ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

স্বামীহারা সঞ্চিতার কান্নার জল মুছে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩০, ৭ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২১:৪০, ৭ জুলাই ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ন প্রকল্পের’ মাধ্যমে গত ছয় মাসে জমির সঙ্গে স্থায়ী পাকা ঘরের মালিকানা পেয়েছেন এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি পরিবার। এছাড়া সমাজের পিছিয়ে পড়াদের নিয়ে রয়েছে সরকারের পৃথক প্রকল্প।  এসব প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী পাচ্ছে ভালো থাকার নিশ্চয়তা। বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনযাত্রার মানও। বাদ যাচ্ছে না সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীও। তাদের জন্যও সরকারের রয়েছে নানা পদক্ষেপ, প্রকল্প।  রুপকল্প-২০৪১ কে সামনে রেখে পিছিয়ে পড়াদের এগিয়ে আনতে সরকারের নেওয়া এসব কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে উপকারভোগী হচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত এই মানুষগুলো তা সরেজমিনে দেখেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ।  ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে এসে পরিবর্তনের সেসব গল্পের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

সেদিন ছিলো শুক্রবার। কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। মেঘের হুঙ্কার, সাথে মাতাল বাতাস। তাতে কি, আবহাওয়ার এই রুদ্রমূর্তি কি আর দিনমজুরদের চোখ রাঙাতে পারে? তাহলে  তো মুখে ভাত উঠবে না। ঘরে বৃদ্ধ মা-বাবা, স্ত্রী আর দুই মেয়েকে রেখে তাই প্রতিদিনের মতোই কাজে বেরিয়েছিলেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার রশিদপুর গ্রামের মাধব চাষা। সেই যাওয়াই শেষ যাওয়া ছিলো তার। ঝড়ের কবলে গায়ে গাছ পরে মারা যান তিনি।

মাধবের মৃত্যু সংবাদ যখন পরিবারের কাছে পৌঁছায় তখন শোকে পাথর পুরো পরিবার। এক ঘটনায় ছেলে হারালো বৃদ্ধ বাবা-মা, স্বামী হারালো স্ত্রী আর বাবা হারালো ছোট্ট দুই মেয়ে। যেকোনো মৃত্যুই বেদনার, কিন্তু মাধবের এই মৃত্যু নাড়া দেয় পুরো এলাকায়।

হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা শুনে ছুটে আসেন বাহুবল উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নিগ্ধা তালুকদার। শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সহমর্মিতা জানানোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তাদের জন্য কিছু করার আশ্বাস দেন। 

ছোট্ট কুঁড়ে একটি ঘর ছিলো যেখানে, সেখানে এখন পাকা ঘর।  মাটির যে দেয়াল মাটির পলেস্তার খসে খসে পরতো, সেখানে এখন সিমেন্টের দেয়ালে স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা। যে ছনের চাল ভেদ করে ঘরে পড়তো পানি, সেখানে এখন টিনের চালে বৃষ্টির ছন্দে আগামীর স্বপ্ন বোনে ছোট্ট পুস্পিতা।

বাবা মারা গেছেন তা জানে এই ছোট্ট পুস্পিতা। কিন্তু তার ছোট বোন তা হয়তো উপলব্ধিই করতে পারে না। ক্লাস থ্রিতে পড়া পুস্পিতাকে যখন জিজ্ঞেসা করা হলো বড় হয়ে কি হতে চায় সে, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে।  মিনিট দু’য়েক পরে চোখ মুছে জানায়, বড় হয় ডাক্তার হতে চায় সে।

স্বামী হারানোর শোক এখনও পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি সঞ্জিতা চাষা। তবে সব হারানো তাদের সবকিছু করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। এখন চা বাগানে কাজ করেন। পান বিধবা ভাতাও। পান আরো সরকারি সহযোগিতাও।

