ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কোন মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন?

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২২ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:২৯, ২২ নভেম্বর ২০২০
কোন মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন?

কেবলমাত্র দাঁত ব্রাশ করলেই মুখের স্বাস্থ্যবিধি পরিপূর্ণ হয় না। দাঁত ব্রাশে মুখের স্বাস্থ্যবিধি ২৫ শতাংশ মেনে চলা হয়। এতে মুখের ভেতর, মাড়ি ও জিহ্বা পরিষ্কার হয় না। কিন্তু মাউথওয়াশ সেসব স্থানে পৌঁছতে পারে যেখানে ব্রাশিং ও ফ্লসিং সম্ভব নয়।

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ ও ফ্লসের পাশাপাশি মাউথওয়াশের ব্যবহারে দাঁতে প্লেক বা হলুদ আস্তরণ, মাড়িতে রোগ ও মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ হবে। বেশিরভাগ ডেন্টিস্ট দাঁত ব্রাশের পর এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে মাউথওয়াশ করতে বলেন, ফলে টুথপেস্টের প্রোটেক্টিভ ফ্লুরাইড ধুয়ে যাবে না। মাউথওয়াশ কেনার আগে নিশ্চিত হতে হবে যে কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন। এখানে উদ্দেশ্যের প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে কোন মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত তা সম্পর্কে বলা হলো।

* মাড়ির রোগে যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন: মাড়ির রোগে মাড়িতে ব্যথা, ক্ষত, ফোলা ও পুঁজ হতে পারে। দাঁত ব্রাশের পর মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এসময় একটি এন্টিসেপ্টিক মাউথওয়াশের ব্যবহার সহায়ক হতে পারে। অধিকাংশ মাউথওয়াশে অল্প মাত্রায় এন্টিসেপ্টিক ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে। দাঁতের চিকিৎসকেরা তীব্র মাড়ির রোগে বেশিরভাগ সময় ক্লোরহেক্সিডাইন ০.২% রয়েছে এমন মাউথওয়াশ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। মাউথওয়াশটি মুখের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণ উভয়ক্ষেত্রে কার্যকর। মাউথওয়াশের অন্যান্য এন্টিসেপ্টিক ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো সিটাইলপাইরিডিনিয়াম ও হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, যা মৃদু মাড়ির রোগে সহায়ক হতে পারে।

* প্লেক প্রতিরোধে যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন: দাঁতের পৃষ্ঠের ওপর যে সাদা ও হলুদ আবরণ দেখা যায় তাকে প্লেক বলে। দাঁতের প্লেকে ব্যাকটেরিয়া থাকে যা দাঁতকে ক্ষয়ে দিতে পারে ও মাড়িতে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তাই দাঁতের স্বাস্থ্যবিধি ভালোভাবে মেনে চলে প্লেক দূর করতে হবে। নিয়মিত মাউথওয়াশ ব্যবহারে প্লেকের গঠন প্রতিরোধ হতে পারে ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে। জিংক ক্লোরাইড, ট্রাইক্লোসান ও সিটাইলপাইরিডিনিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে এমন মাউথওয়াশ ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রম ও প্লেক গঠন কমাতে পারে। প্লেক গঠন কমাতে থাইমল, ইউক্যালিপটল ও মেনথলের মতো এসেনশিয়াল অয়েলও কার্যকর। এসব এসেনশিয়াল অয়েল প্লেকের ভেতর ঢুকে কাজ করে। একারণে অধিকাংশ মাউথওয়াশে এসেনশিয়াল অয়েল অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

* মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন: কিছু মাউথওয়াশ মুখের দুর্গন্ধকে ছাপিয়ে যেতে সাহায্য করে, আবার কিছু মাউথওয়াশ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন সালফারের গন্ধকে নিষ্ক্রিয় করে। মুখ থেকে প্রায়সময় দুর্গন্ধ বের হলে সিটাইলপাইরিডিনিয়ামের মতো এন্টিসেপ্টিক এবং থাইমল বা মেন্থলের মতো এসেনশিয়াল অয়েল রয়েছে এমন মাউথওয়াশ ব্যবহার করে দেখতে পারেন। মুখের শুষ্কতাও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে। লালার ঘাটতি হলে মুখের ভেতরের স্তরে ড্যামেজ হয় ও দাঁত ক্ষয়ে যায়। এর ফলে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। স্যালাইভা রিপ্লেসমেন্ট স্প্রে অথবা ময়েশ্চারাইজিং মাউথওয়াশের ব্যবহারে মুখের দুর্গন্ধ কমতে পারে।

* দাঁতের চিকিৎসার পর ব্যথা কমাতে যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন: দাঁতের চিকিৎসার পর মুখে ব্যথা করলে অথবা মুখে যন্ত্রণাদায়ক আলসার থাকলে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে এমন মাউথওয়াশ ব্যবহারে স্বস্তি পেতে পারেন। তেমন একটি প্রদাহনাশক হলো বেনজাইডামিন। বেনজাইডামিন মুখের ফোলা ও প্রদাহ কমায়। এর ফলে ব্যথাও কমে। বেনজাইডামিন থেকে হালকা এনেস্থেটিক ইফেক্টও পাওয়া যায়, যা মাড়ির ব্যথাকে অসাড় করতে পারে। বেনজাইডামিন রয়েছে এমন মাউথওয়াশ স্বল্পমেয়াদে ব্যবহার করা হয়, সাধারণত সাতদিনের বেশি নয়।

* দাঁত সাদা করতে যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন: যেসব মাউথওয়াশ দাঁতকে সাদা করতে পারে বলে দাবি করা হয় তাতে প্রায়ক্ষেত্রে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ও সোডিয়াম ফ্লুরাইড থাকে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দাঁতের দাগ দূর করতে ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দাগ দূর করে ফেলে বলে দাঁতকে সাদা ও উজ্জ্বল দেখায়। দাঁত সাদাকরণ টুথপেস্টের পাশাপাশি দাঁত সাদাকরণ মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে দাঁত আরো সাদা ও উজ্জ্বল হবে। মাউথওয়াশ ব্যবহারে দাঁত সাদা করাই মুখ্য উদ্দেশ্য হলে বেশি পরিমাণে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রয়েছে এমন মাউথওয়াশ কিনতে পারেন।

* দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে যে মাউথওয়াশ ব্যবহার করবেন: মাউথওয়াশে সোডিয়াম ফ্লুরাইড অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটি প্রতিরোধে সক্ষম। সোডিয়াম ফ্লুরাইড দাঁতের সারফেসকে প্লেকের ব্যাকটেরিয়া জনিত ড্যামেজ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া মুখের চিনি খেয়ে বেঁচে থাকে ও এসিড উৎপাদন করে। এসব এসিড ডিমিনারেলাইজেশনের মাধ্যমে দাঁতের এনামেলকে ধ্বংস করে। ফ্লুরাইড, ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মতো মিনারেল পুনরায় এনামেলে জমা হয়। এই প্রক্রিয়াকে রিমিনারেলাইজেশন বলে। দাঁতের ক্ষয় এড়াতে রিমিনারেলাইজেশন ও ডিমিনারেলাইজেশনের মধ্যে ভারসাম্য থাকা দরকার। দাঁতে সরাসরি ফ্লুরাইড প্রয়োগ করলে রিমিনারেলাইজেশন প্রসেস দ্রুত হবে। এর ফলে দাঁতের এনামেল আরো মজবুত হবে। ফ্লুরাইড মাউথওয়াশ ব্যবহারের পর কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মধ্যে কিছু খাবেন না বা পান করবেন না, অন্যথায় দাঁত থেকে ফ্লুরাইড দূর হয়ে যাবে।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়