এবারের নির্বাচনে জিতলেন-হারলেন যেসব নারী 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৯৮ আসনের মধ্যে ২২২টিতে আওয়ামী লীগ, ১১টিতে জাতীয় পার্টি ও ৬২টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ২টিতে অন্য দল জয় পেয়েছে। ১টি আসনের ফল স্থগিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থীদের সরাসরি মনোনয়ন দেওয়ার পরিমাণ বরাবরই কম থাকে। তবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন আগের তুলনায় বেড়েছে। যদিও পুরুষের তুলনায় তা মাত্র ৫ শতাংশ। এবারের নির্বাচনে ১ হাজার ৮৯৫ জন প্রার্থী ছিলেন, তাদের মধ্যে ৯৪ জন ছিলেন নারী।

এবারের নির্বাচনে ২৭টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি দল এবার ৬৮ জন নারীকে মনোনয়ন দিয়েছে। বাকি ২৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এর আগের অর্থাৎ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী প্রার্থী ছিলেন ৬৮ জন।

এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ২৪ জন নারীকে মনোনয়ন দিয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল-৪ আসনের শাম্মী আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করেছেন আদালত। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ১৮ জন নারীকে মনোনয়ন দিয়েছিল দলটি।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ৯৪ জন নারী প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ-৩ (গৌরিপুর) আসনের একটি কেন্দ্রের ফল বাতিল হওয়ায় এ আসনের ফল স্থগিত করা হয়েছে। বেসরকারিভাবে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্যরা হলেন-

শেখ হাসিনা
গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই আসনে মোট কেন্দ্র ১০৮টি। সব কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ আবুল কালাম ৪৬০ ভোট পেয়েছেন।

বেগম মতিয়া চৌধুরী
শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনে মোট ১৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সব কেন্দ্রের ঘোষিত ফল অনুযায়ী, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বেগম মতিয়া চৌধুরী ২ লাখ ২০ হাজার ১৪২ ভোট পেয়ে ষষ্ঠবারের মতো জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ সাঈদ ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৪২ ভোট। এছাড়া, জাসদ প্রার্থী লাল মোহাম্মদ শাজাহান মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৭৬ ভোট।

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি ১ লাখ ৮ হাজার ৬৩৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৩২ ভোট এবং জাতীয় পার্টির নুর আলম মিয়া পেয়েছেন ৯ হাজার ১৬ ভোট।

ডা. দীপু মনি
চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দীপু মনি পেয়েছেন ১ লাখ ৮ হাজার ১৬৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ শামছুল হক ভুঁইয়া ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ১৯৭ ভোট।

অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে ১৩০টি ভোট কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের অ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনা পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৯৬ ভোট।

সিমিন হোসেন রিমি
গাজীপুর-৪ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৮৯ হাজার ৭২৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ঈগল প্রতীকের মো. আলম হোসেন। তিনি পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৪৫ ভোট। 

রুমানা আলী টুসি
গাজীপুর-৩ আসনে নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন রুমানা আলী টুসি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল হোসেন সবুজ। তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৬৭৪।

জয়া সেন গুপ্ত
সুনামগঞ্জ-২ আসনে কাঁচি প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্ত। তিনি পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নৌকা প্রতীকে ৫৮ হাজার ৬৭২ ভোট পেয়েছেন।

ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে বড় ভাইকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭৬ হাজার ৭৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৯৯৮ ভোট।

খাদিজাতুল আনোয়ার সনি
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ৩৭০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ আবু তৈয়ব তরমুজ প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৫৮৭ ভোট।

শাহীন আক্তার
কক্সবাজার-৪ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শাহীন আক্তার ১ লাখ ২৫ হাজার ৭২৫ ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর পেয়েছেন ২৯ হাজার ৯২৯ ভোট।

ড. জান্নাত আরা হেনরী
সিরাজগঞ্জ-২ (সদর-কামারখন্দ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ড. জান্নাত আরা হেনরী ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমিনুল ইসলাম ঝন্টু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৮০ ভোট।

মোসা. তাহমিনা বেগম
মাদারীপুর-৩ আসনে জয়ী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের প্রার্থী মোসা. তাহমিনা বেগম। এ স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছেন ৯৬ হাজার ৬৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ পেয়েছেন ৬১ হাজার ৯৭১ ভোট।

সাহাদারা মান্নান
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহাদারা মান্নান নৌকা প্রতীকে ৫১ হাজার ৫৩২ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাদী আলম লিপি তবলা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৯৪ ভোট।

উম্মে কুলসুম স্মৃতি
গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী) আসনে নৌকার প্রার্থী উম্মে কুলসুম স্মৃতি বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ৫৭ হাজার ১১৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল হক সরকার পেয়েছেন ২৬ হাজার ৩৮২ ভোট।

আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী
হবিগঞ্জ-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ঈগল প্রতীকে ৭৫ হাজার ৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৩০ হাজার ৭০৩ ভোট। 

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লা নাহিদ নিগার
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুই বারের এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল্লা নাহিদ নিগার জয়ী হয়েছেন। ঢেঁকি প্রতীকে নাহিদ নিগার পেয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গল প্রতীকে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৯১ ভোট।

নিলুফার আনজুম পপি (ফল স্থগিত)
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে মোট কেন্দ্র ৯২টি। সেখানে নিলুফার আনজুম পপি নৌকা প্রতীকে ৫৩ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সোমনাথ সাহা ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৫২ হাজার ২১১ ভোট। একটি কেন্দ্রের ফল বাতিল হওয়ায় এ আসনের ফল স্থগিত করা হয়েছে।

অপরদিকে বিভিন্ন কারণে এবারের নির্বাচনে আলোচিত বেশ কয়েকজন নারী প্রার্থীর ভরাডুবি হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন-

মেহের আফরোজ চুমকি
গাজীপুর-৫ আসনে ট্রাক প্রতীকে ৮২ হাজার ৭২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি-জিএস আখতারউজ্জামান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকের বর্তমান এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। তিনি পেয়েছেন ৬৭ হাজার ৭৮৩ ভোট।

মমতাজ বেগম
মানিকগঞ্জ-২ আসনে ভোটের লড়াইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন ওই আসনের বর্তমান এমপি সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের এই প্রার্থী। এ আসনে মোট ১৯৩টি ভোট কেন্দ্রে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী টুলু পেয়েছেন ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মমতাজ বেগম নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট।

শেরীফা কাদের
ঢাকা-১৮ আসনে স্বতন্ত্রী প্রার্থী মো. খসরু চৌধুরীর কাছে হেরে গেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্ত্রী এবং দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেরীফা কাদের। নির্বাচনে কেটলি প্রতীকে খসরু চৌধুরী ৭৯ হাজার ৮৫টি ভোট পেয়েছেন। শেরীফা কাদের ৬ হাজার ৪২৯টি ভোট পেয়েছেন।

অন্তরা সেলিমা হুদা
মুন্সীগঞ্জ-১ (সিরাজদিখান-শ্রীনগর) আসনে সোনালী আঁশ প্রতীকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা ৬ হাজার ৩৩৭ ভোট পেয়েছেন। এ আসনে নৌকা প্রতীকে ৯৫ হাজার ৮৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।

সালমা ইসলাম
ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সালমা ইসলাম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৯৩০টি ভোট। অপরদিকে, নৌকার প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ১ লাখ ৫০ হাজার ৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। 

মাহিয়া মাহি
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি পেয়েছেন মাত্র ৯ হাজার ৯ ভোট। ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী।