ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

আন্দোলন চললেও নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৪ নভেম্বর ২০২৩  
আন্দোলন চললেও নেতৃত্ব সংকটে বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। চলতি বছরের ৯ আগস্ট থেকে নানাবিধ শারীরিক জটিলতা নিয়ে তিনি রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালীন সেদিন দুপুর থেকে বিএনপি-পুলিশ ও আ.লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের কারণে মহাসমাবেশ অসম্পূর্ণ রেখেই শেষ করে দিতে বাধ্য হয় বিএনপি। মহাসমাবেশের দিন সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় পরদিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার গুলশানের বাসা থেকে প্রথমে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সারাদিন পর সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সিএমএম কোর্টে পাঠানো হয়। কোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও গত ১১ দিনে দুই স্থায়ী কমিটির সদস্য, তিন যুগ্ম মহাসচিবসহ অন্তত চার হাজার ৮৪৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। যদিও এর মধ্যে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের মধ্যে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশের বাইরে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ মির্জা আব্বাস ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কারাগারে রয়েছেন। লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ব্রেইনে অস্ত্রোপচারের পর সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এখনও রয়েছেন বিশ্রামে। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থতার কারণে নিয়মিত নন। বাকিদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় রয়েছেন আত্মগোপনে। ড. আবদুল মঈন খান ও বেগম সেলিমা রহমান বর্তমানে বাইরে থাকলেও সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন।

উল্লেখিত নেতাদের বাইরে বর্তমানে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে গ্রেপ্তার এড়াতে দলের অনেক নেতাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন। দলের প্রথম সারির নেতারা জেলে থাকলে দ্বিতীয় সারির নেতারা দলের সার্বিক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেবেন- এমন দলীয় সিদ্ধান্ত থাকলেও বর্তমানে বিএনপিতে চরমভাবে নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।

দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিয়মিত জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি আন্দোলনের সমন্বয়ও করছেন।

মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, সেটিকে আন্দোলনের পথে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতাদের বেশিরভাগ। মহাসমাবেশের দিন ও পরবর্তী সময়ের সহিংসতার ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপানোর চেষ্টা হলেও প্রকৃত ঘটনা বিদেশিদের কাছে ক্রমেই পরিষ্কার হচ্ছে বলেও মনে করেন দলটির নেতারা।

মহাসমাবেশের দিন হামলার ঘটনায় সরকার ও পুলিশকে দায়ী করে গত সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকাস্থ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিএনপির তরফ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্ব আগামীতে বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় বলে বিভিন্ন সময় জানিয়েছে।

এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে বিএনপির অভিযোগ, তাদের বাইরে রেখে আবারও একটি একতরফা নির্বাচনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একতরফাভাবে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে করা হলে সেটিকে দেশের মানুষ যেমন মেনে নেবে না, তেমনি আন্তর্জাতিক বিশ্বও অনুমোদন দেবে না বলে বিশ্বাস দলটির নেতাদের।

বর্তমানে দলের মধ্যে নেতৃত্ব সংকট চলছে কি না- জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলের, ‘নেতৃত্ব সংকটের প্রশ্ন আসছে কেন? নির্বাচনের প্রাক্কালে আমাদের দলের বিভিন্ন কর্মসূচি যেভাবে চলার কথা, সেভাবেই চলবে। মামলা-হামলা-গ্রেপ্তার করে আমাদের থামানো যাবে না। অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারান্তরীণ করেছে। যারা বাইরে আছেন, তারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এখন দলের বেশ কয়েকজন নেতা কারাগারে আছেন। তারপরও সরকারবিরোধী আমাদের কর্মসূচি চলবে। নির্বাচন কমিশন নভেম্বর মাসেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা ও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে। যার কারণে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। সরকার জনগণের দাবি মেনে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপি যুগপৎভাবে বিভিন্ন দল ও জোটকে নিয়ে আন্দোলন শুরু করেছে গত ১২ জুলাই থেকে। সেই থেকে টানা তিন মাস বিএনপি রাজধানীসহ সারা দেশে রোডমার্চ, পদযাত্রা, গণমিছিল, কালো পতাকা মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ, যুব সমাবেশ, বিক্ষোভ, মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

গত ২৮ জুলাই বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ করে পরদিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সবশেষে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। বিএনপির ডাকা সেই মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও দেড় ঘণ্টার মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলায় মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এরপর থেকে একদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের আটক ও গ্রেপ্তার করা শুরু হয়। অন্যদিকে, হরতাল, সর্বাত্মক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে খাকে বিএনপি ও তার মিত্র দল এবং জোটের তরফ থেকে।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়