ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঋণ পুনঃতফসিলে বড়রা চুপ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১১ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঋণ পুনঃতফসিলে বড়রা চুপ

কেএমএ হাসনাত : খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে শিথিলতার সুযোগ নিয়ে ব্যাংকগুলোতে আবেদনের হিড়িক পড়েছে। উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর থেকেই ঋণখেলাপিরা ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ব্যাংক পাড়ায় ধরনা দিচ্ছেন। তবে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বড় ঋণগ্রহীতারা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ মুহূর্তে ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, বরং তাদের পুনঃতফসিলের সুযোগ দেয়া হয়েছে। আশা করছি, এতে তারা সাড় দেবেন। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের পুরো বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এ বিভাগের একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। তাদেরকেই পুরো বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পুনঃতফসিলের সুযোগ ঋণখেলাপিরা ঠিকমতো কাজে লাগাচ্ছেন কি না তা কমিটি নিয়মিত পর্যালোচনা করছে।

এর আগে ঋণখেলাপিদের ব্যাপক সুবিধা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করলেও আদালত তা আটকে দেন। পরে শর্তসাপেক্ষে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবার একই সার্কুলার জারি করা হয়। সার্কুলার জারির পর খেলাপিরা তাদের ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য বিভিন্ন ব্যাংকে অবেদন করা শুরু করেন। বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে এ আবেদন বেশি পড়ছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সবার আগে এ সুবিধা পেতে খেলাপিরা তদবিরও করছেন। কারণ, তাদের মনে ভয়, আবার যদি আদালতে এ সিদ্ধান্ত আটকে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে বড় খেলাপিরা তেমন সাড়া দিচ্ছেন না। কারণ, তারা পুরো বিষয়টি আগে পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে মাঝারি ও ক্ষুদ্রঋণ খেলাপিরা তাদের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য আবেদন করছেন বেশি।

রাষ্ট্রীয় সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংকের বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, জনতা ব্যাংকের ৩৪ ঋণখেলাপি ৫২ কোটি টাকা দিয়ে পুনঃতফসিল সুবিধার আবেদন করেছে। এদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা। আরো ৪০০ ঋণখেলাপি রয়েছেন, যারা এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এ পর্যন্ত ৮০ জন এ সুবিধা নিয়েছেন। কয়েক দিন আগে এক দিনে ৪২ জন গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা নিয়েছেন। এদের ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ ৪ কোটি টাকা।

আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ৩৫ গ্রাহক ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধার জন্য আবেদন করে ৪ কোটি ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। এছাড়া, দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালীতেও বড় গ্রাহকদের চেয়ে ছোটরা ভালো সাড়া দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, আদালতের স্থগিতাদেশ উঠে যাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ দ্রুত ৯ সদস্যের একটি তদারক কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. শুকুর আলীকে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব (অভ্যন্তরীণ ও বহিঃনিরীক্ষা শাখা) মৃত্যুঞ্জয় সাহা সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব কামরুন নাহার সিদ্দীকা, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির, সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মো. এবনুজ জাহান, জনতা ব্যাংকের ডিএমডি মো. ইসমাইল হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি মো. ইউসুফ আলী, রূপালী ব্যাংকের ডিএমডি বেলায়েত হোসেন এবং বেসিক ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাসুদ-উর রহমান।

এই কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১৬ মে জারিকৃত বিআরপিডির সার্কুলার নম্বর ৫ এর আওতায় ঋণ পুনঃতফসিল এবং এককালীন এক্সিট-সংক্রান্ত কার্যক্রমের হালনাগাদ অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে। পাশাপাশি কমিটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবে। তবে এ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে তা এতে উল্লেখ করা হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ঋণখেলাপিরা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। ঋণের অবস্থা, পরিশোধের ধরনসহ বিভিন্ন বিষয় যাচাই-বাছাই করে এটি পুনঃতফসিলের যোগ্য কি না তা সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংক পর্ষদ। পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ কমিটি গঠনের ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক নয়, বরং এ কমিটিই ঋণখেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন অনুমোদনের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো তা যাচাই-বাছাই করবে। এসব বিষয় চূড়ান্ত করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ আগস্ট ২০১৯/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