ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

অনলাইন ‘গুজবে’ অস্বস্তিতে বিএনপি  

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ৩০ আগস্ট ২০২৩  
অনলাইন ‘গুজবে’ অস্বস্তিতে বিএনপি  

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাসসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের ‘চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়া’সহ সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সরকার পতনের আন্দোলন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন- এসব কেন্দ্র করে ভবিষ্যতে এরকম গুজব আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন দলটির নেতারা। সোশ্যাল মিডিয়ার মতো খোলা মাধ্যমে এসব গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন। 

বিএনপি নেতাদের দাবি, ‘পরিকল্পিত’ এসব গুজব আটকানোর ক্ষেত্রে দলের কারও কিছু করার নেই। উপরন্তু, এসব গুজব ক্ষমতাসীন দলের তরফ থেকে পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বিএনপির একাধিক নেতার দাবি, ফেসবুকে যেসব আইডি থেকে এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব আইডি যাদের, তারা কোন না কোনভাবে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত।

তাহলে এসব আইডিধারীদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নে বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র নেতা রাইজিংবিডিকে বলেন, যেসব আইডির মাধ্যমে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তাদের পরিচয় জানলেও থানায় অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই। এর আগে, একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনও লাভ হয়নি।

আবার অনেক ক্ষেত্রে গুজব ছড়ানোকারীরা বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের নামে ফেক আইডি তৈরি করেও মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বিএনপির সাইবার টিমের পক্ষ থেকে এসব গুজবের বিপক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে সত্যটা তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দলের পক্ষ থেকে গুজবের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হচ্ছে। যাতে দলীয় নেতাকর্মী থেকে দেশের সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে না পড়েন।

গত ২৭ আগস্ট রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন’ বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুক পোস্টে মির্জা ফখরুল ও তার স্ত্রীর ছবির সঙ্গে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৫০ লাখ টাকার ভুয়া চেকের পাতার ছবি যুক্ত করা হয়। এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পর তা ‘গুজব’ বলে জানায় বিএনপি মিডিয়া সেল। বিএনপির সাইবার সেল থেকে এ চেকের পাতা যে ভুয়া, তার প্রমাণও তুলে ধরা হয়।

চেক ইস্যুতে বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটি আওয়ামী লীগের একটি পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা। চলমান আন্দোলনে সরকার নিপীড়ন-নির্যাতন করে কোনোভাবেই দমন করতে পারছে না। তাই তারা নানা প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। তাদের কাজই গুজব তৈরি করা এবং মানুষের চরিত্র হনন করা’।

এটাকে খুবই সস্তা প্রোপাগান্ডা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা একটা অপশক্তি। তাদের এহেন কাজ নিয়ে বেশি কিছু বলতেও আমার রুচিতে বাঁধছে। দেশের মানুষ আ.লীগের কোনও প্রোপাগান্ডা-ই বিশ্বাস করে না। সরকার পতনে আমাদের এক দফা আন্দোলনকে বিপথগামী, বিভ্রান্ত করতে ও নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে ফেলতে তারা খুব পরিকল্পিতভাবে কাজটি করছে’।

গত সোমবার (২৮ আগস্ট) বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের নামে একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা’ দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ রকম কোনও রূপরেখা শামা ওবায়েদের ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘যখন দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজ করে না, তখন এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দল ও মতকে দমন করার জন্য এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও জনগণ তাদের এসব গুজব বিশ্বাস করে না’।

২৬ আগস্ট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে- সিঙ্গাপুরে রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নিতে গেছেন বিএনপির দুই নারীনেত্রী শামা ওবায়েদ ও রুমিন ফারহানা। সেখানে আগে থেকেই চিকিৎসা নিতে সস্ত্রীক অবস্থান করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সস্ত্রীক মির্জা আব্বাস। যদিও শামা ওবায়েদ ও রুমিন ফারহানা দুজনই সেদিন দেশে অবস্থান করছিলেন।

এসব গুজব প্রসঙ্গে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সরকারের এসব গুজবের জবাব সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ জনগণ দিয়ে দিচ্ছে। বিএনপির সাইবার টিম থেকে যা করার দরকার তা করছি। নির্বাচনের আগে গুজব আরও বাড়বে, এটিই তাদের টার্গেট’।

এ্যানি আরও বলেন, ‘তাদের এসব গুজব ছাড়ানোর উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত, আন্দোলন থেকে জনগণের নজর ভিন্ন দিকে নেওয়া। দ্বিতীয়ত, বিএনপিকে উত্তেজিত করা, যাতে সরকারের ফাঁদে পা দিয়ে কোনও ভুল করে বসে। কিন্তু বিএনপি এখন অনেক সতর্ক। সরকারের কোনও পাতানো ফাঁদে পা দেবে না তারা’।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘জনগণ রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে বিদায় করবে। এ অবস্থায় জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে সরকারের লোকেরা এসব গুজব ছড়াচ্ছে। কিন্তু এতে কোনও লাভ হবে না। জনগণ এ সরকারকে বিদায় করে তবেই ঘরে ফিরবে’। 

জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিতে সরকারের লোকেরা এসব গুজব ছড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন দলটির আরেক সিনিয়র নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এসব নোংরা গুজব ছড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের পদধারী নেতারা। আমরা অভিযোগ করলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদেরও নেই। আমরা বড়জোর আদালতে গিয়ে এসব গুজব ছড়ানোদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারি। জানি, তাতেও লাভ হবে না। সবই সরকারের নিয়ন্ত্রণে!’

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়