করতে, নতুন কিছু শিখতে, মনোযোগ বসাতে অথবা সিদ্ধান্ত নিতে সামান্য সমস্যা হওয়া। এ গবেষণায় তাদেরকে মিল্ড কগনিটিভ ইম্পেয়ারমেন্টের গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যাদের মানসিক অবস্থা, আমরা যাদেরকে সুস্থ বলে বিবেচনা করি তাদের মতো ছিল, কিন্তু এ গ্রুপের লোকদের স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় উপাদানের ঘাটতিজনিত স্মৃতিশক্তি হ্রাস বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা ছিল।
গবেষকরা ৫৫ থেকে ৯০ বছর বয়সের ১,০৬২ জন লোকের উপাত্ত ব্যবহার করেন, যা ১২ বছর ধরে রেকর্ড করা হয়েছে। তারা এসব উপাত্ত সংগ্রহ করেন অ্যালঝেইমারস ডিজিজ নিউরোইমেজিং ইনিশিয়েটিভ থেকে। এসব উপাত্তের মধ্যে মস্তিষ্কের স্ক্যান অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা গবেষকরা শরীরে নিম্নমাত্রায় গ্লুকোজ শোষণের দৃষ্টিলব্ধ লক্ষণ খুঁজে পেতে ব্যবহার করেন। নিম্নমাত্রায় গ্লুকোজ শোষণের কারণে মস্তিষ্কের কার্যক্রম কমে যায়, যা অ্যালঝেইমারস রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। প্রত্যাশানুযায়ী অ্যালঝেইমারস রোগীদের গ্লুকোজ শোষণের মাত্রা কম ছিল। গবেষকরা আরো যা আবিষ্কার করেন তা হলো- মিল্ড কগনিটিভ ইম্পেয়ারমেন্টে ভোগা লোকদেরও গ্লুকোজ শোষণের মাত্রা কম ছিল- এসব লোকদের মধ্যে তাদের নিজেদের অসুস্থতা সম্পর্কে অসচেতনতার প্রমাণও পাওয়া গেছে। শেষ পর্যন্ত গবেষকরা পেয়েছেন যে, যাদের অসুস্থতা সম্পর্কে সচেতনতা ছিল না তাদের অ্যালঝেইমারস রোগের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি ছিল।
গবেষণাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, যেসব রোগীর অ্যালঝেইমারস রোগ বিকাশের সম্ভাবনা নেই তাদেরকে শনাক্ত করতে অ্যানোসোগনোসিয়ার অনুপস্থিতি ক্লিনিক্যালি গুরুত্বপূর্ণ। এ গবেষণার ফলোআপ হিসেবে গবেষকরা সেসব বয়স্ক রোগীদের ট্র্যাক করবেন যারা অ্যালঝেইমারস রোগ প্রতিরোধের জন্য ব্রেইন ট্রেনিং এক্সারসাইজ ও ব্রেইন স্টিমিউলেশনের মতো ইন্টারভেনশনে (মেডিক্যাল ডিসঅর্ডার উন্নয়নের পদক্ষেপ) আছেন। এ ফলোআপের উদ্দেশ্য হলো, অ্যানোসোগনোসিয়ার উন্নয়ন ও অ্যালঝেইমারস রোগের পূর্ণ বিকাশের অগ্রগতি প্রতিরোধে ইন্টারভেনশন ভূমিকা রাখতে পারে কিনা তা যাচাই করা।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
পড়ুন :
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৯/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন