নোয়াখালীতে আ.লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল: সমাধান কোন পথে?
এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম
দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে দলের কেন্দ্র থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরিস্থিতি দিনদিন আরও জটিল হচ্ছে। বিবদমান দুই গ্রুপই প্রভাবশালী ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠজন এবং তার নির্বাচনি এলাকা হওয়ায় পদক্ষেপ নিতে কেন্দ্রীয় নেতারা বিব্রত হচ্ছেন। দলের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা চান, কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে দ্রুত শান্ত হোক উত্তপ্ত এই রাজনীতি। না হলে অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোনো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর সাংঘর্ষিক রাজনীতির সমাধান কোন পথে- সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ‘স্পর্শকাতর’ ইস্যু হওয়ায় কর্মীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতারা এখন চেয়ে আছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে।
বছরের শুরুতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার জেলার রাজনীতি নিয়ে করা মন্তব্য দিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। স্থানীয় নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনার পাশাপাশি সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ও তার বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও অব্যাহত মন্তব্য, অভিযোগ করতে থাকেন তিনি। এই মন্তব্যগুলোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে শুরু হয় বাকযুদ্ধ। এরই সূত্র ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসে তারা কথা বলেন পরস্পরবিরোধী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাকযুদ্ধ রূপ নেয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীগঞ্জে আব্দুল কাদের মির্জা ও মিজানুর রহমান বাদলের সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় স্থানীয় এক সাংবাদিক নিহত হন। এরপর থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বসুরহাট পৌর এলাকা। সর্বশেষ দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহতসহ অর্ধশত আহত হয়েছেন। একের পর এক হামলা, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় আতঙ্কিত এখন সংশ্লিষ্ট এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারিও করতে হয়েছে।
এদিকে, নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতির এই কাদা ছোড়াছুড়ির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। স্থানীয় রাজনীতি ছাপিয়ে এর আলোচনা এখন ছড়িয়েছে দেশব্যাপী। এই পরিস্থিতি শান্ত করতে কেন্দ্র কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা জানতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুজন সদস্য, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়। তারা কেউ-ই এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, তারা বলেছেন, বিষয়টির দ্রুত সমাধানে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
দলীয় একটি সূত্র বলছে, নোয়াখালীর স্থানীয় রাজনীতির এই বিভেদ খুব পুরনো। স্থানীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টানাপড়েন চলছে দুই গ্রুপের মধ্যে। এর একপক্ষে রয়েছেন বসুরহাটের পৌরমেয়র কাদের মির্জা, অন্যদিকে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। আর তার পক্ষে আছেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী এবং ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী। কার্যত একরামুল করিম চৌধুরী ও কাদের মির্জার সংঘাতই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
দলীয় সূত্রটি বলছে, কাদের মির্জা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই; আর তার প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য। এ কারণে তারা কোনো মন্তব্য না করে বিষয়টি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছেন। স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা এরই মধ্যে বিষয়টি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নজরে এনেছেন।
এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) জানিয়েছি। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছি। তিনি বিষয়টি সমাধানের বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’
ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরও একইভাবে বিষয়টি জানালেও কেউ-ই এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি জানিয়ে খায়রুল আনম সেলিম বলেন, ‘অনেকবার তাদের বলেছি, নোয়াখালীর বিষয়টি সুরাহা করে দিন। কিছুই হচ্ছে না। অবশেষে নেত্রীকে জানিয়েছি। এখন আমরা তার আদেশের অপেক্ষায় আছি।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি দলের নেত্রী শেখ হাসিনা দেখছেন।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আশা করছেন, দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। দ্রুতই পরিস্থিতি শান্ত হবে।’
কোম্পানীগঞ্জে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার পর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের পরিচয় না দেখে আইনের আওতায় আনা হবে। যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট গঠনের জন্য নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ রিপোর্ট এলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বলেও তিনি জানান।
পারভেজ/এনই
আরো পড়ুন