কেমন আছেন এখন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চা বাগানে কাজ করি স্যার। দুইটা মেয়ে আছে। ঘর পেয়েছি। সবাইকে নিয়ে ভালোই আছি। আগেই তো কলাম, সরকার আমাগো ঘর করে দিছে।  বাড়িঘর সব সরকার করে দিছে। শশুর-শাশুড়ি নিয়ে ভালো আছি স্যার। একটা মেয়ে পড়াশোনা করে।  প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ স্যার।’

আগের কষ্টের জীবনের চেয়ে এখন অনেক ভালো আছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাধবের মা বিশখা চাষা বলেন, ‘আগে ভাঙাচোরা ঘর, এদিক-ওদিক দিয়ো পানি যাইতো, এরহম আছিলো। এখন ভগবানে ভালোই রাখছে।  আর ঘর যে দিছে আমাগো বাঁচায় দিছে। আমারে দেইখা গেলো যেমন আরও সবাইকে দেইখা যাক। ভগবান তারে দুনিয়াতে বাঁচাই রাখুক।  ভগবানে তারা ভালা রাখুক।’

ছেলেন মৃত্যুদিনের সেই স্মৃতি মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা হন্নু চাষা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শুক্রবার দিন ছিলো। ঝড়তুফান আসে। আমার ছেলের ওপর গাছ পড়ে।  বেলা ১১ টা ১২টা হবে।  আহত হইলো। টিএনও স্যার আসলো সাথে সাথে।  ভাঙা ঘর তালি দিয়ে তাকি। কষ্ট ভোগ করতি হয়। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী একটা ঘর দিয়েছে, ধন্যবাদ দেই।’

তবে এই দুর্দিনে সরকার প্রধান শেখ হাসিনার মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় হাত জোর করে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এই ঘরে থাকি, বউ-নাতি নিয়ে বুড়া-বুড়ি খুব ভালো থাকি।’

এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইয়াকুব আলী জানান, সরকার বিপদগ্রস্ত এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। সব ধরনের সাহায্য–সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সব হারানোর মানুষগুলো এখন কষ্ট বিদায় জানিয়ে সুখের অনুভূতি পায়। তিনি নিজেও সব সময় খেয়াল রাখেন তাদের প্রতি। 

দুর্ঘটনায় মাধব চাষা মারা যাওয়ার পর থেকেই ছায়ার মতো পরিবারটির খোঁজ খবর এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন বাহুবল উপজেলা ইউএনও স্নিগ্ধা তালুকদার।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরই আমি এখানে আসি। তাদের আসলে কি বলে তখন স্বান্ত্বনা দেওয়া যায়, সেটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি তাদের কথা দিই যে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলে আপনাদের জন্য কিছু করে দেবো। পরে প্রধানমন্ত্রী একটি প্রকল্পের আওতায় ঘরটি বরাদ্দ দেই।  বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দিই।  চা বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে চা বাগানে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিই।  এছাড়াও সব ধরনের সহযোগিতা করছি, প্রতিনিয়ত খবর রাখছি।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে নারীর ক্ষমতায়ন করেছেন এবং একজন দুঃস্থ নারী তার পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার যে সাহসের বিষয়টি; সরকারের যেসব প্রকল্প রয়েছে এসবের মাধ্যমে আসলে মহিলাটিকে একটি সহযোগিতা করা গেছে।’

আরও পড়ুন: নতুন ঘরে সুন্দর জীবনের গল্প বুনছেন তারা

উপকার‌ভোগী স‌ঞ্চিতার প‌রিবা‌রে সদস‌্যদের স‌ঙ্গে কথা ব‌লেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস স‌চিব এম এম ইমরুল কা‌য়েস। তি‌নি ব‌লেন, পরিবারে আপনজন চলে গেলে সেই শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারে না, কিন্তু তার অনুপস্থিতিতে একটি পরিবার বসে যায় পথে।  মাধবের পরিবারও সেই পথেই ছিলো। কিন্তু একজন শেখ হাসিনার পদক্ষেপে এখন সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখছেন তারা।  সবাইকে সাথে নিয়ে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গঠনের যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, মাধবের মতো এমন লাখো পরিবারের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নেরও কাজ করছেন তিনি। 

পারভেজ/সাইফ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়