‘জ্ঞানের বাতিঘরকে হারিয়েছি’
বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক, গবেষক, জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে দেশের প্রতিটি অঙ্গনে। শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সমাজের অন্যতম চিন্তানায়ক যতীন সরকার বলেন, আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের মৌলিক চিন্তার যে পণ্ডিত ছিলেন, এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। তিনি আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে অসাধারণ অবদান রেখে গেছেন। আমরা কখনোই তাকে হারানোর শূন্যস্থান পূরণ করতে পারব না। তার আত্মজীবনীতে তিনি যে সমস্ত বিষয়গুলো রেখে গেছেন, সেগুলোকে বাঙালি জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।
বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, আনিসুজ্জামান স্যার শুধু বাংলাদেশের নয়, তিনি এ উপমহাদেশের একজন মহান পণ্ডিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের হয়ে বিশ্ব দরবারে বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক বিশাল প্রতিনিধিত্বের অংশীদার ছিলেন। এমন একটা মানুষকে হারানো আমাদের জন্য সত্যিই অনেক বেদনার। আমরা অনেক বড় সম্পদকে হারালাম। ছাত্র অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ, দেশের অগ্রযাত্রা প্রতিটি ক্ষেত্রে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। সব সময় দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সংস্কৃতিকে আরো শানিত করার জন্য তার অবদান অনস্বীকার্য।
কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমার শিক্ষক ছিলেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, বাহাত্তরের সংবিধান, দেশের অগ্রযাত্রা প্রতিটি এ মহান ব্যক্তির অংশগ্রহণ ছিল। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।
ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, হয়তো বয়সের বিবেচনায় তিনি আমাদের থেকে চলে গেছেন। কিন্তু তার মতো এমন একটি অসাধারণ পণ্ডিতকে আমাদের জন্য আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা প্রয়োজন ছিল। শুধু বাংলা সাহিত্য নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি আমাদের জন্য যে দিক-নির্দেশনা, যে কর্মযজ্ঞ রেখে গেছেন, সেগুলো আমাদের জীবনে চলার পাথেয় হয়ে থাকবে।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো একজন মানুষ চলে যাওয়া আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য অত্যন্ত বড় মাপের ক্ষতি। তিনি আমাদের বাংলা একাডেমির সভাপতি ছিলেন। তার দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরেছি। আমরা যতদিন তাকে পেয়েছি ততদিন আমাদের মাথার ওপর একজন অভিভাবক ছিলেন। আজ আমরা সেই অভিভাবককে হারিয়ে ফেললাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের একটি বাতিঘর, উজ্জ্বল নক্ষত্রকে আমরা হারিয়েছি। এমন ক্ষতি আমাদের হয়েছে— যা আসলে কখনো পূরণ হবার নয়। একজন শিক্ষানুরাগী, সাহিত্য, সংস্কৃতি, যেকোনও প্রতিভার জন্য যিনি ছিলেন সর্বাগ্রে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার ছিলেন আমাদের অভিভাবক। আমরা এমন একজন অভিভাবককে হারিয়েছি, আমার যতদিন পর্যন্ত স্যারের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে, ততদিন দেখেছি তিনি ছোট বড় সবাইকে খুব সম্মান দিতেন। সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন। তিনি যে একজন বড় মাপের শিক্ষানুরাগী ছিলেন, তার প্রতিটি কার্যক্রমে সেটি প্রকাশ পেত।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ড. আনিসুজ্জামান ছিলেন এক উজ্জ্বল বাতিঘর। তার মতো কিংবদন্তী শিক্ষাবিদের মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তার শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবার নয়। শিক্ষাক্ষেত্রে তার অনবদ্য অবদান ও তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন তাকে স্মরণীয় করে রাখবে। তিনি দেশের উচ্চশিক্ষার একজন অভিভাবক ছিলেন। নানা সময়ে দেশের উচ্চশিক্ষাকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে নিয়ে যেতে কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন। জাতীয় এ সংকটময় মুহূর্তে আমরা দুজন জাতীয় অধ্যাপককে হারালাম। এ শোক সহজে ভোলার নয়।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আনিসুজ্জামান এর মৃত্যুতে দেশ একজন স্বনামধন্য, প্রথিতযশা ও কিংবদন্তি শিক্ষাবিদ হারালো, যিনি শিক্ষকতা, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও এ ভূখণ্ডে ধর্মান্ধতা এবং মৌলবাদবিরোধী নানা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে গেছেন।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আর নেই
ইয়ামিন/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন