ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনায় বাড়ছে মৃত্যু, সামাজিক দূরত্বে গুরুত্ব দিলেন বিশেষজ্ঞরা

আরিফ সাওন ও আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ১০ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনায় বাড়ছে মৃত্যু, সামাজিক দূরত্বে গুরুত্ব দিলেন বিশেষজ্ঞরা

দিন দিন দেশে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত মানুষ ও মৃতের সংখ্যা। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এখন সবচেয়ে বড় প্রতিষেধক হচ্ছে একজন থেকে আরেকজনের সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব।

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় গত ১৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে আইইডিসিআর।

আর আজ একদিনে সবচেয়ে বেশি ৬ জনের মৃত্যুর খবর দিলো প্রতষ্ঠানটি। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আইইডিসিআর।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৯৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসে উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর আগে ৩৩০ জন আক্রান্ত ছিল। এ নিয়ে দেশে আক্রান্তে সংখ্যা ৪২৪ জনে দাঁড়িয়েছে।

৪ এপ্রিল থেকে দেশে করোনা রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। ৪ এপিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে ৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুর হারও বাড়তে শুরু করে। ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ছয়জন মারা যান। ৪ এপ্রিল থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত আরো ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৬ এপ্রিলই তিনজন মারা যায়। এরপর থেকে আক্রান্ত আর মৃত্যু শুধু বাড়তেই থাকে।

৭ এপ্রিল ৪১ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৫ জন। ৮ এপ্রিল ৫৪ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ৩ জন। ৯ এপ্রিল ১১২ জন আক্রান্ত হয়, মারা যায় ১ জন এবং ১০ এপ্রিল ৯৪ জন আক্রান্ত হয়, ৬ জনের মৃত্যুর বিষয়ে জানানো হয়।

দিনদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, পুরোটাই উদ্বেগের। যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে, এর চেয়ে আর উদ্বেগের কি হতে পারে।

এর থেকে পরিত্রাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন দায়িত্ব আছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরর দায়িত্ব হচ্ছে বেশি বেশি করে তারা যাতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে। বেশি বেশি পরীক্ষা করলে হবে কি আক্রান্তরা দ্রুত শনাক্ত হবে। শনাক্ত হলে তাদের আলাদা করে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদেরকেও পৃথক করে আইসোলেশনে রাখা, তাদের পরীক্ষা করা। যথাযথভাবে কোয়ারেন্টাইন করানো। আমাদের মনে রাখতে হবে এখন সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে - আমাদের দূরত্ব বজায় রাখা। আমরা যদি একজন থেকে আরেকজনের দূরত্ব বজায় রাখে তাহলে এই ভাইরাসটি দ্রুত ছড়াতে পারবে না। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বই পারে ৫০ শতাংশ মৃত্যু কমাতে।’

প্রথম থেকেই সেইভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে যদি আমরা যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারতাম, তাহলে আমাদের উদ্বেগের জায়গাটা একটু কম থাকতো। শুরুতেই যে কাজগুলো করার দরকার ছিল। এখন দেখছি নতুন করে সেই কাজগুলো করা হচ্ছে। আমি বলব, ভবিষ্যতে যেন আমরা এরকম ভুল আর না করি। ভুলগুলো শুধরে নিয়ে আমাদের সামনের দিকে সকলের সুরক্ষার বিষয়ে ভাবতে হবে কাজ করতে হবে।’

এখন ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।কিন্তু ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলেও তো মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে । তিনি পুরোপুরি লকডাউনের তাগিদ দেন। সেই সাথে লকডাউন এর সময় মানুষের যেসব প্রয়োজনীয় জিনিস, খাদ্য সামগ্রী দরকার, তা ব্যবস্থা করার জন্য সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শুধু সরকারকে নিলে হবে না, পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের যারা আছেন, তাদেরকে ও দূরত্ব বজায় রেখে এসব কাজে অংশ নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে নিয়মাবলী এসব বিষয়ে পালনে কঠোর হতে হবে। পশু পাখির ডিম মাংস ভালো করে সিদ্ধ খাওয়া, ঘনঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করা এবং ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।

আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমাদের প্রথম টার্গেটই হচ্ছে পরীক্ষা করে আক্রান্তদের আলাদা করা। সেজন্য আমরা পরীক্ষা বাড়িয়েছি।’

করোনার চলমান পরিস্থিতিতে শুধু বাইরে নয়; ঘরের মধ্যেও ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক অধ্যাপক সোনিয়া তাহমিনা।

স্বাস্থ্য বুলেটিনে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় পরামর্শ দিচ্ছি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার। লকডাউন করছি, কোয়ারেন্টাইন করছি। আমি বলবো না সামাজিক দূরত্ব। সামাজিক দূরত্বটা আমরা করছিনা। আমরা করছি শারীরিক দূরত্ব। একজন আরেকজন থেকে কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব থাকবো। বাসার বাইরে তো অবশ্যই । আমরা মনে করি বাসার ভিতরে এটাই থাকা উচিত।’

তিনি বলেন, আমরা জানিনা, ‘কে এই মুহূর্তে আক্রান্ত আছেন। বাসার ভিতরে আমরা একজন থেকে আরেকজন ৩ ফুটের বেশি দূরত্বে থাকবো।  একান্ত প্রয়োজন না হলে আমরা বাসার বাইরে যাব না।’


ঢাকা/সাওন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়